Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Firebreak

নানা জঙ্গলে আগুন, ‘অন্তর্ঘাত’-এর শঙ্কা

মঙ্গলবার সন্ধ্যার মুখে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে আগুন লাগার খবর পেয়ে বন সুরক্ষা কমিটির লোকজন গিয়ে নেভান। কিন্তু সন্ধ্যার পরে আবার আগুন ছড়াতে শুরু করে।

রঘুনাথপুর কলেজের পিছনে। নিজস্ব চিত্র

রঘুনাথপুর কলেজের পিছনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০৮:০২
Share: Save:

বাঁকুড়ার শুশুনিয়া, মুকুটমণিপুর, পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী— আগুন ধরে গেল বিভিন্ন জঙ্গলে। বসন্তের এই সময়টায় দুই জেলার নানা জঙ্গল থেকেই আগুন লাগার খবর মেলে। রাজ্যের বন আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সচরাচর বন দফতর স্থানীয় লোকজনের থেকেই আগুন লাগার খবর পায়। ‘লকডাউন’ চলায় অনেকেই ঘর থেকে বেরোচ্ছেন কম। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই খবর পেতে কিছুটা দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার মুখে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে আগুন লাগার খবর পেয়ে বন সুরক্ষা কমিটির লোকজন গিয়ে নেভান। কিন্তু সন্ধ্যার পরে আবার আগুন ছড়াতে শুরু করে। ভরতপুর, শিউলিবনা গ্রামের দিক থেকে পৌঁছে যায় পাহাড়ের দ্বিতীয় চূড়ায়, রাজা চন্দ্রবর্মার শিলালিপি পর্যন্ত। বন সুরক্ষা কমিটি, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের চেষ্টায় বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই পাহাড়ে বড় জন্তু নেই। তবে আগুন লাগার পরে ভয় পেয়ে প্রচুর বাঁদর নীচে নেমে আসতে শুরু করে। কিছু পাখি ও সরীসৃপ ঝলসে যায় বলেও খবর মিলেছে।

মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর পর্যটনকেন্দ্র সংলগ্ন জঙ্গলেও আগুন লেগেছিল। খাতড়া থেকে একটি ইঞ্জিন গিয়ে নেভায়। ওই দিন সন্ধ্যায় রঘুনাথপুর কলেজের পিছনে পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ের এক প্রান্তে আগুন ধরে। দমকল, বন দফতর এবং স্থানীয় লোকজন নেভান। বুধবার দুপুরে আবার আগুন লাগে কলেজের পিছনের দিকের জঙ্গলেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে এলাকা। প্রচুর পাখি উড়ছে। কলেজের পিছনে প্রায় দু’কিলোমিটার ব্যাসার্ধের পাহাড়ি এলাকায় জনবসতি নেই। তার পরেই রয়েছে যুব আবাস। সেখানে করোনার ‘কোয়রান্টিন’ গড়েছে প্রশাসন। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চেষ্টা করে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।

গত ২ এপ্রিল আগুন লেগেছিল সাঁতুড়ির বড়ন্তির দণ্ডহিত পাহাড়ের জঙ্গলে। দমকল জানাচ্ছে, জয়চণ্ডীতে আগুন নীচ থেকে উপরে উঠছিল। কিন্তু দণ্ডহিতে হয়েছিল উল্টোটা। সে ক্ষেত্রে নেভাতে সমস্যা বেশি হয়। রঘুনাথপুরের রেঞ্জ আধিকারিক বিবেক ওঝা জানান, দণ্ডহিতে প্রচুর হরিণ ও অন্য প্রাণী রয়েছে। তবে পুড়ে কোনও প্রাণীর মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। বিবেকবাবু এ দিন বলেন, ‘‘জয়চণ্ডী পাহাড় বন দফতরের এলাকায় নয়। তাই ওই পাহাড়ে কী ভাবে আগুন লেগেছে, তা বলা সম্ভব নয়। দণ্ডহিতে লোকজন আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।” দমকলের আধিকারিকেরাও তেমন আঁচ করছেন।

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলে আগুন লাগার আশঙ্কা থাকে। রাজ্য বন দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে বৈশাখী পূর্ণিমা না পেরনো পর্যন্ত এই আশঙ্কা থেকেই যায়। এই সময়ে প্রচুর মানুষ জঙ্গলে কাঠ, পাতা কুড়োতে যান। জঙ্গলে ঝরাপাতা, শুকনো ডাল পড়ে থাকে। বিড়ি-সিগারেটের ফুলকি থেকে চট করে আগুন ধরে যেতে পারে। তবে প্রায়ই জঙ্গলে আগুন ধরানোর অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। আগুনে জঙ্গল পুড়ে গেলে তাদের কাঠ পাচারে সুবিধা হয়। বন দফতর জানিয়েছে, ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firebreak Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE