Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Durga Bazaar

আনন্দবাজার হল না, মহালয়ায় মন খারাপ

দুশ্চিন্তা আর বিরক্তির সেই ছুটি আজকের দিনে আরও বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে, কারণ আশ্রমের একান্ত নিজস্ব আনন্দবাজারের হুল্লোড়ে এ বার ছেদ পড়েছে।

স্মৃতি: আনন্দমেলার চেনা ছবি। এ বছর যা দেখা গেল না। ফাইল চিত্র

স্মৃতি: আনন্দমেলার চেনা ছবি। এ বছর যা দেখা গেল না। ফাইল চিত্র

সৌরভ চক্রবর্তী
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

মহালয়ার ভোর যদি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ হয়, তবে সন্ধ্যা অবশ্যই আনন্দবাজারের রঙিন ছবি। করোনা সংক্রমণের জেরে সেই দ্বিতীয় ছবিটি এ বার আর দেখা গেল না। গোটা রাজ্যের নিরিখে শান্তিনিকেতনের দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায় অনেক আগেই। মহালয়ার আগে ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন ভবনের নাটকের অনুষ্ঠান ‘শারদোৎসব’ এবং মহালয়ার সন্ধ্যায় আনন্দবাজারের হাত ধরে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে আশ্রমে। উৎসবের আমেজ গায়ে মেখেই আশ্রম থেকে পড়ুয়ারা প্রতি বছর বাড়ি ফেরে শরতের ছুটি কাটাতে।

এই বছর ছুটি অফুরান। কিন্তু, তাতে কোনও আমেজ নেই। দুশ্চিন্তা আর বিরক্তির সেই ছুটি আজকের দিনে আরও বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে, কারণ আশ্রমের একান্ত নিজস্ব আনন্দবাজারের হুল্লোড়ে এ বার ছেদ পড়েছে। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সীতাদেবী থাকতেন শান্তিনিকেতনে। তাঁর লেখা ‘পূণ্যস্মৃতি’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৩২৪ বঙ্গাব্দের নববর্ষে ছেলেরা আশ্রমে একটি বাজার বসায়। পরের বছর, অর্থাৎ ১৩২৫ বঙ্গাব্দের ৯ পৌষ আশ্রমের মেয়েরা ‘দ্বিজ বিরাম’ সংলগ্ন এলাকায় হাতের তৈরি জিনিসের বাজার বসায়। নাম দেওয়া হয় ‘বৌ ঠাকুরানীর হাট’। এর উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ভানুসিংহের পত্রবলী’তেও। ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ২ বৈশাখ আশ্রমের ছাত্ররা শালবিথিতে একটি মেলা বসায়। যেখানকার উদ্বৃত্ত টাকা তাঁরা ‘দরিদ্র ভাণ্ডারে’ জমা দিত।

স্থান ও ধরণের বিচারে মনে করা হয় এখান থেকেই বর্তমান আনন্দবাজারের সূচনা। বর্তমানে প্রতিবছর গৌরপ্রাঙ্গণে মহালয়ার সন্ধ্যায় এই বাজার বসে। বিভিন্ন ভবনের পড়ুয়ারা তাঁদের হাতে তৈরি জিনিস ও খাবার নিয়ে পসরা সাজায় এবং বাজার শেষে উদ্বৃত্ত অর্থ তুলে দেওয়া হয় কর্মিমণ্ডলীর সেবা শাখার হাতে। মহালয়ার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অন্য রকম হুল্লোড়ে মেতে ওঠে পড়ুয়া, শিক্ষক থেক প্রাক্তনী সকলেই। তবে, আনন্দবাজারের অনুষ্ঠানকে শুধুই হুল্লোড় বলতে রাজি নন পাঠভবনের শিক্ষক তড়িৎ রায়চৌধুরী। তাঁর মতে, ‘‘আনন্দবাজারের গোটা পদ্ধতির মধ্যেই ঠাকুর পরিবারের এক অনন্য চিন্তাধারা লুকিয়ে আছে। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের বাজার ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শী করে তোলার পাশাপাশি উদ্বৃত্ত অর্থ নিঃস্বার্থ ভাবে দানের মানসিকতা তৈরি হয় প্রত্যেক পড়ুয়ার মধ্যে।’’ বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অভ্র বসুও মনে করেন, “শ্রেণিকক্ষের বাইরে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের এক অন্যরকম আন্তরিকতার পরিসর তৈরি হত আনন্দবাজারের হাত ধরে। এ বছর সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলাম।” মন খারাপ পড়ুয়াদেরও। এ দিন সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে আনন্দবাজারের স্মৃতি রোমন্থন চলছে। সঙ্গীতভবনের ছাত্রী অরিশা ঘোষ বলেন, “যে দিনটার জন্য বছরভর অপেক্ষা করে থাকি, সেটাই এ বার ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বিশ্বভারতীতে আসার পরে এমন মহালয়া কাটাইনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Civid19 Durga Puja Pujo Bazaar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE