যানজট: ট্রেন এলে বা গেলে এমনই যানজট হয় জাতীয় সড়কের আবদারপুরে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
জাতীয় সড়কের গতপথ আটকে থাকা দুটি লেভেল ক্রসিং। ট্রেন বা মালগাড়ি এলেই থমকে যায় ট্রাফিক। শুধু তাই নয়, কোনও কারণে ভারী ট্রাক বিকল হয়ে গেলেই রুদ্ধ হয়ে যায় সড়ক এবং রেলপথ। দুর্ভোগ চরমে ওঠে।
পূর্বরেলের অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখায় ভীমগড়ে রয়েছে লেভেল ক্রসিং। আর সিউড়ি স্টেশনের আগে রয়েছে আবদারপুর লেভেল ক্রসিং। রানিগঞ্জ মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে থাকা বীরভূমের ওই দুটি লেভেলক্রসিং-এর
জন্যই সমস্যা হয়। সমস্যা মেটাতেই বছর আড়াই আগে দুটি রোড ওভারব্রিজ তৈরির
অনুমোদন দিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এখনও কাজ শুরু না হওয়ায় দুর্ভোগ লেগেই আছে। দিন কয়েক আগে সিউড়ির আবদারপুর লেভেলক্রসিং ঘেঁষে একটি ট্রাক বিকল হয়ে যাওয়ার প্রেয় দেড় দিন যানজট ছিল। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কবে হবে রোড ওভারব্রিজ?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে যতবার প্যাসেঞ্জার, লোকাল, দূরপাল্লার ট্রেন কিংবা মালগাড়ি পারাপার করে, লেভেল ক্রসিংয়ের দু’দিকে তৈরি হয় যানজট। বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূম, উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে যাওয়ার জন্য প্রচুর যানবাহন রানিগঞ্জ মোড় হয়ে সোজা ভীমগড়ের দিকে আসে। ফলে করুণ অবস্থা হয় আবদারপুর লেভেলক্রিসংয়ে। কেননা, জাতীয় সড়কের যানবাহন আছেই। সঙ্গে রয়েছে বীরভূমের পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে পাথরবোঝাই ডাম্পার, বালিবোঝাই ভারী গাড়ি।
এখানেই শেষ নয়। পানাগড়-মোরগ্রাম ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কটি দুবরাজপুরে এসে জাতীয় সড়কে মিলিত হওয়ায় এই রাস্তায় উপরে প্রবল যানবাহনের চাপ। বারবার লেভেল ক্রসিংয়ে থামতে হয় বলে, সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সেই সমস্যা মেটার ইঙ্গিত মিলেছিল। বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ওই জায়গায় দুটি ওভারব্রিজ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাস কয়েক পরে সিউড়িতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও পিডব্লুউডি-র তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি ইন্দিবর পাণ্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরেও একই আভাস পাওয়া গিয়েছিল। জানা গিয়েছিল, দুটি রোডওভার ব্রিজের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তার পর দু’বছর কেটে গেলেও কেন কাজ শুরু হচ্ছে না, সেটাই প্রশ্ন।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দ্রুত কাজ শুরু হবে। একই বক্তব্য জেলা ভূমি ভূমি সংস্কার দফতরেরও। সড়কের ডিভিশন ১২-এর এগ্জকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ বলছেন, ‘‘রোড ওভারব্রিজ করার জন্য সবচেয়ে যেটা জরুরি, তা হল জমি অধিগ্রহণ। সেই কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেটা শেষ করেই সেতুর কাজে হাত দেওয়া হবে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু
মাজি বলছেন, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করবে, সেই কাজ শেষ হয়েছে। কোন কোন জমিদাতারা ক্ষতিপূরণ পাবেন, কত পাবেন সেটাও এনএইচ জানে। চেক বিলি শুরু হয়েছে।’’
প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভীমগড়ে রোড ওভারব্রিজের জন্য ৯১২ জন জমিদাতার কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করার কথা। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৫ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫৫ হাজার ১৩৭ টাকা। তার মধ্যে ৬০১ জনকে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, সিউড়ির আবদারপুর লেভেলক্রসিং এড়িয়ে আরওবি করার জন্য জমি অধিগৃহীত হওয়ার কথা ৩৫৯ জন জমিদাতার কাছ থেকে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৪ কোটি ৪১ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৬৯ টাকা। ইতিমধ্যেই ২২১ জন ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছেন। বাকি কাজ দ্রুত মিটবে বলে আশায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy