Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাত পড়ছে বাজারে, নিরন্নের ‘সহায়’ শহরের বাসিন্দারাই

আশ্চর্য ভাতের গন্ধ বাঁকুড়ার আকাশে। প্রতি শনিবার পাত পড়ছে কেরানিবাঁধে। নিরন্ন মানুষের ‘সহায়’ হয়ে উঠছেন শহরেরই কিছু বাসিন্দা।

বাঁকুড়ার কেরানিবাঁধে। নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়ার কেরানিবাঁধে। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

আশ্চর্য ভাতের গন্ধ বাঁকুড়ার আকাশে। প্রতি শনিবার পাত পড়ছে কেরানিবাঁধে। নিরন্ন মানুষের ‘সহায়’ হয়ে উঠছেন শহরেরই কিছু বাসিন্দা।

তাঁদের কেউ সরকারি চাকুরে, কেউ ব্যবসায়ী। সংখ্যায় জনা দশেক। বাজারে পুরসভার গড়ে দেওয়া ছাউনি। সেখানে সপ্তাহে এক দিন তাঁরা দরিদ্র মানুষজনের জন্য পঙ্‌ক্তি ভোজনের বন্দোবস্ত করে আসছেন গত কয়েক মাস ধরে। উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘সহায়’। গত শনিবার যেমন গিয়ে দেখা গেল, রান্না হয়েছে ভাত, ডাল, সব্জি, মাছের ঝোল আর শেষ পাতে চাটনি। পরিবেশন করছেন উদ্যোক্তারাই। তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চান না। এক জন বললেন, ‘‘আমরা ক’জন তো শুধু নই। অনেকেই আছেন, যাঁরা এক এক দিনের খাওয়ার খরচ দেন। কেউ কোনও শুভদিনে, কেউ এমনিই।’’

উদ্যোক্তারা জানান, মূলত ভিক্ষুক এবং ভবঘুরেদের কথা ভেবেই এই আয়োজন। ‘‘দেখেছি, সারা দিন ভিক্ষা করে ফিরে হাঁড়ি চড়াচ্ছেন বয়স্ক কোনও মানুষ। খারাপ লাগে। আমরা একটা দিন তো তাঁদের দুপুরের খাবারটা দুপুরেই বেড়ে দিতে পারি,’’ বলছিলেন এক জন। এ ভাবেই চলার শুরু।

তার পরে কেনা হয়েছে বাসনকোসন। এক জন দিয়েছেন গ্যাসের আভেন। রাঁধুনি আনা হয়েছে। বাজারে বলে রাখা থাকে, শুক্রবার রাতেই জিনিসপত্র চলে আসে। শনিবার সকালে আসে মাছ। সকাল ছ’টা থেকে ছাউনির নীচে রান্নাবান্না শুরু হয়ে যায়। পাত পড়া শুরু ১০টা থেকে। খাওয়ার পর্ব চুকতে চুকতে দুপুর গড়িয়ে যায়। উদ্যোক্তারা জানান, মোটামুটি দেড়শো জনের জন্য রান্না করেন তাঁরা। এমন দিনও হয়েছে, আরও মানুষ এসেছেন। কাউকে শুকনো মুখে ফেরাননি। স্থানীয় হোটেল থেকে কিনে আনা হয়েছে বাকি খাবার।

খরচ? তাঁরা জানাচ্ছেন, মোটামুটি হাজার তিনেক টাকা লাগে প্রতি শনিবার। সেটার জন্য নিজেদের মধ্যে চাঁদা তোলেন। ধরাবাঁধা কিছু নেই। যে যেমন খুশি দেন। অনেক দিন পরিচিত লোকজন পুরো খরচটাই দিয়ে দেন। এ ভাবেই চলে আসছে। এখন তাঁরা ঠিক করেছেন, মাটিতে নয়, চেয়ার-টেবিল পেতে খাবার বন্দোবস্ত করবেন। চেয়ার কেনা হয়ে গিয়েছে। টেবিলটা শুধু বাকি।

২০১৬-র অক্টোবরে কলকাতার লেক টাউনে আবাসনের পাশে গড়ে ওঠে ‘ওয়াল অব কাইন্ডনেস’ বা ‘উদারতার দেওয়াল’। ব্যবসায়ী রাজেশ গোয়েঙ্কাকা ও তাঁর স্ত্রী নীলম গোয়েঙ্কার উদ্যোগে অনেকেই সাড়া দিয়েছিলেন। বাড়তি পোশাক রেখে যেতেন দেওয়ালে। যাঁদের প্রয়োজন, নিয়ে যেতেন। কিন্তু, এখন সেই দেওয়ালের চিহ্ন নেই। স্থানীয় সূত্রে খবর, দরিদ্র শহরবাসীর মধ্যে দেওয়ালটির জনপ্রিয়তা ভাল ভাবে নেননি রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। অভিযোগ, রাজেশকে প্রায়ই কটাক্ষ শুনতে হত। তাতেই পিছু হটেন।

তবে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান, তৃণমূলের মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘এই উদ্যোগ খুবই ভাল। মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’’ পুরসভার বিজেপির কাউন্সিলার নীলাদ্রিশেখর দানার বক্তব্য, ‘‘আরও অনেকের এমন ভাবে এগিয়ে আসা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Hungry Feeding Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE