Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল দিল গোলাপ, বিজেপি পদ্ম

ধামসা মাদলের বোলে গমগম করছে ওয়ার্ডের অলিগলি। আদিবাসী মহিলারা রাস্তায় হাত ধরে নাচতে নাচতে চলেছেন। পয়লা বৈশাখের সকালে হলটা কী? কৌতূহল নিয়ে বাসিন্দারা দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই তাঁদের দিকে হাসি হাসি মুখে গোলাপ ফুল হাতে এগিয়ে গেলেন বাঁকুড়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিরণ চট্টরাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৬
Share: Save:

ধামসা মাদলের বোলে গমগম করছে ওয়ার্ডের অলিগলি। আদিবাসী মহিলারা রাস্তায় হাত ধরে নাচতে নাচতে চলেছেন। পয়লা বৈশাখের সকালে হলটা কী? কৌতূহল নিয়ে বাসিন্দারা দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই তাঁদের দিকে হাসি হাসি মুখে গোলাপ ফুল হাতে এগিয়ে গেলেন বাঁকুড়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিরণ চট্টরাজ।

তিনি যখন আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গোলাপ ফুল বিলোতে বেড়িয়েছেন, তখন তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী আদিত্য মোহন সাহাকে ভোটারদের পদ্ম বিলি করতে দেখা গেল।

বুধবার নববর্ষের সকালে এ ভাবেই জনসংযোগ বাড়াতে দেখা গেল যুযুধান দুই দলের প্রার্থীকে। তাঁদের সৌজন্যে নববর্ষের সকালেই ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে পৌঁছে গেল গোলাপ-পদ্ম। তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে অনেকে রঙ্গব্যঙ্গ করতে ছাড়লেন না। পাড়ার একটি চা দোকানে স্থানীয় বাসিন্দা দীপক দত্ত বলেই ফেললেন, “দেখলেন দুই প্রার্থী ওয়ার্ড সুদ্ধ লোককে ফুল বিলিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। কিন্তু একে অপরের মুখও দেখলেন না। ফুল বিনিময় করা তো দূরের ব্যাপার। ভোট বড় বালাই দাদা!”

নববর্ষ দিনটাকে বিভিন্ন দলের পুরভোটের প্রার্থীরা ভোটে জেতার জন্য নানা ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন। বাঁকুড়া পুরসভারই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শান্তি সিংহ পয়লা বৈশাখের সাত সকালে অনুগামীদের নিয়ে পুজো করাতে গিয়েছিলেন এলাকার পাষাণকালী মন্দিরে। মন্দিরটি সদ্য তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিদায়ী কাউন্সিলর রেখা দাস রজকের পরিবারের। রেখাদেবী এ বার নির্দল হয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তিবাবুর বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছেন। সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর হচ্ছে দু’জনের। শান্তিবাবু রেখাদেবীর পরিবারের মন্দিরে পুজো করাতে গেলেও রেখাদেবী বা তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। অথচ এই শান্তিবাবুই একবার পুরভোটে রেখাদেবীকে ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে পরিচয় করাতে গিয়ে নিজের ‘বোন’ বলে দাবি করেছিলেন। শান্তিবাবু বলেন, “নববর্ষে এলাকাবাসীর মঙ্গল কামনায় পুজো দিলাম। ভগবান আমার সাথে আছেন।”

শান্তিবাবু পুজো দিয়ে বেরিয়ে আসার পরেই মন্দিরে পুজো করান রেখাদেবী। তিনি বলেন, “আমার বাড়ির ঠাকুর। কোনও বিশেষ দিনে নয়, রোজই আমি পুজো দিই। তাই ঠাকুরের আশীর্বাদ আমার উপরে সব সময় বর্ষায়।” শান্তিবাবুর সঙ্গে কোনও কথা হল? রেখাদেবীর উত্তর, “কথা বলা তো দুরের কথা। আমার পরিবারে অনেক ভোট রয়েছে। একবারও ভোট চাইতেও আসেননি উনি।” পয়লা বৈশাখে এক দেবীর কাছে দু’জনে মাথা ঝোঁকালেও দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান যে ভোটের উত্তাপ বাড়ার মতোই বেড়ে গিয়েছে তা বেশ বোঝা যায়। পাড়ার এক প্রবীন বাসিন্দার কথায়, “আগে সিপিএম কংগ্রেসের বিবাদ দেখেছি, পরে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের বিবাদও দেখলাম। এখন দেখছি তৃণমূলের সঙ্গেই তৃণমূলের বিবাদ!”

অন্যদিকে সোনামুখী পুরসভায় পয়লা বৈশাখের প্রচারে ঝড় তুলল সিপিএম। এখানের ১৫টি ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীরাই নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা জানাতে ‘গ্রিটিংস কার্ড’ বানিয়ে এলাকার ভোটারদের ঘরে ঘরে দিয়ে এলেন। অনেক বাম প্রার্থীদের আবার গ্রিটিংস কার্ডে ছবিও ছাপা হয়েছে। সকাল থেকেই কার্ড বিলি করতে পাড়ায় পাড়ায় অনুগামীদের নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায় সিপিএম প্রর্থীদের। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষকে শুভেচ্ছাও জানানো হল, ভোটের প্রচারও হল। দারুন সাড়া পেয়েছি কার্ড বিলি করে।”

বামফ্রন্টের হাত থেকে এই পুরসভা এ বার ছিনিয়ে আনতে মরিয়া তৃণমূল। কুশলবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য কার্ড বিলি করতে যাননি। তিনি এ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মৌখিক ভাবে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অনেকেই তাঁর মাথায় হাত রেখে আশির্বাদ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁদের ওই আশির্বাদই আমাকে বছরের প্রথম দিনে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। আমি প্রচারে চমকে বিশ্বাসী নই। সারা বছর মানুষকে নিয়ে কাজ করি।’’

বাঁকুড়া ও সোনামুখী পুরসভার তুলনায় পয়লা বৈশাখের প্রচারে কিছুটা সাদামাটাই দেখাল বিষ্ণুপুর। কারণ চৈত্র সংক্রান্তিতে ষাড়েশ্বরের গাজনে মেতে থাকেন বিষ্ণুপুরবাসী। পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যা নাগাদ গাজনের সন্ন্যাসীরা বাড়ি ফিরে আসেন। এ ছাড়া গাজন দেখতেও বহু মানুষ সেখানে যান। তাই এ দিনটা সকালের দিকে শহর অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা থাকে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রবিলোচন দে নিজে ষাড়েশ্বরের গাজনে ভোক্তা হয়েছেন। তিনি বলেন, “গাজনতলায় বহু মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো যায়। নববর্ষের প্রথম দিনে বাড়ি ফিরতেই সন্ধ্যে পার হয়ে যায়। তাই এই দিনটা আমরা সে ভাবে প্রচারের কাজে লাগাতে পারি না।”

যদিও রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বছরভর উন্নয়নের কাজ করে গিয়েছি। সেই উন্নয়নই আমাদের হয়ে প্রচার করছে। আলাদা করে রাস্তায় নামার দরকার কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE