Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বালির পাহাড় দর্শন গ্রিভান্স সেল কর্তার

তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করলে কেউ রেহাই পাবেন না। বীরভূমে এমন অনেক অভিযোগ এসেছিল। অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতেই এসেছি।’’

রুক্ষ: মজুত বালির স্তূপে জন অভিযোগ সেল প্রধান। খটঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র

রুক্ষ: মজুত বালির স্তূপে জন অভিযোগ সেল প্রধান। খটঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৯
Share: Save:

সরকারি নিয়ম না মেনে বর্ষায় বালি মজুতের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অভিযোগের অভিঘাত কত তা দেখতে এলাকা ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের জন-অভিযোগ সেলের (গ্রিভান্স সেল) প্রধান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সোমবার সিউড়ি-আমজোড়া সড়ক ধরে ময়ূরাক্ষী নদীর ধার ঘেঁষা সিউড়ি ১ ব্লকের খটঙ্গায় বালি মজুতের হালহকিকত খতিয়ে দেখেন দীপ্তাংশুবাবু। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক) অভিষেক মণ্ডল ও সিউড়ি থানার আইসি দেবাশিস পান্ডা। বালি-কারবারিরা রাস্তার দু’ধারে পাহাড়-প্রমাণ বালি জড়ো করেছেন দেখে অবাক হন দীপ্তাংশুবাবু।

পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করলে কেউ রেহাই পাবেন না। বীরভূমে এমন অনেক অভিযোগ এসেছিল। অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতেই এসেছি।’’

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, বর্ষাকালে (১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর) নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ। এই সময় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে বালি মজুত করেন কারবারিরা। কিন্তু অনুমতি নিয়েও, প্রশাসনিক

নির্দেশ অগ্রাহ্য করে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি বালি মজুত করার অভিযোগ উঠছে।

এই অভিযোগ পেয়ে ২৫ জুলাই জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের নেতৃত্বে জেলা জুড়ে অভিযানে নেমেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অনুমতি নিয়েও যাঁরা বালি মজুতের সরকারি নিয়ম মানেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। অধিকাংশ লিজ হোল্ডার বা লেসি-র বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় গ্রেফতারি এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে বীরভূম জুড়ে বালি ব্যবসা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বালি কারবারে যুক্তদের একাংশের বিরুদ্ধে ২৯ জুলাই গভীর রাতে জেলাশাসকের বাংলো চত্বরে বোমাবাজির অভিযোগ ঘিরেও জলঘোলা হয়েছে।

ওই ঘটনার নিন্দা করে এবং ঘটনায় তাঁদের কারও জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করেছে জেলা স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত অনেক লেসিই আগাম জামিনের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

তবে এই ঘটনাক্রমে বীরভূম প্রশাসনের প্রশংসা করেছেন দীপ্তাংশুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা প্রশাসন ভীষণ ভাল কাজ করেছে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। মজুত বালি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ৭১টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে কয়েক জন বালি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।’’

এ নিয়ে জেলা স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য, সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি মিলেছিল। বর্ষায় বালি মজুতের জন্যও অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কোটি কোটি টাকার চালানও কাটা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি হয়েছে। সেই সব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতেই পারে। প্রয়োজনে স্যান্ড ব্লকের লিজ বাতিল করতে পারে, জরিমানাও করতে পারে। কিন্তু সময় না দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। জেলা জুড়ে ১৩২ জন লেসির মজুত বালি অবৈধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সংগঠনের বক্তব্য, ‘‘আমরা এক গাড়ি বালিও বিক্রি করতে পারছি না। কিন্তু কারবার থেমে নেই। প্রতি দিন বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে শয়ে শয়ে ট্রাক্টরে অবৈধ ভাবে বালি পাচার চলছে। তা নিয়ে কেন নীরব প্রশাসন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Sand Public Grievance Cell
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE