Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Survey

বারবার সমীক্ষায় ধরা পড়েছে গলদ

বারবার প্রকল্পের নাম বদলেছে। কিন্তু এখনও জেলার বহু বাসিন্দা শৌচকর্ম সারতে মাঠেঘাটে যান। কেন এই অবস্থা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।বারবার প্রকল্পের নাম বদলেছে। কিন্তু এখনও জেলার বহু বাসিন্দা শৌচকর্ম সারতে মাঠেঘাটে যান। কেন এই অবস্থা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

অসম্পূর্ণ শৌচালয়। বান্দোয়ানের সারগা গ্রামে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

অসম্পূর্ণ শৌচালয়। বান্দোয়ানের সারগা গ্রামে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

এক বার নয়। পর-পর তিন বার শৌচাগারহীন পরিবারের খোঁজে সমীক্ষা হয়েছে পুরুলিয়া জেলায়। প্রতিবারই দেখা গিয়েছে, আগের বারের সমীক্ষায় বাদ থেকে গিয়েছে শৌচাগারহীন বেশ কিছু পরিবার। সে কারণে বারবার বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রা।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, শৌচাগার নেই এমন বেশ কিছু পরিবার কোনও কারণে প্রথম বারের সমীক্ষায় বাদ পড়ে গিয়েছিল। ২০১২ সালের ওই সমীক্ষার বাইরে কত পরিবার রয়ে গিয়েছেন, তা জানতে পরবর্তীকালে ২০১৭-’১৮ সালে ফের এক দফা সমীক্ষা করানো হয়। তাতে জানা যায়, পুরুলিয়ায় তখনও পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৪৩০টি পরিবারে শৌচাগার নেই।

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘দ্বিতীয় সমীক্ষায় উঠে আসা পরিবারগুলিতে শৌচাগার গড়ার কাজ মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় ফের সমীক্ষায় দেখা যায়, আরও ১০ হাজার ২৬টি পরিবার সমীক্ষায় বাদ থেকে গিয়েছিল। তাদেরও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’’

কিন্তু এখনও শৌচাগার পাননি অনেকেই। বান্দোয়ানের কুমড়া পঞ্চায়েতের সারগা গ্রামের পূর্ণচন্দ্র হাঁসদার পরিবারে সাত সদস্য। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক বছর আগে পঞ্চায়েত থেকে শৌচাগার তৈরি করাবে বলেছিল। ওই কাজে আমাকেও হাত লাগাতে হত। কিন্তু তখন শরীর খারাপ থাকায় কিছু দিন পরে কাজটা করব বলে জানিয়েছিলাম। তারপরে আর পঞ্চায়েত থেকে শৌচাগার তৈরি করে দেয়নি।’’

জোটের কুমড়া পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান পদ্মাবতী মুড়া বলেন, ‘‘প্রতিটি সংসদে কয়েকটি করে শৌচাগার তৈরি বাকি রয়েছে। লকডাউন-এর জন্য করা যায়নি। শীঘ্রই সে সব কাজ শুরু করা হবে। বিডিও (বান্দোয়ান) শুভঙ্কর দাস বলেন, ‘‘কারা কারা এখনও শৌচাগার পাননি, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

সম্প্রতি জেলার সমস্ত ব্লকের বিডিওদের নিয়ে এক বৈঠকে অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) এই প্রকল্পের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক অর্থ বরাদ্দ করেছে। এটা জেলার সম্মানের প্রশ্ন। কাজ না করতে পারলে জবাবদিহি করতে হবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম বারের সমীক্ষার ভিত্তিতে যে কাজ শুরু হয়েছিল, তা এখনও পর্যন্ত ১০০ শতাংশ হয়নি। গড়ে ৯৪.০৬ শতাংশ কাজ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের গড় ৫৩.৮৮ শতাংশে পৌঁছেছে। তৃতীয় পর্যায়ের কাজের গড় আটকে রয়েছে ৩৩.০২ শতাংশে।

গতি কম কেন? আকাঙ্ক্ষাদেবী বলেন, ‘‘লকডাউনের কারণে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজের গতি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। কারণ, যে সমস্ত সংস্থা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কাজ করতে পারেননি।’’ কিন্তু চলতি মাসের মধ্যে কি এত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে? আকাঙ্ক্ষাদেবী বলেন, ‘‘সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লে, কাজটা শেষ করা অসম্ভব নয়।’’ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘যেখানে করোনা-সংক্রমণ ছড়িয়েছে বা ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ এবং ‘বাফার জ়োন’ গড়া হচ্ছে, সেখানে দ্রুত শৌচাগার গড়ার জন্য প্রচার চালাব আমরা।’’ তবে জেলার কিছু বিডিও জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে শৌচাগার তৈরির কাঁচামালের জোগানে সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Survey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE