প্রতীকী ছবি।
চিকিৎসকের পরামর্শে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা বধূ। পরীক্ষার অছিলায় তাঁকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়া শহরের একটি প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে! বুধবার ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। এ কথা জানাজানি হওয়ার পরে স্তম্ভিত চিকিৎসক মহল থেকে সাধারণ মানুষ। প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকটির মালিক তথা টেকনিশিয়ান সুদর্শন মাঝিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়।
জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “বধূর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। ধৃত ব্যক্তি জেরায় অপরাধ কবুল করেছেন।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই বধূর শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছে পুলিশ। ক্লিনিকটি সিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা ব্লকের বাসিন্দা ওই বধূ পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বুধবার তিনি স্বামী ও বাবার সঙ্গে শহরের কেন্দুয়াডিহি এলাকার ওই ক্লিনিকে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার ঘরে ওই বধূকে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন সুদর্শন। বধূর অভিযোগ, “আমাকে টেবিলে শুতে বলে ওই ব্যক্তি। হঠাৎই জাপটে ধরে জোর করে ধর্ষণ করে।’’ বধূর চিৎকার শুনতে পেয়ে তাঁর স্বামী ও বাবা ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকেন। বধূকে নিয়ে টোটো ধরে সোজা বাঁকুড়া সদর থানার দিকে রওনা দেন তাঁর স্বামী।
সুদর্শন টোটোর পিছনে ছুটতে ছুটতে বারবার ওই দম্পতির কাছে থানায় না যাওয়ার আবেদন করতে থাকেন। যদিও দম্পতি তা কানে তোলেননি। বাঁকুড়া মহিলা থানায় এসে সমস্ত ঘটনা জানান নির্যাতিত বধূ। মাঝবয়সী সুদর্শনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। অন্তঃসত্ত্বার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পুলিশই তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তবে, নির্যাতনের জেরে ওই বধূর গর্ভস্থ সন্তানের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার তিনি কিছুটা ভাল থাকায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে পুলিশই বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ঘটনার পরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন নির্যাতিতা। তাঁর কথায়, “এমনটা যে হতে পারে, তা ভাবতেও পারিনি। ওই দুরাত্মার চরম শাস্তি চাই!’’
বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “ঘটনার তদন্ত পুলিশ করছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এ ব্যাপারে যা যা করনীয়, তা করব।’’ অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকগুলির উপরে স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারি নিয়েও। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন, নিয়ম অনুসারে কোনও রোগিণীকে চিকিৎসা বা পরীক্ষা করতে গেলে ডাক্তারের ঘরে মহিলা নার্স বা অ্যাটেন্ডেন্ট থাকতেই হবে। যদি কেউ না থাকেন, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে ওই রোগিণীরই কোনও মহিলা আত্মীয়কে ঘরে রেখে পরীক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম যে সব ক্লিনিকে মানা হয় না, তার প্রমাণ দিল কেন্দুয়াডিহির ঘটনাই।
বাঁকুড়ার সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্তের কথায়, “মহিলাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য যিনি ক্লিনিক খুলেছেন, তিনিই এমন গর্হিত কাজ করলেন ভেবে অবাক হচ্ছি। রোগীরা তা হলে কোথায় যাবেন?’’ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানের মন্তব্য, “এক শ্রেণির লোকজনের জন্য গোটা চিকিৎসক মহল কলঙ্কিত হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এই ধরনের ঘটনা রখতে পারে।’’ বাঁকুড়া শহরেরই স্কুলডাঙার এক প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকের কর্ণধার তরুণ ঘোষের কথায়, “রোগীরা অনেক বিশ্বাস নিয়ে আমাদের ক্লিনিকে আসেন। কিন্তু, কেন্দুয়াডিহিতে যা হল, তাকে লজ্জাজনক বললেও কম বলা হবে। এমন ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না।’’
এই ঘটনার পরে কি স্বাস্থ্য দফতর বেসরকারি ক্লিনিকগুলির উপরে নজরদারি বাড়াবে? প্রসুনবাবু বলছেন, “বেসরকারি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। এই ধরনের ঘটনা রুখতে আরও কী কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়ে আমরা
চিন্তাভাবনা চালাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy