আক্রান্ত: ম্যানেজারকে মারধর। (ইনসেটে) সেই বয়লার। নিজস্ব চিত্র
ধানকলের বিশালাকার বয়লার ছিটকে এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় ওই মিলের মালিকদের এক জনকে গ্রেফতার করল সাঁইথিয়া পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম কাঞ্চন মণ্ডল। শুধু মিল মালিকের এক জনের গ্রেফতার হওয়া নয়। মিলের দূষণ নিয়ে গ্রামবাসীর পুঞ্জীভূত ক্ষোভের শিকার হন মিলের ম্যানেজার। ঘিরে ধরে চলে মার। বৃহস্পতিবার সাঁইথিয়া থানার মাঠপলসা পঞ্চায়েতের মদনপুর গ্রামে পৌঁছলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আধিকারিক গৌরগোপাল মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
ধৃত কাঞ্চনের পরিবারের অবশ্য দাবি, বুধবারের ওই দুর্ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার সকালে কাঞ্চন নিজে পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। তা অবশ্য মানতে চায়নি পুলিশ। বুধবার সকালে ধানকলের বয়লার ছিটকে পাশের উঠোনে পড়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অঞ্জলি মণ্ডলের (৫৫)। গুরুতর জখম হন তাঁর বৌমা বেবি মণ্ডল। তিনি এখনও সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর কোমরে আঘাত রয়েছে। বরাতজোরে রক্ষা পান অঞ্জলিদেবীর স্বামী অমর মণ্ডল, নাতি ননীগোপাল। মদনপুরের ঘটনায় বুধবার দিনভর উত্তেজনা ছিল। এলাকাবাসীর দাবি ছিল, অবিলম্বে ওই এলাকায় থাকা রাইস মিলগুলি বন্ধ করতে হবে। কেননা মিলগুলির জন্য এলাকায় দূষণ লেগেই রয়েছে। মিলের ছাইয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়।
ঘটনাবহুল ছিল বৃহস্পতিবারও। এ দিন সকালে এলাকার লোকজনের নজরে আসে মিলে থাকা তুষে আগুন জ্বলছে। তার পরেই খবর দেওয়া হয় সাঁইথিয়া থানা ও দমকলে। পুলিশ আসে। পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার যখন বয়লারে বিস্ফোরণ হয়েছিল তখন থেকেই তার নীচে থাকা জ্বালানির তুষে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছিল। সেটাই পরে বাড়ে। কিন্তু, এলাকায় জনবসতি থাকায় ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। ওই ঘটনার কিছু পরে মিলের ম্যানেজার উজ্জ্বল মণ্ডল মিলে আসেন। উত্তেজিত জনতাকে দেখে পালাতে গেলে তাঁকে ধরে মারধর শুরু হয়। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে।
দুপুরের দিকে সাঁইথিয়া থানা থেকে ক্রেন এনে বাড়ির মধ্যে পড়ে থাকা বয়লার সরানো হয়। এ দিকে, মিল পর্যবেক্ষণ করতে দুপুরের দিকে এসে পৌঁছন দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আধিকারিক গৌরগোপাল মণ্ডল, বিডিও (সাঁইথিয়া) সোমনাথ দে, বয়লার বিভাগের আধিকারিক ও খাদ্য বিভাগের আধিকারিক সহ প্রায় পনেরো জনের টিম। তাঁরা পৌঁছতেও গ্রামবাসীর একাংশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আধিকারিক গৌরগোপাল মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। প্রায় আধ ঘণ্টা চলে ওই বিক্ষোভ। সাঁইথিয়া পুলিশ এসে সামাল দেয়। গ্রামবাসীর দাবি, তাঁদের অবস্থার কথা বহু বার দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই বিক্ষোভ।
এলাকায় কথা বলে বোঝা গেল, দূষণ নিয়ে এলাকার লোকজনের ক্ষোভ কতটা তীব্র। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল বলেন, ‘‘দূষণ মুক্ত এলাকা তৈরি করার জন্য সরকার সব সময় প্রচার করছে। কিন্তু, আমাদের মদনপুর এলাকা দূষণে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ সবের জন্য দায়ী এলাকায় থাকা একাধিক মিল।’’
পরিস্থিতি এমন যে, বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল। অভিযোগ, স্কুল লাগোয়া মিল থেকে যে পরিমাণ ছাই উড়ে আসে যে পুরো ছাইয়ে ভর্তি হয়ে যায়। স্কুলের রান্নাতেও মিশে যায় ছাই। অসুস্থ হয়ে পড়ছে এলাকার বাচ্চারা। বাড়ছে স্কুলছুটও। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সাগরিকা সাহা বলেন, ‘‘স্কুলে মাত্র দু’জন শিক্ষিকা। মোট ছাত্রছাত্রী ৫৭ জন। তার মধ্যে স্কুলে আসে খুব কম সংখ্যক বাচ্চা। কারণ, স্কুলের দু’পাশেই রয়েছে দুটি মিল। একে রান্নাঘর, অফিস ঠিক নেই। তার মাঝে ছাইয়ের উপদ্রবে আমরা নাজেহাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy