Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের বোমা আঁরোয়ায়, জখম দুই

বিজেপির অভিযোগ, এ দিন ভোরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই গ্রামে হামলা চালায়। প্রচুর বোমা ফেলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিজেপির কয়েক জন সমর্থকের বাড়ি।

আতঙ্ক: বিস্ফোরণে ভেঙেছে বাড়ির লোহার দরজা। দুবরাজপুরের আঁরোয়ায়। বুধবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

আতঙ্ক: বিস্ফোরণে ভেঙেছে বাড়ির লোহার দরজা। দুবরাজপুরের আঁরোয়ায়। বুধবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

রাজনৈতিক সংঘাতে বুধবার ভোর থেকে ফের উত্তপ্ত হল দুবরাজপুরের পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েতের আঁরোয়া গ্রাম। অভিযোগ, বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি চলল বোমা, গুলি। বোমার আঘাতে জখম হলেন গ্রামের দুই প্রৌঢ়। যাঁরা এলাকায় বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকারের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার কাশীনাথ মিস্ত্রি ও দুবরাজপুর থানার ওসি। পুলিশ সূত্রে খবর, আহত দু’জনকে প্রথমে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল পরে সিউড়ি স্থানান্তরিত করা হয়।

বিজেপির অভিযোগ, এ দিন ভোরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই গ্রামে হামলা চালায়। প্রচুর বোমা ফেলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিজেপির কয়েক জন সমর্থকের বাড়ি। বাদ যায়নি গ্রামের মন্দির সংলগ্ন কীর্তনের মণ্ডপও। স্থানীয় সুত্রে খবর, এ দিন ভোর ৪টে থেকে টানা এক ঘন্টা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে পড়ুয়ারা। অনেক বাড়িতে এ দিন রান্নাও হয়নি। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের পদুমা অঞ্চল সভাপতি মুকুল মণ্ডলের নেতৃত্বে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে দুষ্কৃতীর এনে ওই গ্রামে আক্রমণ করে তৃণমূল।’’ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে এ কথাই জানিয়েছেন আঁরোয়া গ্রামের এক বিজেপি সমর্থক।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। অভিযোগ পেয়েছি। পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে।’’

দিন চারেক আগে দুবরাজপুরের ওই গ্রামেরই কয়েক জন বাসিন্দাকে রেশন দোকান থেকে জিনিস আনতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। তার মধ্যেই ফের ওই গ্রামে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।

বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, হাজার দেড়েক মানুষ থাকেন আঁরোয়ায়। ওই গ্রামের একটি ভাগের নাম আঁরোয়া নওয়াডাঙাল। এত দিন এলাকায় একতরফা তৃণমূলের কর্তৃত্ব ছিল। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই গ্রামে পিছিয়ে যাওয়ার পর থেকেই এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ শাসকের ‘বিরাগভজন’ হয়েছেন। সেই তালিকায় পাশের গ্রাম বসহরিও রয়েছে। স্থানীয় বিজেপি সমর্থকদের বক্তব্য, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই অশান্ত দুবরাজপুরের পদুমা অঞ্চল। ভোটের পরেও তৃণমূলের সন্ত্রাস থেকে রেহাই পাচ্ছি না। পুলিশের ভূমিকাও সদর্থক নয়।’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘কেউ কেন স্বাধীন ভাবে একটা রাজনৈতিক দল করতে পারবেন না?’’

বুধবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল পুলিশ বাহিনী ছড়িয়ে। বসহরি থেকে আঁরোয়া নওয়াডাঙাল গ্রামে ঢোকার মুখেই তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট কয়েকটি ঘরে। গ্রামের বাসিন্দা রেখা হাজরা, অর্চনা হাজরার বাড়িতে বোমার দাগ। গৌতম হাজরার বাড়িতে এমন ভাবে বোমা ছোড়া হয়েছে, লোহার চাদরের দরজা ভেঙেছে। ফুটো হয়ে গিয়েছে বাড়ির দেওয়াল। অভিযোগ, ভেঙে দেওয়া হয়েছে ডিস অ্যান্টেনা। গৌতমবাবুর স্ত্রী রুমা হাজরা, মা মমতা হাজরা বলছেন, ‘‘কেন বিজেপিকে ভোট দিলাম, ভোটের পরে থেকে তা নিয়ে রাতদিন হুমকি, অশান্তি লেগেই রয়েছে। রাতে ঘুমোতে পারছি না। সব সময় ভয় হচ্ছে, এই বুঝি ওরা এলো।’’ তাঁরা বলেন, ‘‘ভোরে ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতী গ্রামে হামলা চালায়। আমরা প্রাণভয়ে যে যেখানে পেরেছি লুকিয়েছিলাম। ওরা ঘরে ঢুকে হামলা চালায়।’’

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে বিজেপির এক সমর্থক লিখেছেন— ‘দুষ্কৃতীরা গ্রামের এক বধূর শ্লীলতাহানি করে, তিনি চিৎকার শুরু করেন। চিৎকারে শুনে বেরোতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমা ও মারধরে জখম হন গ্রামের দুই প্রৌঢ়।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বসহরি গ্রামেও দু’দিন ধরে দু’পক্ষের বিবাদ চলছিল। সেই কারণে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মোতায়েন ছিল সেখানে। এ দিন ভোরে হামলা হয় আঁরোয়ায়। খবর পেয়েই আঁরোয়ায় পৌঁছয় পুলিশ।

দুবরাজপুরের আরোঁয়া গ্রামে হামলার ঘটনায় যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল, পদুমার সেই তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি মুকুল মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দুবরাজপুরের ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র বলছেন, ‘‘ওখানে আমাদের লোকের উপরেই প্রথমে হামলা চালানো হয়েছিল। তা প্রতিহত করতে গিয়েই দু’পক্ষে ঝামেলা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dubrajpur Bombing TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE