Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছুটি ভুলে স্বেচ্ছায় পাঠদান সাঁইথিয়ায়

ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। বাড়িতে তাদের পড়াশোনায় সাহায্য করা দূরের কথা, সময় মতো পড়াশোনা করছে কিনা তা দেখার মতোও কেউ নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৫
Share: Save:

ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। বাড়িতে তাদের পড়াশোনায় সাহায্য করা দূরের কথা, সময় মতো পড়াশোনা করছে কিনা তা দেখার মতোও কেউ নেই। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর বাবা-মা পেটের তাগিদে বিভিন্ন কাজে বেরিয়ে যান। ফিরতে তাদের সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। তাই পুজোর লম্বা ছুটিতে অনভ্যাসের কারণে ওইসব ছাত্রছাত্রীরা ক্রমাগত পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে থাকে। পড়া না হওয়ায় কেউ আবার স্কুলেও যায় না। তাই স্কুল ছুটির সময় পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাপাঠদান কেন্দ্র চালু করেছেন সাঁইথিয়ার পারিসর প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই পাঠদান কেন্দ্র চালু রাখতে বিভিন্ন পেশার মানুষজনও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকার ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৩ জন। গ্রামে ঘুটিংডাঙ্গাল, বেলেডাঙ্গাল এবং উঠোনডোলা নামে আদিবাসী অধ্যুষিত তিনটি পাড়া রয়েছে। পড়ুয়াদের বেশিরভাগ ওই তিনটি পাড়ায় থাকে। তিনটি পাড়ায় সব মিলিয়ে ৭৭ টি পরিবারের বাস। তার মধ্যে ৭৪ টি পরিবারের ছেলেমেয়েই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাদের অধিকাংশের বাবা-মা ইটভাঁটা, বালির ঘাটের মতো বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। সকালে বেরিয়ে বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যায়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করার মতো সময় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের নেই। নেই টিউশানি পড়ানোর মতো আর্থিক সামর্থ্যও। ওইসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা মূলত স্কুল নির্ভর। কিন্তু স্কুলে একটানা বেশিদিন ছুটি থাকলে অনভ্যাসের কারণে ওইসব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পড়তে স্কুলছুট হয়ে যায়।

তাই সেই প্রবণতা রুখতেই ছুটির সময় পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাপাঠদান শুরু করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুরুটা হয়েছিল গত জুন মাসে, যখন অত্যধিক গরমের জন্য অতিরিক্ত ১০ দিন ছুটি ঘোষিত হয়েছিল সেই সময়। তখন মূলত স্কুলের সহকারি শিক্ষক বাসুদেব সূত্রধরের প্রচেষ্টায় স্বেচ্ছাপাঠদান শুরু হয়। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। তাঁরই প্রচেষ্টায় স্থানীয় পারিসর আদিবাসীপাড়া এবং রোঙ্গাইপুর কোঁড়াপাড়ায় পালাক্রমে চলছে স্বেচ্ছাপাঠদান।

পাঠদান শুরু হয়েছে ২৩ অক্টোবর, চলবে স্কুল খোলার আগের দিন পর্যন্ত। ওই স্বেচ্ছাপাঠদানের কথা শুনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছায় পাঠদান করেছেন আদালত কর্মী অলক মন্ডল, হাইকোর্টের আইনজীবী অনিন্দ্য সিংহ , বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা উজ্বল মুখোপাধ্যায়, পিয়ালী মুখোপাধ্যায়, সুনীল সোরেন, সমাজকর্মী রবীন টুডু প্রমুখ। তাঁরা জানান, এইরকম একটি উদ্যোগের কথা শুনে সাড়া না দিয়ে পারিনি।

চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রাজু বেসরা, সরস্বতী মাড্ডিরা জানায়, বাড়িতে সাহায্য করার কেউ না থাকায় এর আগে ছুটিতে তাদের পড়াশোনা হত না। স্কুল খুললে পড়া দিতে পারতাম না। এবারে আর সেই সমস্যা হবে না। ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক পবন সোরেন, সুখী হাঁসদারা জানান, স্বেচ্ছাপাঠদান শুরু হওয়ায় আমরাও নিশ্চিন্ত হয়েছি। এর আগে তো কেউ ছেলেমেয়েদের কথা এমন করে ভাবে নি।

বাসুদেববাবু জানিয়েছেন, অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি পাঠাভ্যাস না থাকলে ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়া দিতে পারে না। তাদের ভয় হয়। স্কুল কামাইয়ের প্রবণতা দেখা দেয়। ধারাবাহিক ওই প্রবণতার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলছুট হয়ে যায়। সেই প্রবণতা রুখতেই এই উদ্যোগ। অন্যান্যদেরও এই উদ্যোগে সামিল করতে পেরে ভাল লাগছে।

সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, অনুকরণযোগ্য উদ্যোগ। বাসুদেব একজন ছাত্রদরদী শিক্ষক। স্কুলছুট রুখতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রশংসনীয় ভুমিকা পালন করে চলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sainthia Education সাঁইথিয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE