Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উদ্যোগী জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ

কুসংস্কার রোখার বার্তা ফেরি চারণ কবির গানে

একটা সময় ছিল যখন ভাদু, টুসু, কীর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষকে সচেতন করা হত। সেই ধারা হারাতে বসেছে। শুধু বক্তৃতার মাধ্যমে কিংবা লিফলেটে প্রচার করে সে রকম ফল হচ্ছে না।

বার্তা: বিশ্বভারতীর দত্তক নেওয়া গ্রামে চলছে প্রচার। আশা, এ ভাবেই এক দিন রোখা যাবে কুসংস্কার। নিজস্ব চিত্র

বার্তা: বিশ্বভারতীর দত্তক নেওয়া গ্রামে চলছে প্রচার। আশা, এ ভাবেই এক দিন রোখা যাবে কুসংস্কার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৪
Share: Save:

সমাজে এখনও বাসা বেঁধে আছে কুসংস্কার। এরই মধ্যে নতুন সমস্যা হল নাবালিকা বিয়ের আয়োজন। সচেতনতা শিবির করে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই সব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। বিশ্বভারতীর দত্তক নেওয়া গ্রামগুলিতে এ বার নানাবিধ কুসংস্কার এবং নাবালিকা বিয়ে নিয়ে প্রচার চালাতে উদ্যোগী হল বিশ্বভারতীর জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ। চারণ

কবির গানে গানে সচেতনতা শিবির হল কাকুটিয়া গ্রামে। কবিয়াল অনাদি দাসের গানে উঠে এল নাবালিকা বিয়ে নিয়ে নানা সমস্যা এবং সামাজিক ব্যাধিগুলির কথা।

একটা সময় ছিল যখন ভাদু, টুসু, কীর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষকে সচেতন করা হত। সেই ধারা হারাতে বসেছে। শুধু বক্তৃতার মাধ্যমে কিংবা লিফলেটে প্রচার করে সে রকম ফল হচ্ছে না। যে সব ক্ষেত্রে ডাইন অপবাদ দেওয়া, সাপে কাটলে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া কিংবা নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে, দেখা গিয়েছে সেখানে শিক্ষার আলো সে ভাবে পৌঁছয়নি। এঁদের বোঝাতে সেই পুরনো পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে— এমন ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ বলে জানান জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান সুজিতকুমার পাল।

বুধবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলমহার্স্ট ইনস্টিটিউটের পরিবার সহায়তা কেন্দ্রের কাউন্সিলর সুস্মিতা বসু, কাকুটিয়া শান্তিদেব ঘোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক, কর্মসূচি আধিকারিক বিকাশ মাঝি, স্থানীয় মহিমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় সহ গ্রামের প্রায় ২৫০ জন মহিলা। স্বনির্ভর

প্রকল্পের মহিলা এবং কাকুটিয়া শান্তিদেব ঘোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীরাও এই শিবিরে যোগ দেন। সার্বিক উন্নয়নে গ্রামের মানুষদের ‘কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট’-এর কথা ভেবে আগেই সাহিত্যসভার আয়োজন করেছে বিশ্বভারতী।

জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ রায়পুর, কাকুটিয়া, বিনুরিয়া, ইসলামপুর, পারুলডাঙা, বল্লভপুর, খোসকদমপুর, গোয়ালপাড়া সহ ৫০টি গ্রাম নিয়ে কাজ করছে। সার্বিক উন্নয়নের জন্য গঠন করা হয়েছে ৪০টি গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা, ১২টি মহিলা সমিতি, ৩৬টি গ্রামীণ পাঠাগার। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় আলোচনা সভা, উৎসব-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মানুষদের সচেতন করার কাজ চলছে। সুবিধার জন্য কয়েকটি গ্রাম নিয়ে ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে।

গত ২৫ মে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছিলেন। আসে গ্রামীণ পুনর্গঠনে কবিগুরুর দর্শনের কথাও। তার পরই বিশ্বভারতীর দত্তক নেওয়া ৫০টি গ্রাম নিয়ে কাজ করার যেমন প্রশংসা করেছিলেন, তেমনই বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্বভারতীর অধীনে আরও গ্রাম এনে সংখ্যাটা ১০০ থেকে ২০০ করার আহ্বান জানান। এই আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়েই আরও ৫০টি গ্রাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ২৯ সেপ্টেম্বর রামনগর নামের একটি আদিবাসী গ্রামে শিবিরের মধ্যে দিয়ে প্রাথমিক ভাবে মোট ১০৬টি গ্রাম নিয়ে কাজ করা শুরু করে বিশ্বভারতী।

এ বার কবিগানের মধ্যে দিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গ্রামের দিকে মেয়ের একটু বয়স হলেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন অভিভাবকেরা। সেই অবস্থায় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়াই অন্যতম রাস্তা বলে মনে করেন অনেকে। পরে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। কখনও পারিবারিক অশান্তি, কখনও আবার পণ নিয়ে ঝামেলা। নাবালিকা মা হলে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। গর্ভের শিশু পুষ্ট না হলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্ম হয়। সেক্ষেত্রেও শ্বশুরবাড়িতে অশান্তির সূচনা হতে পারে। গর্ভবতী এবং শিশু দু’জনেরই প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কুসংস্কার তো আছেই।

কাকুটিয়া শান্তিদেব ঘোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক মনে করেন, ‘‘এই জাতীয় শিবিরে শুধু মেয়েরা নয়। ছেলেদেরও উপস্থিত থাকা উচিত। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল এই

বোধ তাঁদেরও থাকা উচিত।’’ স্কুলের ছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অনেক কিছু জানতে পারলাম। কবিগানের মধ্যে দিয়ে প্রচার হওয়ায় মায়েদের বিষয়টি বুঝতে অনেক সুবিধা হয়েছে।’’ জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান সুজিতকুমার পাল বলেন, ‘‘এর আগে একটি গ্রামে কবিগানের মধ্যে দিয়ে ‘নেশা সর্বনাশা’ বিষয়ে প্রচার চালাই। তখনই বুঝতে পারি এই পদ্ধতিতে গ্রামের মানুষদের বোঝানো অনেক সহজ। তাই ঠিক করেছি এই ভাবেই গ্রামগুলিতে প্রচার চালাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Folk Song Social Awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE