ঝালদা পুরসভার বারান্দায় বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা। নিজস্ব চিত্র
বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা তলবিসভা ডেকেছিলেন সোমবার। জেলাশাসক সেটা স্থগিত রাখতে বলেছিলেন। আচমকা নোটিস দিয়ে এ দিন ছুটিও ঘোষণা করে দিলেন ঝালদার পুরপ্রধান। তার পরেও অনাস্থার চিঠিতে সই করা সদ্য প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক দাবি করছেন, পুরসভার বারান্দায় ‘তলবিসভা’ করে তাঁরা ধ্বনি-ভোটে পুরপ্রধানকে ‘অপসারিত’ করেছেন। ওই সভার কার্যবিবরণী প্রশাসন এবং পুর-দফতরে পাঠাবেন তাঁরা।
ঝালদা পুরসভার মোট ১২ জন কাউন্সিলর। তাঁদের মধ্যে ৯ জন গত ২২ মে তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবালের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন দলেরই চার জন। চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধানের তলবিসভা ডাকার কথা। তার পরে সেটা ডাকতে পারতেন উপ-পুরপ্রধান। এ দিকে খোদ উপ-পুরপ্রধানই অনাস্থার চিঠিতে সই করেছেন। পুরপ্রধানের তলবিসভা ডাকার মেয়াদ ফুরনোর আগেই তিনি উপ-পুরপ্রধানকে অপসারিত করেন। ৬ জুন পুরপ্রধান তলবিসভা ডাকেন। দিন ধার্য হয় ৩ জুলাই।
বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের বক্তব্য, দেড় মাস তলবি সভা ঝুলিয়ে রাখা চলবে না। পুরপ্রধান ১৫ দিনে, উপ-পুরপ্রধান তার পরের ৭ দিনে তলবিসভা না ডাকলে সেটা ডাকতে পারেন অনাস্থা আনা কাউন্সিলরেরাই। সেই কথা বলে তাঁরাই সোমবার তলবিসভা ডেকেছিলেন। এ দিকে পুরপ্রধান না বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর— কোন পক্ষের তলবিসভাকে মান্যতা দেওয়া হবে, তা জানতে চেয়ে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের চিঠি পাঠিয়েছেন জেলাশাসক। তিনি এদিনের বৈঠক স্থগিত করেছিলেন।
তার পরেও সোমবার তলবিসভা করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা। প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন পুরসভায় পৌঁছে দেখেন, মূল দরজায় তালা ঝুলছে। কেন? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘যে ভাবে অনাস্থার বিষয়টি নিয়ে বিগত কয়েক দিন ধরে সন্ত্রাস চলছে তাতে আমি মনে করেছি যে পুরসভার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। আক্রমণেরও আশঙ্কা রয়েছে। পুরসভার নথি ও সম্পত্তি বাঁচাতে আমি এ দিন ছুটি ঘোষণা করেছি।’’
যদিও সোমবারের তলবিসভার অন্যতম আহ্বায়ক মহেন্দ্রকুমার রুংটা ও তপন কান্দু বলেন, ‘‘এ ভাবে পুরপ্রধান পুরসভা বন্ধ করতে পারেন না। আমরা গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছি। তা ছাড়া তলবিসভা হয়েছে বিধি মেনেই।’’ পুরপ্রধানের অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা। তৃণমূলের ঝালদা শহর কমিটির কার্যকরী সভাপতি তথা এ দিনের সভার আহ্বায়ক প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘অদ্ভুত যুক্তি। উনি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাইতে পারতেন। পুলিশ কর্মীরাও তো ছিলেন। আইনের ফাঁক বের করে এ ভাবে ক’দিন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে পারবেন?’’
আপাতত তাহলে হিসেবটা কী দাঁড়াল? পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘যত দূর শুনেছি ওঁরা পুরসভা চত্বরের মধ্যে এই সভা করেছেন। কিন্তু পুর-বিধিতে বলা রয়েছে, সভা করতে হবে পুরভবনে। সেই দিক থেকে এই সভার বৈধতা নেই।’’ পুরপ্রধান কি এ ভাবে ছুটি ঘোষণা করতে পারেন? জেলাশাসক বলেন, ‘‘পুরপ্রধান মনে করলে ছুটি ঘোষণা করতেই পারেন। কারন তিনি পুরসভার প্রধান।’’
বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে মহেন্দ্রবাবু জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy