সাপ হাতে দীনবন্ধুবাবু। নিজস্ব চিত্র
ঠান্ডা পড়া মানেই সাপেদের শীতঘুমের সময় চলে আসে। কিন্তু এবার ডিসেম্বর মাসেও কনকনে ঠাণ্ডার দেখা নেই। তাই শীতঘুম দেওয়ার আদর্শ পরিবেশ পায়নি সাপেরা। পথে-ঘাটে বা বাড়ির আনাচে কানাচে দেখা মিলছে তাদের। সর্প বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, সাপেদের শীতঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় ঠাণ্ডা না পড়াই এর জন্য দায়ী। গত কয়েক বছরে শীতকালে ঠাণ্ডার পরিমাণ কম থাকায় অসময়েও সাপেদের যথেষ্ট পরিমাণে দেখা যাচ্ছে, যাতে সাপের স্বাভাবিক জীবনচক্র হারানোর আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
সাপ শীতল রক্তের প্রাণী। পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে এদের শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করে। তাই সাপেরা বেশি ঠাণ্ডা বা বেশি গরম কোনওটাই সহ্য করতে পারে না। শীতকালে গর্তে, ফাটলে, কোটরে বা কোনও কিছুর মধ্যে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় কাটায়। সাপ বিশেষজ্যদের কথায়, ‘‘এই সময় কোনও খাবারও খায় না এরা। কারণ খাদ্য পরিপাককারী উৎসেচকগুলি এই বিশ্রামের সময় কাজ করে না। এ ছাড়াও শীতকালে এদের শরীরের মেটাবলিক রেট কমে যায়। শরীরে জমে থাকা চর্বি থেকে ন্যূনতম শক্তির যোগান পায় এরা।’’ শীতের শেষের দিকে সাপেরা তাই রুগ্ন ও দুর্বল হয়ে পড়ে। খুব বেশি শীত পড়লে বা শীত দীর্ঘস্থায়ী হলে অনেক সাপ গর্তের মধ্যেই মারা যায়। কখনও কখনও আবার গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে সকালে ও বিকেলের রোদ থেকে খানিকটা তাপ নেয় বেঁচে থাকার তাগিদেই।
কিন্তু পরিবেশ দূষণের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। আবহাওয়া খামখেয়ালি হচ্ছে। সাপেদের স্বাভাবিক জীবনযাপনেও তার প্রভাব পড়ছে। ভারত সরকারের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর সদস্য, সর্পবিশারদ দীনবন্ধু বিশ্বাস বলেন, ‘‘নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বীরভূম জেলার বিভিন্ন অংশ থেকে ২৪টি সাপ উদ্ধার করেছি। যার মধ্যে একটি অজগর, বিষধরদের মধ্যে গোখরো, চন্দ্রবোড়া, শাঁখামুটি, ক্ষীণবিষ লাউডগা, ক্যাট স্নেক ও নির্বিষ বোডাচিতি, ঘরচিতি, দাঁড়াশ রয়েছে।’’ দীনবন্ধুবাবু আরও জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে তাঁকে শীতকালেও সাপ উদ্ধার করতে ডাকা হচ্ছে এবং প্রতি বছরই
শীতকালে সাপ উদ্ধারের সংখ্যা একটু একটু করে বাড়ছে। গত বছর শুধুমাত্র জানুয়ারি মাস ছাড়া সব মাসেই সাপ উদ্ধার করেছেন দীনবন্ধুবাবু। এ বছর শীতের বহর এমন থাকলে জানুয়ারিতেও হয়ত সাপের দেখা মিলতে পারে বলে তাঁর অনুমান। বনবিভাগের খতিয়ান অনুযায়ী, বীরভূম জেলায় মোট
২৩টি প্রজাতির সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজাতির সাপ বিষধর। গোখরো (খরিস), কেউটে (আলান), কালাচ (ডোমনাচিতি), চন্দ্রবোড়া, শাঁখামুটি। এর মধ্যে শাঁখামুটি সাপ ভয়ঙ্কর বিষধর হলেও এরা চটকরে
কাউকে কামড়ায় না। শুধু বীরভূম বলেই নয় গোটা পশ্চিমবঙ্গেই মূলত এই চারটি সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়।
শীতকালে সাপ উদ্ধারের পরিমাণ বাড়তে থাকা উদ্বেগের কারণ হলেও একটি বিষয়ে আশাবাদী হয়েছেন সর্পবিশারদ এবং বন দফতরের কর্মীরা। তাঁরা জানান, আগে লোকালয়ে সাপ দেখতে পেলেই পিটিয়ে মেরে ফেলার প্রবণতা ছিল। সেই প্রবণতা এখন অনেকটা কমেছে। আতঙ্কিত না হয়ে সাধারণ মানুষ আগে খবর দিচ্ছেন। নজর রাখছেন সাপের গতিবিধির উপর। ফলে সাপ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। বন কর্তাদের দাবি, স্কুল এবং স্থানীয়দের মধ্যে সাপ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারের সুফল এটি। বীরভূমের সহ বিভাগীয় বনাধিকারিক বিজনকুমার নাথ বলেন, ‘‘খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্যই সাপের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটছে। ডিসেম্বরেও তাই লোকালয়ে দেখা মিলছে তাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy