Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

হঠাৎ ঝড়ে উড়ল চাল,ক্ষতি চাষে

এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ পুরুলিয়ার আকাশ অন্ধকার করে শুরু হয় ঝড়।

তছনছ: (উপরে)ঝড়ের দাপটে পড়েছে গাছ। পুঞ্চা থানার মুকুন্দপুরে। (নীচে বাঁ দিকে) উড়েছে চাল। মানবাজারের ধাদকিডি গ্রামে। (ডান দিকে) খুলে এসেছে মাথার উপরের ছাউনি। বাঁকুড়ার হিড়বাঁধের মলিয়ানে। নিজস্ব চিত্র

তছনছ: (উপরে)ঝড়ের দাপটে পড়েছে গাছ। পুঞ্চা থানার মুকুন্দপুরে। (নীচে বাঁ দিকে) উড়েছে চাল। মানবাজারের ধাদকিডি গ্রামে। (ডান দিকে) খুলে এসেছে মাথার উপরের ছাউনি। বাঁকুড়ার হিড়বাঁধের মলিয়ানে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৫:৫০
Share: Save:

গত বুধবার ‘আমপান’-এর প্রভাব তেমন দেখেনি পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। এক সপ্তাহ পরে বুধবার বিকেলের ঝড়-বৃষ্টি তছনছ করে দিল দুই জেলার নানা এলাকা। কয়েকদিন ভ্যাপসা গরমের পরে, এ দিন প্রায় ঘণ্টাখানেক তুমুল ঝড়বৃষ্টি হয়। পারদ কিছুটা নামলেও, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। তবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলেনি।

এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ পুরুলিয়ার আকাশ অন্ধকার করে শুরু হয় ঝড়। সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। পুরুলিয়া জেলার জাহাজপুর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের আবহাওয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা সুদীপ্ত ঠাকুর বলেন, ‘‘স্থানীয় ভাবে তৈরি মেঘ থেকে কালবৈশাখী হয়েছে। ঝড়ে আখ, ভুট্টা ও লম্বা গাছের ক্ষতি হয়েছে।’’ তিনি জানান, এ দিন বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার। বাঁকুড়া জেলায় ১৩.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ দিনের ঝড়ে পুরুলিয়ার সাউথলেক রোডে চলন্ত ট্রাকের উপরে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। তবে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। পুরুলিয়া-বরাকর রোডে চলন্ত ট্রাকের উপরে গাছ পড়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চালক ও খালাসি ঘটনায় জখম হয়েছেন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। রেনি রোডে একটি মোটরবাইকের শোরুমের সামনে ৬০ এ জাতীয় সড়কের পাশে থাকা একটি গাছ বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের উপরে ভেঙে পড়ে। ট্রান্সফর্মার-সহ বিদ্যুতের খুঁটি হেলে যায়। ঝড়বৃষ্টি থামতেই ব্যস্ত ওই রাস্তায় পুলিশি পাহারা বসানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা দেবকুমার দাঁ বলেন, ‘‘এই রাস্তা খুবই ব্যস্ত। বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।’’

জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানান, সেখানে বেশ কিছু গাছ পড়েছে। নষ্ট হয়েছে জানালার কাচ, চত্বরে থাকা ডাইনোসোরের মডেল। পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক তথা বিদায়ী পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘ঘণ্টাখানেকের ঝড়ে শহর কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে। একাধিক রাস্তায় গাছ পড়ার খবর মিলেছে। পুরসভার টিম প্রস্তুত রয়েছে। ঝড় থামতেই রাস্তায় নামা হয়েছে।’’ তিনি জানান, রাতের মধ্যেই রাস্তায় পড়া গাছ সরানোর চেষ্টা চলছে।

এ দিনের ঝড়ে পুঞ্চা থানার লাখরা গ্রামে একটি বাড়ির উপরে গাছ পড়ে। ওই থানারই বদড়া গ্রামে সৌরবাতি পড়েছে ঝড়ে। মানবাজার থানার ভালুবাসা ও কেন্দা থানার ভাদশা গ্রামেত মোড়ে গাছ উল্টে যাতায়াত ব্যাহত হয়েছে। মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালের ভিতর একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ উপড়ে এসেছে। নামোপাড়ায় বিদ্যুতের তার রাস্তার উপরে পড়ে যাতায়াত ব্যাহত হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আসেনি বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

ঝড়বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া শহর, বিষ্ণুপুর এবং খাতড়ার বিভিন্ন জায়গায়। বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার নানা এলাকা থেকে। এ দিনের ঝড়ে খাতড়ার লাড়াখাম গ্রামে শিমুল গাছ ভেঙে পড়ে একটি বাড়ির উপরে। বটগাছের ডাল ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হিড়বাঁধের মলিয়ান গ্রাম থেকেও ঝড়ে টিনের চালা উড়ে যাওয়ার খবর মিলেছে। খাতড়ার কুঁড়েবাকড়া গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল মাহালি, লক্ষ্মীকান্ত মাহালি, সঞ্জয় মাঝিরা বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরম ছিল দুপুরে। বিকেল ৪টে নাগাদ পশ্চিম আকাশে মেঘ করে আসে। তার পরেই শুরু হয় ঝড়।’’ সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘সাড়ে ৫টা নাগাদ ঝড়-জল থেমে যায়। বেরিয়ে দেখি, প্রায় এক দেড় কিলোমিটার দূরে টিন উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।’’

তিল ও আনাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কুঁড়েবাকড়া গ্রামের শ্যামল মাহাতো, অজিত গিরিরা। খাতড়া মহকুমার সহ কৃষি অধিকর্তা গণেশ সিং সর্দার বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টিতে আনাজ ও তিল চাষে কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE