মহাদেব। নিজস্ব চিত্র
শালি নদীতে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে মৃত্যু হল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের। সোমবার সোনামুখী থানার পলসরা গ্রামের ঘটনা। মৃত মহাদেব মণ্ডল (১৪) ধুলাই পঞ্চায়েতের সদ্য প্রাক্তন প্রধান কাশীনাথ মণ্ডলের ছেলে। গুরুতর জখম হয়েছে মহাদেবের জেঠতুতো ভাই পাপু মণ্ডলও। তার চিকিৎসা চলছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে।
কাশীনাথবাবু এবং তাঁর ভাই নিমাই মণ্ডলের যৌথ পরিবার। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, কাশীনাথবাবুর স্ত্রী এ দিন বড় মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। দাওয়ায় খেলাধূলা করছিল পাপু ও মহাদেব। পাপু পলসরা জুনিয়র হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মহাদেব সোনামুখী বি জে স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। কেউই সাঁতার জানে না। গ্রামের দক্ষিণ দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে শালি নদী। মহাদেবদের বাড়ি থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ৩০ মিটার। একটা সময়ে গ্রামেরই এক বালকের সঙ্গে দুই ভাই নদীর চরে খেলতে যায়। ওই বালকের কথায়, ‘‘আমরা চরের বালিতে খেলছিলাম। ওরা দু’জন স্নান করবে বলে নেমে যায়।’’ সে জানায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই পাপু তলিয়ে যায়। তাকে ধরতে গিয়ে তলিয়ে যায় সহদেবও।
নদীর নীচে কোনও কোনও জায়গায় গভীর গর্ত থাকে। তার মধ্যে জলের ঘুর্ণি তৈরি হয়। উপর থেকে বোঝার জো নেই, নীচে জল কতটা গভীর। স্থানীয় ভাবে এমন গর্তকে বলা হয় ‘দ’। ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ঘাটের কাছেই একটি দ রয়েছে। এই বর্ষায় প্রায় ষোলো-সতেরো ফুট গভীর হয়েছে সেটি। তাতেই তলিয়ে গিয়েছিল দু’জন।
জটলা: এখানেই তলিয়ে যায় মহাদেব। —নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনার পরে সঙ্গী বালকের চিৎকার শুনে পাশের খেত থেকে ছুটে আসেন কাশীনাথবাবু। আরও লোকজন চলে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, কাশীনাথবাবু ঝাঁপিয়ে প্রথমে পাপুকে তুলে আনেন। অন্যরা যতক্ষণে সহদেবকে উদ্ধার করেন, ততক্ষণে প্রায় মিনিট সাতেক পার হয়ে গিয়েছে। মোটরবাইকে চড়িয়ে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিৎসক জানান, আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে সহদেবের। পাপুকে পাঠানো হয় বাঁকুড়া মেডিক্যালে। তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
পুত্রশোক: ভেঙে পড়েছেন কাশীনাথ মণ্ডল। ছবি: শুভ্র মিত্র
কাশীনাথবাবু ১৯৯৮ সাল থেকে ধুলাই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ছিলেন। এ বার ভোটেই দাঁড়াননি। চাষবাস নিয়ে থাকেন। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। মহাদেব ছিল সবার ছোট। এ দিনের ঘটনার পরে কথা বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না কাশীনাথবাবু। থমথম করছিল গ্রাম। গ্রাম এবং গ্রামের বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছিলেন বাড়িটিতে। ঘাটে গিয়ে দেখা হল হারু মণ্ডল, ভুবন মণ্ডল, বাবলু মণ্ডলদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘‘ছেলেটা ছটফটে ছিল। তবে সচরাচর নদীতে যেত না।’’ গ্রামে মুদির দোকান রয়েছে খগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘সকালেই জিনিসপত্র নিয়ে গেল, তার পরেই শুনি ছেলেটা আর আর নেই। বিশ্বাসই করতে পারছি না।’’
মহকুমা পুলিশ জানিয়েছে, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy