Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নেই টিকা, কুকুরের কামড়ে ঘায়েল ১২

দু’টি কুকুরকে ঘিরে তটস্থ ঝালদাবাসী। কখন কোন পাড়ায় ঢুকে কাকে যে তারা কামড় দেবে, সেই নিয়ে আতঙ্কে বাসিন্দারা। কারণ, ওই কুকুরগুলো গত পাঁচ দিনে বিভিন্ন পাড়ার ১২ জনকে কামড়ে জখম করেছে। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে, এই সময়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধকের অভাব।

যদি কামড়ায়! ঝালদাজুড়ে একটাই আতঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

যদি কামড়ায়! ঝালদাজুড়ে একটাই আতঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

কখন যে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ঠিক নেই। কামড় যদি দেয়, তাহলে চিকিৎসা নেই। কুকুরের কামড়ের আতঙ্কের মধ্যে তার প্রতিষেধকের অভাব দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে ঝালদাবাসীকে।

দু’টি কুকুরকে ঘিরে তটস্থ ঝালদাবাসী। কখন কোন পাড়ায় ঢুকে কাকে যে তারা কামড় দেবে, সেই নিয়ে আতঙ্কে বাসিন্দারা। কারণ, ওই কুকুরগুলো গত পাঁচ দিনে বিভিন্ন পাড়ার ১২ জনকে কামড়ে জখম করেছে। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে, এই সময়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধকের অভাব।

বুধবার স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল ১২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়ার বাসিন্দা এক খুদে পড়ুয়া। হঠাৎ পিছন থেকে ছুটে গিয়ে সেই ছাত্রীর পায়ে কামড় বসায় একটি কুকুর। ছাত্রীর আত্মীয় ভগীরথ কর্মকার বলেন, ‘‘ভাইঝিকে ঝালদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ইঞ্জেকশনই নেই! কী করব এ বার?’’

একই অভিজ্ঞতা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া বাউরির। তাঁর বছর সাতেকের ছেলে মহাদেবকেও একই ভাবে গত মঙ্গলবার বাড়ির বাইরে কুকুর কামড়ে দেয়। সোনিয়া বলেন, ‘‘ঘরের কাছেই একটি টিউবওয়েল থেকে জল আনতে যাচ্ছিল মহাদেব। কোথা থেকে এসে একটা কুকুর ওঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমন ভাবে পায়ে কামড়ে ধরেছিল, যে পড়শিরা ছুটে না এলে কী যে ঘটে যেত কে জানে!’’ তাঁর চিন্তা, সময়ে কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক না দেওয়া গেলে ছেলের বিপদ হয়ে যাবে ভেবে তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে ছিলেন। কিন্তু, স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়ে দিয়েছেন, বাইরে থেকে কিনে নিয়ে গেলে তাঁরা ইঞ্জেকশন দিয়ে দেবেন।

কাজে বেরিয়ে ককুরের কামড় খেতে হয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড়কুঠিডাঙা এলাকার বাসিন্দা গোবর্ধন বাউরিকে। তিনি বলেন, ‘‘রোজকার মতো চেনা পথেই কাজে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কালো-সাদা রঙের একটা কুকুর এসে আমাকে কামড়ে দেয়। কিন্তু, বাইরে থেকে ইঞ্জেকশন কিনতে গেলে অনেক খরচ। দিনমজুরি করে অত টাকা জোগাড় করব কী করে?’’ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা ভোলানাথ কান্দু জানান, তাঁর ভাই শিবমকে তিন দিন আগে একটা কুকুরে কামড়ে দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি বাইরে থেকে ইঞ্জেকশন কেনেন।

১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন কান্দু বলেন, ‘‘দু’টি কুকুর নিয়ে খুব ভয়ে রয়েছেন সবাই।’’ ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহেন্দ্রকুমার রুংটা বলেন, ‘‘কোন কুকুর কামড়াচ্ছে, এখনও চিহ্নত করা যায়নি। কেউ বলছেন গায়ের রং লাল, কেউ বলছেন কালো-সাদা রঙের।’’ পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘স্থানীয় সূত্রে যা খবর পেয়েছি, তাতে অন্তত বারো জনকে কুকুরে কামড়েছে। কিন্তু, কুকুর ধরার আমাদের কোনও পরিকাঠামো নেই। আমরা বন দফতরকে এই সমস্যার কথা জানাব।’’

স্থানীয় বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘কুকুরে কামড়ালেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন মিলছে না। আমি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে অবিলম্বে ওই সঙ্কট কাটাতে বলেছি।’’ তবে পুরসভা এগিয়ে এসেছে। মহেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘গরিব মানুষের স্বার্থে ইঞ্জেকশন জোগাড়ের জন্য পুরসভাকে উদ্যোগী হতে বলেছিলাম।’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার পক্ষ থেকে ওই ভ্যাকসিন কিনেছি। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে রাখা আছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র লিখে দিলে আমরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করছি।’’

বিএমওএইচ (ঝালদা ১) দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলায় বারবার অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন চেয়েছি। কিন্তু জেলাতেও নেই। তাতেই সমস্যা বেড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dog Rabies Jhalda Vaccine Scarcity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE