Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গুজবের জেরে আতঙ্ক ছাত্রীদের

পরিস্থিতি সামলাতে সোমবার স্কুলে সচেতনতা শিবির করল প্রশাসন। এ দিন স্কুলে আসেন বিডিও (কোতুলপুর) গৌতম বাগ, কোতুলপুর থানার পুলিশ আধিকারিক, মির্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নমিতা পাল। ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যেরাও।

আতঙ্ক: কোতুলপুরের স্কুলে সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

আতঙ্ক: কোতুলপুরের স্কুলে সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোতুলপুর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

স্রেফ অন্ধবিশ্বাস আর গুজবের চোটে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। গুজব ছড়িয়েছে, ‘ভূত’ আছে স্কুলের শৌচাগারে। সেই গুজবে ঘি ঢেলেছে এলাকার এক ওঝা। তাতেই কার্যত হিস্টিরিয়ার দশা স্কুলের ছাত্রীদের।

পরিস্থিতি সামলাতে সোমবার স্কুলে সচেতনতা শিবির করল প্রশাসন। এ দিন স্কুলে আসেন বিডিও (কোতুলপুর) গৌতম বাগ, কোতুলপুর থানার পুলিশ আধিকারিক, মির্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নমিতা পাল। ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যেরাও। মাইক হাতে নিয়ে বিডিও ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমার লজ্জা লাগছে, এমন একট বিষয় নিয়ে শিবির করতে। যখন মেয়েরা চাঁদে যাচ্ছে, ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়ছে। কারও কথা কানে শুনে নয়, বিজ্ঞান ও যুক্তি এবং নিজেদের শিক্ষা দিয়ে বিষয়টিকে বোঝো। তা হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।’’

এ দিন সকালে মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল জোরকদমে ওই শৌচাগার পরিষ্কারের কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহানন্দ কুণ্ডু জানান, এই স্কুলে ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে সংখ্যা প্রায় ৮০০। আশপাশের রায়বাঘিনি, হন্নে, ঝোড়ো মুরাহাট, হাজরাপুকুর, জলজলা, হরিহরচাকা, দেহয়ুাবনি গ্রামের গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়ে। অনেকেই সকালে মুড়ি খেয়ে দুপুরে মিড-ডে মিল খায়। স্কুলে এমনিতেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ কিছু ছাত্রী আছে, যাদের নিয়মিত বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।

মহানন্দবাবু বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীদেরই কয়েক জন শৌচাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তা দেখে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে আরও পড়ুয়াদের মধ্যে। পুরোটার পিছনেই রয়েছে ভুল ধারণা।’’

তিনি জানান, সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে বাসুদেবপুরের এক ওঝা। এক ছাত্রীকে ঝাড়ফুঁক করে সেই ওঝা বলে দেয়, মেয়েটিকে ভূতে ধরেছিল। তাতেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় স্কুলের মেয়েদের শৌচাগার সারানো বা রং করার দাবি তুলেছেন পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা।

মেয়েদের শৌচাগারে গিয়ে কিছু ছাত্রী কেন অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তা জানতে এসেছিলেন কোতুলপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক পলাশ দাস এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পৃথা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের সামনেই এ দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী।

পরে ওই দু’জনই বললেন, ‘‘বেশির ভাগ মেয়েই খালি পেটে বা সামান্য খেয়ে থাকে। ফলে তাদের শরীর এমনিতেই কমজোর। অসুস্থ হওয়ার মূল কারণ ওই শারীরিক দুর্বলতাই। তবে, কাউকে ভর্তি করতে হয়নি।’’ তাঁদের মতে, একটা ‘প্যানিক’ থেকে এই কাণ্ড ঘটছে।

এ দিন স্কুলে আসা বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য রামকৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, ‘‘কুসংস্কার আর গুজব কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, এই স্কুলের বর্তমান অবস্থাটাই তা বলে দিচ্ছে। আমরা হাতে কলমে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শিশু মন থেকে আতঙ্ক কাটানোর চেষ্টা করেছি। দেখা যাক, কতটা কাজে লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Bankura কোতুলপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE