আদরি শবর। নিজস্ব চিত্র
সেই ব্রিটিশ আমলেই ‘অপরাধী’র তকমা লেগে গিয়েছিল। এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম হলেই শবর খেড়িয়াদের আগে খোঁজ পড়ত। তবে আগের থেকে সেই মানসিকতার পরিবর্তন অনেকটাই হয়েছে। পড়াশোনা করে এগিয়ে আসছেন ওই সব সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা। এ বার শবর পরিবারের এক ছাত্রীর হাতেই স্কুলের বাকি ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়ার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল। শিক্ষক দিবসের দিন বান্দোয়ান গার্লস হাইস্কুলে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আদরি শবরের হাতে। আজ, বুধবার থেকে স্কুলের ছাত্রীরা আদরির তত্ত্বাবধানে আত্মরক্ষার জন্যে নিয়মিত পাঠ নেবে।
সম্প্রতি জঙ্গলমহল ক্যারাটে ডো চ্যাম্পিয়ান কাপ প্রতিযোগিতা হয়েছে। বাঁকুড়ার খাতড়ায় আয়োজিত ৪র্থ বর্ষের এই প্রতিযোগিতায় আদরি (৪০-৪৫ কেজি) বিভাগে প্রথম স্থান পায়। বান্দোয়ান গার্লস হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আদরি সোনা এবং ওই স্কুলের নবম শ্রেণির দুর্গা প্রামাণিক ওই বিভাগে দ্বিতীয় হয়ে রুপো জিতেছে। দুর্গাও আদরির সঙ্গে প্রশিক্ষণে সাহায্য করবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বীথিকা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বান্দোয়ানের বান্দুডাবর গ্রামের আদরি প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। সে পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই স্কুলের আবাসিক ছাত্রী। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। অল্প দিনের মধ্যে আদরির পারদর্শিতা প্রশিক্ষকের নজরে আসে। আদরি এবং দুর্গা স্কুলের নাম রেখেছে।’’ তিনি জানান, আজ, বুধবার শিক্ষক দিবস। এই দিনটিতে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়। সে জন্য শিক্ষক দিবস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আদরিকে প্রশিক্ষণের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হল। তবে ইতিপূর্বেই সে অন্যান্য ছাত্রীদের ক্যারাটের কলাকৌশল শেখাতে শুরু করেছে। প্রশিক্ষণ মাঝে মধ্যে এলেও আদরি নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেবে।
স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি রঘুনাথ মাঝি বলেন, ‘‘আদরি পিছিয়ে পড়া জনজাতি থেকে উঠে এসেছে। এখনও এলাকায় কোন অপরাধ ঘটলে ওই জনগোষ্ঠীর লোকদের দিকে সন্দেহের আঙুল ওঠে। এই অবস্থায় একজন শবর ছাত্রী বাকিদের আত্মরক্ষার কলাকৌশল শেখাবে, এর থেকে ভাল হয় না।’’ তাঁর মতে, মেয়েরা নানা কাজেই বাইরে বেরোচ্ছেন। ক্যারাটের প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে তাদের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে, তেমনই সাহসীও হয়ে উঠবে। তাই নিয়মিত স্কুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওই স্কুলে ক্যারাটের প্রশিক্ষক ধনঞ্জয় পরামাণিক বলেন, ‘‘আদরির মধ্যে শেখার ইচ্ছা প্রবল। ক্যারাটের বিভিন্ন কৌশল এক বার শিখলে ভোলে না। ওকে নিয়ে আমি আশবাদী।’’
বীথিকাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের সমস্ত কন্যাশ্রী ছাত্রী ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রতি শুক্রবার ও রবিবার প্রশিক্ষণ চলে। আদরি আবাসিক ছাত্রী হওয়ায় ছাত্রীদের আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণের জন্যে বাড়তি সময় দিতে পারবে।’’
আদরির কথায়, ‘‘ভয়ের জন্ম মনে। মন থেকে এক বার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারলে, কোনও কিছুই আর সমস্যা বলে মনে হবে না।’’
সেই কথাতেই আস্থা রেখে সহপাঠীদের ভরসা দিতে চায় আদরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy