Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বাঁকুড়া মেডিক্যালে জটিল অস্ত্রোপচার

রেফার নয়, সৌরভের প্রাণ বাঁচালেন শল্য চিকিৎসক

শিরদাঁড়া ভেদ করে ফুসফুসের ভিতরে গেঁথে গিয়েছে কাস্তের মুখ। ফুসফুস যত চলছে, পিঠে গেঁথে থাকা কাস্তেতে লেগে ভিতরের ক্ষতও ক্রমশ বাড়ছে। ওই অবস্থায় বিষ্ণুপুর হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে আসা ন’বছরের সৌরভ দাসকে দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠেছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০২
Share: Save:

শিরদাঁড়া ভেদ করে ফুসফুসের ভিতরে গেঁথে গিয়েছে কাস্তের মুখ। ফুসফুস যত চলছে, পিঠে গেঁথে থাকা কাস্তেতে লেগে ভিতরের ক্ষতও ক্রমশ বাড়ছে। ওই অবস্থায় বিষ্ণুপুর হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে আসা ন’বছরের সৌরভ দাসকে দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠেছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

এই ধরনের ‘কার্ডিও থোরাসিক সার্জারি’ করার মতো পরিকাঠামোই নেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে। নেই ফুসফুসের চলাচল বন্ধ করে রাখার ‘হার্ট-লাং’ মেশিনও! অথচ চিকিৎসকেরা বুঝতে পারছিলেন, এখনই অস্ত্রোপচার না করলে নয়। আরও বড় হাসপাতালে রেফার করার সময়ও হাতে নেই। এ রকমই জটিল পরিস্থিতিতে প্রায় একশো শতাংশ ঝুঁকি নিয়েই সৌরভের অস্ত্রপচার শুরু করেছিলেন শল্য চিকিৎসক তথা বাঁকুড়া মেডিক্যালের কার্ডিও থোরাসিক বিভাগের প্রধান দেবীপ্রসন্ন ঘোষাল। টানা এক ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে সৌরভ পেল নতুন জীবন।

বিষ্ণুপুরের তালড্যাংরা গ্রামে বাড়ি সৌরভের। বৃহস্পতিবার সকালে পিঠোপিঠি দুই ভাই খেতে সর্ষে কাটতে গিয়েছিল। সেই সময়ে খেলতে গিয়ে বেকায়দায় কাস্তে পিঠে গেঁথে যায় সৌরভের। তাকে উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, পিঠ ভেদ করে কাস্তে ওই বালকের ফুসফুসের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ওই অস্ত্রোপচার বিষ্ণুপুর হাসপাতালে করা সম্ভব নয়। চিকিৎসকেরা বুঝেছিলেন, কাস্তে বের করে দিলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরনোর সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করেই দ্রুত সৌরভকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রেফার করে দেওয়া হয়।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে পৌঁছনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌরভের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। রাতে তাকে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছিল। শল্যচিকিৎসক দেবীপ্রসন্নবাবু শুক্রবার বলেন, “সৌরভ এখন অনেকটাই ভাল রয়েছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।’’ তিনি জানান, কাস্তের ফলা সৌরভের ফুসফুসের দুই-তৃতীয়াংশ ভাগ পর্যন্ত গেঁথে গিয়ে ফুটো করে দিয়েছিল। ফুসফুস যত চলছিল, ততই ফলায় ঘষা লেগে ঘা বেড়ে চলেছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই ধরনের অস্ত্রোপচারে হার্ট-লাং মেশিনের সাহায্যে শরীরের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কাজ বন্ধ করে যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাস সচল রাখা হয়। তবে, বাঁকুড়া মেডিক্যালে ওই যন্ত্র না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ছেলে বিপদমুক্ত হওয়ায় হাসপাতালের ডাক্তারদের বারবার ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সৌরভের বাবা অচিন্ত্য সাউ। তাঁর কথায়, “ডাক্তারবাবুরা অসাধ্য সাধন করেছেন বলেই ছেলেকে ফিরে পেলাম। যমের দুয়ার থেকে ওঁরাই আমার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন।’’

সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে ভাবে বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা সৌরভকে রেফার না করে নিজেরাই অস্ত্রোপচার করে সারিয়ে তুলেছেন, তাতে উচ্ছ্বসিত রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার চিকিৎসা যাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, সে ব্যাপারে সরকার নানা ভাবেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের উদ্যোগী হওয়াটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাঁরা যে রেফার করে দায় সারছেন না, সেটাই আমাদের কাছে সুখবর। পরিস্থিতি ক্রমশ আরও বদলাবে, কলকাতামুখী হওয়া বন্ধ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surgent Life
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE