Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভিন্ জেলায় রোজগারে গিয়ে ফিরল ওঁদের দেহ

মুর্শিদাবাদের সালারে নির্মীয়মাণ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যাওয়া পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ও বোরোর তিন দিনমজুর যুবতীর দেহ গ্রামে ফিরল শুক্রবার গভীর রাতে।

বোরোর বড়গোড়া গ্রামের চিন্তামণি টুডুর পরিজনেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বোরোর বড়গোড়া গ্রামের চিন্তামণি টুডুর পরিজনেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
বোরো শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৭
Share: Save:

সংসারে হাসি ফোটাতে ভিন্‌ জেলায় কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা। ফিরে এলেন লাশকাটা ঘর থেকে।

মুর্শিদাবাদের সালারে নির্মীয়মাণ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যাওয়া পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ও বোরোর তিন দিনমজুর যুবতীর দেহ গ্রামে ফিরল শুক্রবার গভীর রাতে। বান্দোয়ানের উদলবনি গ্রামে আসে শেফালি হেমব্রমের দেহ। একই গাড়িতে নিয়ে আসে বোরো থানার বড়গোড়া গ্রামের চিন্তামণি টুডু ও জামিরা গ্রামের সরস্বতী মাহালির দেহ। রাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

বৃষ্টির ঘাটতিতে চাষবাসের কাজ তেমন না হওয়ায় মাস দেড়েক আগে দিনমজুর তিন মহিলা এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে সালারে একটি চালকলে নির্মাণকার্যে গিয়েছিলেন। বুধবার বৃষ্টিতে দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে অবশ্য পুরুলিয়া জেলার কেউ নেই। মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে তিন গ্রামেই শোকের ছায়া নেমে আসে।

তাঁদের দেহ আনতে বৃহস্পতিবার ভোরে তিন পরিবারের লোকজন মুর্শিদাবাদ রওনা দিয়েছিলেন। দেহ ময়না-তদন্তের পরে, চালকল মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন তাঁরা। শুক্রবার বেশি রাতে দেহ নিয়ে তাঁরা গ্রামে ফেরেন। বান্দোয়ান ও বোরো ব্লক প্রশাসনের তরফেরও পরিবারগুলিতে সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

চিন্তামণির আয়ের উপরে সংসার চলত তাঁর বিধবা বৌদি ও দুই ভাইপোর। তাঁর মৃত্যুতে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন গ্রামবাসী।

শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পড়শিরা দাঁড়িয়ে থেকে পারলৌকিক কাজ করাচ্ছেন। তাঁদের অন্যতম অজিতপ্রসাদ টুডু বলেন, ‘‘চিন্তামণির পরিবারে রোজগেরে কেউ নেই। তিনিই অভিভাবক ছিলেন। তাই আমরাই সহযোগিতা করে তাঁর পারলৌকিক কাজকর্ম সারলাম।’’ চিন্তামণির বৌদি সম্বরি টুডু বলেন, ‘‘এ বার আমাদের সংসার কী ভাবে চলবে জানি না। বিধবা ভাতা পেলে হয়তো সংসারটা বেঁচে যাবে।’’

শেফালির মায়ের কাছে এই ক’দিন মৃত্যু সংবাদ চেপে রেখেছিলেন পরিজনেরা। এ দিন শেফালির দাদা আলোক হেমব্রম বলেন, ‘‘আমরা দুঃসংবাদ চেপে গেলেও মা বোধ হয় কিছু আঁচ করেছিলেন। দু’দিন ধরে জল ছাড়া কিছুই খাচ্ছিলেন না। দেহ নিয়ে গাড়ি আসতেই মা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মাকে সামলানো যাচ্ছে না।’’

সরস্বতীর দেহ আনতে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা গোবর্ধন মাহালি। তিনি জানান, প্রথা মেনে শেষকৃত্য করা হয়েছে। চিন্তামণির ভাইপো সুশান্ত টুডুর দাবি, ‘‘সালারের চালকল মালিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই টাকা তিনি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।’’

খবর কানে গিয়েছে প্রশাসনেরও। বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক ও বিডিও (বান্দোয়ান) শুভঙ্কর দাস জানান, সরকারি বিধি মেনে মৃতদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE