ক্ষতিগ্রস্ত: ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে যাওয়া বাস। ছবি: শুভ্র মিত্র।
মাস ঘোরার আগেই আবার বিষ্ণুপুরে পথ দুর্ঘটনায় পড়ল পর্যটকদের বাস। প্রাণহানি না হলেও আহত হলেন অনেকে। বাসের যাত্রীরা সবাই পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার সবুজ পল্লির বাসিন্দা। শুক্রবার গভীর রাতে বিষ্ণুপুরের মড়ার পঞ্চায়েত অফিসের কাছে খড়িকাশুলি গ্রামে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে পাথর বোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। বাসের সামনের অংশ দুমড়ে যায়।
যাত্রীদের চিৎকারে টহলদারী পুলিশ ভ্যান ঘটনাস্থলে চলে আসে। দু’দফায় আহতদের বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পৌঁছে দেয় পুলিশ। ন’জনকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বছর পঁয়তাল্লিশের প্রদ্যুৎ রায়ের চোট গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়েছে। একটি মামলা রুজু করে ট্রাক চালকের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
বছর শেষে মাইথনে বেড়াতে ৮৩ জন বাসিন্দা শুক্রবার রাতে বেলদা থেকে রওনা দেন। পথে অন্ধকারের মধ্যে কুয়াশায় উল্টো দিক থেকে আসা পাথর বোঝাই ট্রাকটি সামনে চলে আসায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
বাসের এক যাত্রী শুভেন্দু দাস শনিবার বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আহত পরিজনদের দেখাশোনার ফাঁকে বলেন, ‘‘বাসটা খুব জোরে চলেনি। রাত তখন দু’টো হবে। সকলেই আধ ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি আর সেই সঙ্গে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ততক্ষণে যাত্রীরা একে অন্যের উপরে ছিটকে পড়েছি। চার দিকে চিৎকার, কান্না শুরু হয়েছে। কোনও রকমে বাস থেকে রাস্তায় নেমে আসি।’’ তাঁর শিশুর কপাল কেটে গিয়েছে। সেলাই পড়েছে। তাঁর স্ত্রী-সহ ন’জন চোট পেয়েছেন।
খবর পেয়েই বিষ্ণুপুর থানার আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে আসেন। আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়ে অন্য যাত্রীদের কাছেই একটি ধাবায় থাকার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
এ মাসের গোড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি এলাকার একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষামূলক ভ্রমণে অযোধ্যাপাহাড়ে যাচ্ছিল। মড়ার এলাকাতেই তাঁদের বাস দুর্ঘটনায় পড়ে।
বার বার এই এলাকায় কেন দুর্ঘটনা ঘটছে? স্থানীয় মড়ার গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার খান, নুর ইসলাম মণ্ডল, প্রদীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘জাতীয় সড়কের দু’ধারে সার দিয়ে দিন-রাত ট্রাকগুলো এমন দাঁড়িয়ে থাকে যে দিনের বেলাতেই পথ চলতে অসুবিধা হয়। বাঁকের মুখে উল্টো দিকের কিছুই দেখা যায় না। রাতে ওই পথ আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। স্কুলের ছেলেমেয়েরা সাইকেল নিয়ে ওই পথে যাতায়াত করে। কখন কী হয়, তা নিয়ে খুব চিন্তায় থাকি।’’ তাঁরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি দাবি করেছেন।
বিষ্ণুপুর থানা অবশ্য দাবি করেছে, ট্রাক চালকদের মাঝে মধ্যেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে বারণ করা হয়। কিন্তু কুয়াশাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। পর্যটন মরসুমে বিষ্ণুপুর ঢোকার মুখে জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কে টহলদারি ভ্যানের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
শনিবার ভোরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা জুড়ে ভাঙা উইন্ড স্কিনের কাচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেখানেই তল্পিতল্পা গোছগাছ করছিলেন বেলদার বাসিন্দার কৃষ্ণেন্দু মাইতি। তিনি ‘‘যা ফাঁড়া গেল, আর মাইথন গিয়ে লাভ নেই। এখন সবাইকে নিয়ে ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরতে পারলে রক্ষা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy