Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঘাসফুল চুনে মুছে সিপিএমকে অফিস ফেরত

লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের পরেই পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বেশ কিছু জায়গায় ‘দখল’ করে রাখা সিপিএমের পার্টি অফিস তাদের ফেরত দিয়েছে তৃণমূল। এ বার বীরভূমেও সেটাই ঘটল। ২০১৭ সালে দখল করে নেওয়া সিপিএমের দলীয় কার্যালয় পুনরায় সিপিএমকে ফিরিয়ে দিল রাজ্যের শাসকদল।

ঘাসফুল প্রতীক মোছার আগে। (ডান দিকে) দেওয়ালে চুনের প্রলেপ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র

ঘাসফুল প্রতীক মোছার আগে। (ডান দিকে) দেওয়ালে চুনের প্রলেপ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:২২
Share: Save:

এত দিন সিপিএমের দলীয় কার্যালয় দখল করে রাখার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। সেই সিপিএমকেই তাদের অফিস ফিরিয়ে দিল তৃণমূল!

লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের পরেই পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বেশ কিছু জায়গায় ‘দখল’ করে রাখা সিপিএমের পার্টি অফিস তাদের ফেরত দিয়েছে তৃণমূল। এ বার বীরভূমেও সেটাই ঘটল। ২০১৭ সালে দখল করে নেওয়া সিপিএমের দলীয় কার্যালয় পুনরায় সিপিএমকে ফিরিয়ে দিল রাজ্যের শাসকদল।

সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুরের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের রজতপুর গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে গ্রামবাসীদের সাহায্যে রজতপুরে সিপিএমের এই কার্যালয়টি তৈরি হয়েছিল। ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কার্যালয়টির উদ্বোধন করেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অরুণ চৌধুরী। এর পর থেকেই দলীয় ও নির্বাচনী কাজে কার্যালয়টি ব্যবহার করতেন সিপিএমের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, ২০১৭ সালে রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে ওই কার্যালয় দখল করেন তৃণমূল কর্মীরা। সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের নাম মুছে ফেলে তৃণমূলের প্রতীক চিহ্ন এঁকে নাম রাখা হয় ‘রজতপুর তৃণমূল কংগ্রেস অফিস’।

এই কার্যালয় থেকেই দলীয় কর্মসূচি ঠিক করতেন তৃণমূল কর্মীরা। লোকসভা নির্বাচনে জেলার অনেক জায়গার মতো রজতপুরেও ফল খারাপ হয়েছে তৃণমূলের। এর পরেই সিপিএমের পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়টি তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই মতো দিন দশেক আগে রজতপুরের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল কর্মীদের এক বৈঠকে পার্টি অফিস ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো দু’দিন আগে তৃণমূলের প্রতীক চিহ্ন ও কার্যালয়ের নাম চুন দিয়ে মুছেও দেওয়া হয়। সোমবার রাতে তৃণমূলের রাইপুর-সুপুর অঞ্চলের সভাপতি সিরাজ মোল্লা, রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের প্রধান নিখিল বাছার-সহ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চাবি তুলে দেন সিপিএমের রজতপুর শাখা সম্পাদক গণেশচন্দ্র রায়ের হাতে। গণেশবাবুর দাবি, ‘‘এ বার ভোটে রজতপুরে আশানুরূপ ফল হয়নি তৃণমূলের। এর পরেই আমরা আমাদের দলীয় কার্যালয় ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করি তৃণমূলকে। সোমবার রাতে কার্যালয়ের চাবি আমাদের হাতে তুলে দেন তৃণমূলের নেতারা। দলীয় কার্যালয় হাতে পেয়ে আমরা খুব খুশি। এই জয় মানুষের জয়, গণতন্ত্রের জয়।’’

লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বোলপুর পুরসভা এবং লাগোয়া রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ এলাকাতেই তৃণমূল বিজেপি-র চেয়ে পিছিয়ে। ফল প্রকাশের ক’দিন পরেই সেনকাপুর গ্রামে তৃণমূলের কার্যালয় কার্যত দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। একই ভাবে রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের কাকুটিয়া গ্রামে নিজেদের হারানো পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করতে দেখা গিয়েছিল সিপিএম কর্মীদের। কিন্তু, রজতপুরে হঠাৎ তৃণমূলই উপযাজক হয়ে সিপিএমকে তাদের অফিস ফেরত দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বিজেপি-কে ঠেকাতেই এমন কৌশল নিয়েছে তৃণমূল? জেলা সিপিএমের এক নেতার মতে, বিরোধী-শূন্য রাজনীতি করতে গিয়ে তৃণমূল এত দিন সিপিএমকে আন্দোলন করা তথা টিকে থাকারই কার্যত কোনও সুযোগ দেয়নি। বহু সিপিএম কর্মী সে সময় বিজেপি-র ছায়া চলে যান। তারই ফলে লোকসভায় বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক পুষ্ট হয়েছে। সেটা বুঝেই তৃণমূল এমন পদক্ষেপ করেছে।

পঞ্চায়েত প্রধান নিখিল বাছার অবশ্য কার্যালয় দখল করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রজতপুরে সিপিএমের পার্টি অফিস যে জায়গায় ছিল, সেটা নিয়ে বিতর্ক চলছিল। তাই ভোটের সময় পার্টি অফিসটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। ভোট পেরিয়ে যাওয়ায় পার্টি অফিসটির চাবি আমরা তাদের হাতে তুলে দিই।’’ সে ক্ষেত্রে ওই অফিসের দেওয়ালে তৃণমূলের প্রতীকচিহ্ন কেন ছিল, কেনই বা চুন দিয়ে তা পরিষ্কার করা হল—এই সব প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

এ প্রসঙ্গে বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দলীয় অফিস খোলার মতো এখন লোক নেই সিপিএমের। আজ তৃণমূল বুঝতে পেরেছে, সিপিএমের কর্মীরা বিজেপিতে চলে এসেছেন। তাই বিজেপিকে আটকাতে দখল করা পার্টি অফিস সিপিএমকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তৃণমূলকে। তৃণমূল নিজে বাঁচার তাগিদে এটা করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Party Office TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE