Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বুদ্ধপূর্ণিমায় নজর অযোধ্যা পাহাড়ে, শিকার বন্ধে ভরসা এ বার পথনাটিকায়

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন শিকার উৎসবে যান জেলার একটা বড় অংশের মানুষ। সঙ্গ দিতে আসেন ঝাড়খণ্ড তো বটেই আশপাশের জেলা থেকেও বহু মানুষ। দিনভর তাঁরা জঙ্গলে ঘুরে বন্য প্রাণী শিকার করেন।

 সতর্ক: সচেতন করতে অভিনয়। অযোধ্যা পাহাড় এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

সতর্ক: সচেতন করতে অভিনয়। অযোধ্যা পাহাড় এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

শিকার উৎসবে যাতে বন্যপ্রাণদের ক্ষতি না করা হয়, সে জন্য প্রচারপত্র বিলি, মাইকে ঘোষণা— সবই হচ্ছে। সচেতনতায় জোর দিতে এ বার গ্রামে গ্রামে পথনাটিকা শুরু করেছে বন দফতরের বাঘমুণ্ডি রেঞ্জ।

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন শিকার উৎসবে যান জেলার একটা বড় অংশের মানুষ। সঙ্গ দিতে আসেন ঝাড়খণ্ড তো বটেই আশপাশের জেলা থেকেও বহু মানুষ। দিনভর তাঁরা জঙ্গলে ঘুরে বন্য প্রাণী শিকার করেন। এটাই বরাবরা হয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরেই বন্যপ্রাণদের রক্ষা করার বার্তা দিতে নেমেছে বন দফতর। তাতে একাংশের সাড়া পাওয়া গেলেও, অনেকে এখনও শিকার করতে জঙ্গলে ঢুকছেন। সামনেই বুদ্ধ পূর্ণিমা। তাই সচেতনচায় জোর দিয়েছেন বনকর্মী ও বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যেরা।

প্রচারপত্র বিলি ও মাইকে ঘোষণা করা হলেও পথনাটিকা দর্শকদের মধ্যে অনেক বেশি ছাপ ফেলে বলে মনে করছেন অনেকে। তাই বাঘমুণ্ডির রেঞ্জ অফিসার মনোজকুমার মল্ল ২০ মিনিটের একটি নাটক লিখেছেন। অভিনয় করছেন এক বিট অফিসার, এক জন ফরেস্ট গার্ড ও স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির নয় সদস্য। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন আদিবাসী মহিলাও।

নাটক শুরুর আগে মাইক হাতে এক কুশীলব গ্রামবাসীদের জানিয়ে দিচ্ছেন, উৎসবে মেতে উঠুন। কিন্তু কোনও ভাবেই পশুহত্যা কিংবা জঙ্গল ধ্বংস করা যাবে না। আনন্দ করুন, কিন্তু শিকার নয়। নাটকের গোড়াতেই দেখানো হচ্ছে, পুরুষেরা বুদ্ধ পূর্ণিমায় অযোধ্যাপাহাড়ে শিকার উৎসবে বার হচ্ছেন। সেই সময় ঘরের মহিলারা হাতজোড় করে তাঁদের বোঝাচ্ছেন— উৎসবে যাচ্ছ যাও, কিন্তু পশু শিকার কর না। অনুরোধে কান না দিয়ে শিকারিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অযোধ্যাপাহাড়ে উঠতে গেলে সেখানেম তাঁদের হাতজোড় করে শিকারে যেতে নিষেধ করছেন বনকর্মীরা। শেষে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আর কোনও দিন শিকার না করার সংকল্প নিয়ে সব অস্ত্র বনকর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে ঘরমুখো হচ্ছেন শিকারিরা।

বাঘমুণ্ডি রেঞ্জ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় এক মাস ধরে নাটকের তালিম নিয়েছেন কর্মীরা। বৃহস্পতিবার বাঘমুণ্ডি রেঞ্জের নিশ্চিন্তপুর, জিলিংসেরেং, গন্ধুডি থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি জঙ্গল লাগোয়া আদিবাসী গ্রামে মঞ্চস্থ করা হয় ওই পথনাটিকা। শনিবার বুদ্ধপূর্ণিমা। ওই দিনে প্রতি বছর অযোধ্যাপাহাড়ে ভিড় জমান হাজার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। বাঘমুণ্ডির মতো অযোধ্যাপাহাড়কে ঘিরে থাকা ঝালদা, কোটশিলা কিংবা বলরামপুরের মতো যে সমস্ত রেঞ্জগুলি রয়েছে সেখানেও জোরদার প্রচার শুরু করেছে বন দফতর। বাংলার পাশাপাশি অলচিকি হরফেও লেখে হয়েছে প্রচারপত্রে।

কিন্তু এত সব করেও আটকানো যাবে পশু শিকার? বাঘমুণ্ডি রেঞ্জ অফিসার বলেন, ‘‘আগের থেকে শিকার কিছুটা কমেছে। এক জন সচেতন হলে তিনিই পড়শিকে পশু শিকার করতে বারণ করবেন। এই বিশ্বাস রয়েছে।’’ এ ছাড়া বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন বন দফতরের কর্মীরা,

থাকবে পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife Poaching Street Drama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE