তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফ্রিজ। নিজস্ব িচত্র
গ্রাহকদের ঠকিয়ে বাসি মাংস বিক্রির রমরমা কি তাহলে বাঁকুড়া শহরের কিছু এলাকাতেও চলছে? শুক্রবার বাঁকুড়া পুরসভার অভিযানে শহরের কয়েকটি দোকানের ফ্রিজ থেকে বাসি মাংস উদ্ধার সেই প্রশ্নই উস্কে দিল। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের কানকাটা এলাকার রাস্তার পাশে অবৈধ ভাবে গজিয়ে ওঠা পাঁচটি মাংসের দোকানের ভিতর থেকে পচন ধরে যাওয়া মাংস উদ্ধার হয়েছে। দোকানে ফ্রিজের মধ্যেই মাংসগুলি রাখা ছিল। এ ছাড়া, প্লাস্টিকে মোড়া কিছু মাংস পুকুরে ডোবানো ছিল। তাও উদ্ধার করা হয়। পুরসভার তরফে ওই ফ্রিজ ও মাংস আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান দিলীপ অগ্রবালের নেতৃত্বে পুলিশ ও পুরসভার কয়েকজন আধিকারিক শহরের কয়েকটি মাংসের দোকানে অভিযান চালান। কানকাটা এলাকার একটি দোকানে ঢুকে তাঁরা দেখেন ফ্রিজের মধ্যে মাংস রয়েছে। দিলীপবাবুর দাবি, “ওই মাংস থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। আমাদের দেখেই দোকানের মালিকেরা চম্পট দেন।’’ তিনি জানান, ওই এলাকার মোট পাঁচটি দোকান থেকে তাঁরা ফ্রিজ ও প্রায় তিন কুইন্টাল মাংস আটক করে আনেন। যার মধ্যে দেড় কুইন্টাল মাংসে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। অভিযানে থাকা পুরসভার এক কর্মী জানান, ঠান্ডায় জমাট বাঁধা মাংস গরম করার জন্য প্লাস্টিকে মুড়ে পুকুরে ফেলা হতো। সেই রকম একটি মাংসের প্যাকেট পুকুর থেকে তোলা হয়।
দিলীপবাবু বলেন, ‘‘সমস্ত মাংস পরে কেশড়া এলাকায় মাটির তলায় পুঁতে ফেলা হয়। পরে ওই দোকানের মালিকেরা থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে আটক করা ফ্রিজগুলি ছাড়িয়ে নিয়ে যান।’’ যদিও ওই বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, তাঁরা পচা মাংস বিক্রি করেন না।
বস্তুত, কলকাতায় বিভিন্ন রেস্তরাঁয় ভাগাড়-কাণ্ড নিয়ে অভিযানকে ঘিরে গোটা রাজ্য তোলপাড় হচ্ছে। বাঁকুড়ায় ভাগাড়ের না হলেও পচা মাংস উদ্ধার হওয়ায় তাই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শহরের মাংস বিক্রেতাদের একাংশের আক্ষেপ, কলকাতা ও কয়েকটি জেলার পচা মাংস উদ্ধারের ঘটনায় এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহে মাংস বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার উপরে ক্রেতাদের নানা খোঁচাও শুনতে হচ্ছে। আর এ দিন কানকাটার ঘটনার পরে জানি না আর কেউ মাংস কিনতে আসবে কি না।’’
ভাগাড়-কাণ্ড সামনে আসার পরে কলকাতা-সহ শহরতলির বিভিন্ন রেস্তরাঁয় নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও বাঁকুড়া শহরে এই ধরনের উদ্যোগ হয়নি। এত দিন পরে বাঁকুড়া পুরসভা সেই পদক্ষেপ করায় কিছুটা হলে স্বস্তি পেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু, অভিযানের উদ্ধার করা মাংস পচা বললেও কেন পুরসভা তা পরীক্ষা করাতে পাঠাল না এবং অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
ঘটনা হল, জেলার রেস্তরাঁ-সহ বিভিন্ন দোকানের খাবারের গুণগত মান পরীক্ষা করার জন্য জেলায় এক জন করে ‘ফুড সেফটি অফিসার’ থাকার কথা। ওই অফিসার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরে খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, বাঁকুড়া জেলায় স্থায়ী ভাবে কোনও ফুড সেফটি অফিসারই নেই। পুরুলিয়ার এক আধিকারিক অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে বাঁকুড়ার ওই পদ সামলান। সপ্তাহে একদিন করে ওই আধিকারিক জেলায় আসেন বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে সঠিক ভাবে নজরদারি যে চালানো যাচ্ছে না, তা কার্যত মেনেই নিচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনেকেই। এ ছাড়া মাংসের গুণগত মান পরীক্ষা করারও ব্যবস্থা নেই জেলায়। এ ক্ষেত্রে কলকাতার পরীক্ষাগারে মাংস পাঠাতে হয়।
দিলীপবাবু বলেন, “জেলায় মাংসের গুণগত মান পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না থাকার জন্যই বাধ্য হয়ে দুর্গন্ধ বের হওয়া মাংস মাটিতে পুঁতে দিতে হল আমাদের।” তিনি জানান, অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের কারও কাছেই মাংসের দোকান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পুরসভার ছাড়পত্র ছিল না। ওই ব্যবসায়ীদের ছাড়পত্র নিয়ে বৈধ ভাবে কেন্দ্রীয় বাজারে ব্যবসা করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বাঁকুড়া শহরে খাদ্যের গুণগত মান যাচাই করতে প্রশাসন অভিযান চালাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। তিনি বলেন, “শহর জুড়ে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁ ও মাংসের দোকানে খাদ্যের গুণগত মান জানতে আমরা অভিযান চালাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy