Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গদাধরের দায়িত্ব বাড়ল না কমল, চর্চা

পরপর দু’টি বিধানসভা ভোটে নানুর কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়েছে শাসকদলের। এখন সামনে লোকসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় নানুরে কোনও দল কোনও রকম বিতর্কে জড়াতে চাইছে না।

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বৈঠকে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন, শুধু নানুর নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। গোটা জেলা ঘুরে ঘুরে সংগঠনের কাজ করতে হবে। এতে দলের জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার অঘোষিত পদোন্নতি হল নাকি, উল্টোটা— তা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে নানুরে।

পরপর দু’টি বিধানসভা ভোটে নানুর কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়েছে শাসকদলের। এখন সামনে লোকসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় নানুরে কোনও দল কোনও রকম বিতর্কে জড়াতে চাইছে না। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, জেলা যুব সভাপতি গদাধরের বিরুদ্ধে একাধিকবার নানুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে জুড়েছে দুর্নীতির নালিশও। তাই নানুরের দলীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি ব্লক কোর কমিটির বৈঠক
ডাকেন দলের তরফে নানুরের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। সাত জনের কোর কমিটির ওই বৈঠকে গদাধরও হাজির ছিলেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে নানুর ব্লক কোর কমিটির অন্যতম দুই সদস্য রবিবার বললেন, ‘‘জোড়া অভিযোগের কারণেই ওই বৈঠকে নানুরের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গদাধর হাজরার যোগদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ব্লক কোর কমিটি থেকেও তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।’’

যদিও প্রকাশ্যে কোনও নেতাই এ কথা মানতে চাননি। নানুরে যাঁর সঙ্গে গদাধরের সম্পর্ক একেবারেই মসৃণ নয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের সেই ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘যা জানার পর্যবেক্ষকের কাছে জেনে নিন।’’ গদাধর নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘দুর্নীতি এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোর কমিটি থেকে আমাকে বাদ দেওয়ার কথাও আমি জানি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আসলে আমি দলের যুব
সংগঠনের সভাপতি। তাই নানুর নিয়ে পড়ে না থেকে জেলা জুড়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।’’

চন্দ্রনাথবাবুও বলছেন, ‘‘দলের কোর কমিটি থেকে বাদ দেওয়া কিংবা দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া থেকে গদাধরকে বিরত থাকতে বলা হয়নি। শুধু নানুর নিয়ে পড়ে থাকলে ওঁর চলে না। তাই জেলা জুড়ে কাজ করতে হবে। লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের সঙ্গে থেকে প্রচার অভিযানেও যোগ দিতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী যদি মনে করেন, তা হলে তাঁকে নানুরের কোনও কর্মসূচিতে নিয়ে যেতে পারেন।’’

এলাকায় কান পাতলে অবশ্য শোনা যাচ্ছে আরও নানা কথা। নানুরে গদাধরকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এক সময় দলের প্রাক্তন যুব নেতা কাজল শেখের সঙ্গে জুটি বেঁধে
দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুরে অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। সেখানে জেলা পরিষদের যে একটি মাত্র আসনে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছিল, তিনি ১৯০৫ ভোটে হারিয়ে দেন অনুব্রত অনুগামী হিসাবে পরিচিত ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুব্রতবাবুকে। সে সময় পরোক্ষে সিপিএমকে সাহায্য করার সুব্রতবাবুকে
হারানোর অভিযোগ ওঠে কাজল-গদাধর জুটির বিরুদ্ধে।

পরে অবশ্য কাজলের বিরোধিতা করে অনুব্রতর ছাতার নীচেই আশ্রয় নেন গদাধর। তখন থেকেই কাজলের সঙ্গে তাঁর বিবাদের শুরু। সে খেসারত দিতে হয়েছে শাসকদলকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর কেন্দ্রের অধীন নানুর বিধানসভায় ৬০ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। অথচ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধানের কাছে হারতে হয় গদাধরকে।

বিধানসভা ভোটের পরে কাজল অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তৃণমূল সূত্রেই খবর, সেই জায়গায় ব্লক সভাপতির অনুগামীদের একটি গোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷ বেশ কিছু কাজল-অনুগামী সেই গোষ্ঠীতে নাম লেখান। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই শুরু হয় গদাধর গোষ্ঠীর। নানুরে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। আসল তৃণমূল কর্মীদের একাংশ মুখ ফিরিয়ে নেন। তার প্রভাব পড়ে দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশে। জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানালেন, সম্প্রতি নানুরে অনুব্রতের একটি সভায় তেমন ভাল লোক সমাগম হয়নি। তার জন্য ব্লক সভাপতিকে শো-কজ পর্যন্ত করা হয়। দলীয় তদন্তে উঠে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে লোক না হওয়ার কথা। একই সঙ্গে গদাধর-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও অনুব্রতের কানে আসে।

এর পরেই ওই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Nanur TMC Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE