Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তারির ‘স্বপ্ন’ দেখতে চান না রাজীব

টেলিভিশনের সামনে একাই বসেছিলেন রাজীব হাজরা। ৪৮৯ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় রাজ্যে সপ্তম হয়েছেন তিনি— মা-বাবাকে ফোন করে সে-ই খবর দিলেন রাজীবই।

জয়তু: বাবার টোটোয় মায়ের পাশে মেধাতালিকায় সপ্তম রাজীব হাজরা। সোমবার বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

জয়তু: বাবার টোটোয় মায়ের পাশে মেধাতালিকায় সপ্তম রাজীব হাজরা। সোমবার বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

বাবা চালান টোটো। মা হাসপাতালের সাফাইকর্মী। অভাব অনেকটাই। সকালেই কাজে বেরিয়ে যান ওই দম্পতি। ছেলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশের দিনেও বদলায়নি সেই রুটিন।

টেলিভিশনের সামনে একাই বসেছিলেন রাজীব হাজরা। ৪৮৯ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় রাজ্যে সপ্তম হয়েছেন তিনি— মা-বাবাকে ফোন করে সে-ই খবর দিলেন রাজীবই। যতক্ষণে কাজ সামলে হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ফিরলেন প্রশান্তবাবু আর কৃষ্ণাদেবী, ততক্ষণে তাঁদের বাড়িতে জমেছে পাড়া-পড়শি, আত্মীয়দের ভিড়। সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি আর ক্যামেরার ছড়াছড়ি। সব কিছু অনেকটা একা হাতে সামলাচ্ছিলেন রাজীবই। সঙ্গে তাঁর বোন। বাবা-মা ফিরতে যেন হাঁফ ছাড়লেন।

বাবা মাধ্যমিক দিতে পারেননি, মা পড়েছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত— এমন পরিবার থেকে রাজীবের এই ফলে খুশি প্রতিবেশীরাও।

ফল শুনে প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রাজীবও। বললেন, ‘‘খুব বেশি হলে ৪৭২ পাব আশা করেছিলাম। এত নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধাতালিকায় জায়গা করে টেলিভিশনে নিজের নাম শুনতে পাব, এটা আশা করিনি।’’

স্নাতকস্তরে রসায়নবিদ্যা নিয়ে পড়তে চান তিনি। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। ভবিষ্যতে কী হতে চান প্রশ্ন করতেই তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুব কষ্ট করে বাবা-মা পড়াশোনা করিয়েছেন। কিছু একটা করে তাঁদের কষ্ট লাঘব করতে চাই। খুব বেশি কোনও চাহিদা নেই। তা ছাড়া সাধ থাকলেও সাধ্য নেই।’’ রাজীবের মা কৃষ্ণাদেবী জানান, প্রতি দিন হাসপাতালে গিয়ে ‘ডাক্তারবাবু’-দের দেখেন। তাঁদের দেখেই ছেলেকে ডাক্তার হিসেবে দেখার ইচ্ছা। কারও তরফে আর্থিক সাহায্য মিললে রাজীবকে ডাক্তারিই পড়াতে চান তিনি।

তবে সেই পড়াতে কত খরচ তা জানেন রাজীব। তাই আপাতত ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন দেখতে নারাজ তিনি। তাঁর বাবা প্রশান্তবাবু জানান, আগে একটা চায়ের দোকান ছিল তাঁর। কিছু দিন হল টোটো চালাচ্ছেন। এক বছর আগে বাড়ি করতে গিয়ে আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। তখনও ছেলে-মেয়েকে কিছু বুঝতে দেননি।

দু’বছর আগে মাধ্যমিকে ৬৩৪ পেয়েছিলেন রাজীব। উচ্চ মাধ্যমিকে আর একটু ভাল ফল করার ইচ্ছা তাঁর ছিলই। জানালেন, দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রথম দিকে ছয়-সাত ঘণ্টা পড়তেন। তবে শেষ তিন মাস ১৪ ঘণ্টা করে পড়েছেন। বিষয়ভিত্তিক টিউশনও পড়তেন। পড়াশোনার বাইরে ক্রিকেট খেলতে ভালবাসেন।

রাজীব জানান, বাবা-মা ছাড়াও এই লড়াইয়ে সব সময় তাঁর সঙ্গে থেকেছেন তাঁর জেঠু এবং স্কুলের শিক্ষকেরা। বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয়কুমার সাধু বললেন, ‘‘২০১৬ সালে স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে স্থান পেয়েছিল ছাত্রেরা। দু’বছর পর রাজ্যে সপ্তম হয়ে স্কুলের মান রেখেছে রাজীব। যে কোনও সাহয্যের জন্য পরিবারের পাশে আছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE