জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে যোগব্যায়াম। —নিজস্ব চিত্র।
ইউনেসকো এবং হু-র সমীক্ষা বলছে, একটি পাঁচ বছর থেকে ১৬ বছরের ছেলে বা মেয়ে অন্তত দু’ঘন্টা শারীরিক শ্রম বা খেলাধূলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গাটাই সবচেয়ে অবহেলিত। তারই কু-প্রভাব পড়ছে খুদেদের উপর। জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে তাই এ বার রিক্রিয়েশনাল স্পোর্টসের সঙ্গে স্কুলে স্কুলে যোগ ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা প্রাথমিক সংসদ। বুধবার সিউড়িতে জেলা প্রাথমিক সংসদের অডিটোরিয়ামে একটি যোগ শিবিরে ৩২টি সার্কেলের ১৬০ জন শিক্ষক- শিক্ষিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল।
পুলকারে চেপে স্কুলে যাতায়াত, খাদ্যতালিকায় যথেচ্ছ ফাস্ট ফুড। কম্পিউটারে বা স্মার্ট ফোনের গেমেই সীমিত খেলাধূলা। নতুন প্রজন্মের স্কুল পড়ুয়াদের এমন ধারার দিনপঞ্জি-ই জন্ম দিচ্ছে ওবেসিটি, ব্লাড সুগার-সহ নানা রোগের। বিপদ আরও বাড়িয়েছে স্কুল ব্যাগের বিশাল ওজন। বেঁকে যাচ্ছে পিঠ। সংসদ জানাচ্ছে, বিপদ এড়াতেই এই যোগ-চর্চা। এ দিন কেন যোগ শেখা প্রয়োজনীয় তা শেখালেন বিশ্বভারতীর ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গী ছিলেন তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরাও।
‘জয়ফুল লার্নিং’— এই ধারণাকে সামনে রেখে কী ভাবে একজন প্রাথমিক পড়ুয়ার পড়াশোনার মানোন্নয়ন করা যায় সেই চেষ্টা গত কয়েকমাস আগে থেকে শুরু করছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ জানালেন, এর আগে আদর্শ পাঠাদানের উপায়, শিশু মনস্তত্বঃ, শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের মত বিনিময়, প্রাথমিক শিক্ষায় রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দের প্রসঙ্গিকতা, প্রাথমিক স্কুল গুলি থেকে প্রশাসনিক অধিকর্তাদের চাওয়া এবং পরামর্শ কী— এমন নানা বিষয়ে শিবির হয়েছে।
প্রত্যেকবারই জেলার মোট ৩২ চক্রে থেকে পাঁচজন করে শিক্ষক শিক্ষিকাকে শিবিরে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনজন শিক্ষকের সঙ্গে দু’জন শিক্ষিকা এই অনুপাতে এ দিনের দিনের শিবিরেও যোগ দিলেন। বিষয় ছিল ‘ইম্পোটর্টেন্স অফ রিক্রিয়েশনাল স্পোর্টসে অ্যাণ্ড যোগা’। হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ?
সংসদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেলাধুলা না করলে একজন পড়ুয়ার সঠিক মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে সেটারই সবচয়ে বড় অভাব বা অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ভাবে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে থেকেই খেলাধূলার অভাব নতুন প্রযন্মকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে মানসিক অবসাদ সহ নানা অসুবিধায় পড়ছে শিশুরা। শিশুদের মধ্যে যদি যোগ ব্যায়াম অভ্যাস গড়ে তোলা যায় এবং উপকারিতা বোঝানো যায় তাহলে সমস্যা অনেকাংশে দূর হতে পারে বলে মনে করছে সংসদ।
কোন কোন আসন বা যোগ ব্যায়াম শিশুদের জন্য আদর্শ কেমন করে আসন করাবেন. কী কী উপকার আসনে সব খুঁটি নাটি দিক তুলে ধরছিলেন বিশ্বভারতীর ওই যোগ শিক্ষক।
শিবিরে যোগ দিয়ে খুশি শিক্ষক শিক্ষিকারা।
রামপুরহাট দক্ষিণচক্রের বড়শাল স্কুলের শিক্ষক শশীশেখর সাহা, সিউড়ি সদর দক্ষিণ চক্রের বড়িহাট স্কুলের শিক্ষিকা সোমা সেনগুপ্ত, খয়রাশোল চক্রের বামনিবাহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তুষার সাহা, রামপুরহাট উত্তর চক্রের কালুহা প্রাথমিক বিদ্যালয়েক শিক্ষাকা পৌলমি রায় প্রত্যেকেই বলছেন, খুবই প্রয়োজনীয় একটা শিবির। অনেক কিছু শিখলাম। যোগব্যয়াম শিখলে পড়ুয়াদের সঙ্গে আমরাও উপকৃত হব। আগামী কাল থেকেই চাইব স্কুলের বাচ্চারা এটা শিখুক।
রাজা ঘোষ বলেন, ‘‘পুজোর পর থেকেই প্রতিটি চক্রে একটি করে এমন শিবির করা হবে। সঙ্গে এ দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেওয়া শিক্ষক শিক্ষিকারা তো রইলেনই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy