Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া থাকলে বালি তোলা নিষেধ জেলায়

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নদীবক্ষ থেকে ইচ্ছামত বালি তোলায় ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দিনেদুপুরে: ব্রহ্মাণী নদী থেকে এ ভাবেই তোলা হয় বালি। শনিবার বৈধরা ব্যারাজ থেকে তোলা ছবি। নিজস্ব চিত্র

দিনেদুপুরে: ব্রহ্মাণী নদী থেকে এ ভাবেই তোলা হয় বালি। শনিবার বৈধরা ব্যারাজ থেকে তোলা ছবি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

বকেয়া টাকা না মেটালে নির্দিষ্ট ‘স্যান্ড ব্লক’ থেকে বালি তোলা যাবে না— পুরো টাকা মেটাননি এমন ৮৩ জন লিজপ্রাপ্তকে ডেকে এমনই বার্তা দিলেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু।

গত বৃহস্পতিবার সিউড়ি প্রশাসনিক ভবনে লিজপ্রাপ্তদের ডাকা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি। তিনি জানান, বকেয়া টাকা না মেটানো পর্যন্ত ওই লিজপ্রাপ্তরা ‘স্যান্ড ব্লক’ থেকে বালি তুলছেন কিনা তা নজরে রাখা হবে। তাঁদের আরও জানানো হয়েছে, টাকা মেটাতে না পারলে লিজ বাতিল করে ফের হাঁক হবে সংশ্লিষ্ট বালিঘাটের।

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নদীবক্ষ থেকে ইচ্ছামত বালি তোলায় ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বর্তমানে বালি তুলতে হলে সরকারি ই-অকশন প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে হয় ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। সর্বোচ্চ দর দিয়েই বালি ঘাট (স্যান্ড ব্লক) পেতে পারেন সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট ঘাটটি (নদীর নামের সঙ্গে মৌজা ও দাগ নম্বর-সহ নানা তথ্য উল্লেখ থাকে) যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পেলেন, তাঁকে বা সেই প্রতিষ্ঠানকে ‘অ্যাওয়ার্ড অফ কনট্রাক্ট’ দেওয়া হয়।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাওয়ার্ড অফ কনট্রাক্ট (এওআই) পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই নির্ধারিত অঙ্কের এক তৃতীয়াংশ টাকা প্রশাসনের কাছে জমা করতে হয়। টাকা জমা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রশাসনের তরফে ‘লেটার ওফ ইনডেন’ (এলওআই) দেওয়া হয় লিজপ্রাপ্তকে। এর পরে ‘মাইনিং প্ল্যান’ তৈরি করে পরিবেশ ছাড়পত্রের (ইসি) জন্য আবেদন করতে হয়। ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই লিজপ্রাপ্তের সঙ্গে সরকারের (লং টার্ম মাইনিং লিজ) চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে লিজপ্রাপ্তেরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন করেন। অবেদন গ্রাহ্য হলে যে পরিমাণ বালি তিনি উত্তোলন করবেন, সেই হারে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করলে চালান মেলে।

প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, যে দিন ‘লেটার ওফ ইনডেন’ (এলওআই) দেওয়া হয়েছে, সেই দিন থেকে বাকি দুই তৃতীয়াংশ টাকা ৪৫ দিনের ব্যবধানে তিনটি কিস্তিতে মিটিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই কিস্তির টাকাই বকেয়া রয়েছে অনেকের। কেউ প্রথম কিস্তির পরে আর টাকা দেননি।

অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন নদীর মোট ২০৩টি স্যান্ড ব্লকের নিলাম হয়েছিল। তার মধ্যে ১৮৩টি কার্যকর হয়েছে। পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে ১৭৭টি। তার পরে ১১৬ জনকে লং টার্ম মাইনিং লিজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া। সেই বকেয়া টাকা মেটানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন।

জেলা বালি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আরিন্দম সেন বলছেন, ‘‘বকেয়া টাকা প্রশাসন চাইবেই। আমরাও সেটা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে জেলা প্রশাসন কম সময় দিচ্ছে। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ টাকা জমা দেওয়ার জন্য লেটার ওফ ইনডেন (এলওআই) দেওয়ার দিন থেকেই সময় ধরা হচ্ছে। কিন্তু চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার দিন থেকেই সেটা হওয়া উচিত।’’ অরিন্দম বাবুর সংযোজন, ‘‘এ ছাড়াও বেশ কিছু সমস্যার জন্য কেউ কেউ কিস্তির টাকা দিতে পারেননি। যেমন যে ঘাট থেকে বালি বহন করা হবে, সেখানে স্থানীয় মানুষের বাধা। রাস্তার সমস্যা। কোথাও এমনও হয়েছে, বালি ঘাটের লিজ নিয়েছেন অথচ সেখানে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বালিই নেই। সেই দিকগুলো বিবেচনার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।’’

প্রশাসন অবশ্য সে সব কথা মানতে নারাজ। কর্তাদের বক্তব্য— ‘সব খতিয়ে দেখেই হাঁকে অংশ নিয়ে এখন কেউ যদি বলেন বালি নেই, সেটা শোনা হবে না। দুই, আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা দেখা হবে ঠিকই। কিন্তু কোন রাস্তায় বালি নিয়ে যাবেন সেটা লিজপ্রাপ্তকেই ঠিক করতে হবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

সিউড়ি Suri Sand Digging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE