Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আড়শায় ঘোরালো যুগ্ম বিডিও-শাসকদলের বিবাদ, সভা করে হুঁশিয়ারি

কাজ বয়কট সভাপতি, সহ-সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষের

যুগ্ম-বিডিও’র সঙ্গে শাসকদলের বিবাদ ক্রমেই ঘোরালো আকার নিচ্ছে পুরুলিয়ার আড়শায়। প্রথমে আড়শার যুগ্ম-বিডিও স্বর্ণকমল চৌধুরী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষের স্বামী অফিস চত্বরে তাঁকে হেনস্থা করেছেন। তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করা হয়েছে। যুগ্ম-বিডিও পুলিশের কাছে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে শাসকদলের অন্দরে।

ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ তৃণমূলের। সোমবারের নিজস্ব চিত্র

ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ তৃণমূলের। সোমবারের নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৮
Share: Save:

যুগ্ম-বিডিও’র সঙ্গে শাসকদলের বিবাদ ক্রমেই ঘোরালো আকার নিচ্ছে পুরুলিয়ার আড়শায়।
প্রথমে আড়শার যুগ্ম-বিডিও স্বর্ণকমল চৌধুরী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষের স্বামী অফিস চত্বরে তাঁকে হেনস্থা করেছেন। তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করা হয়েছে। যুগ্ম-বিডিও পুলিশের কাছে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে শাসকদলের অন্দরে। মিথ্যা মামলায় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের স্বামীকে তিনি ফাঁসিয়েছেন এবং ওই ‘মিথ্যা’ অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে— এই জোড়া দাবিতে প্রশাসনের বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূল।
গত শুক্রবার থেকেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে আড়শা ব্লক অফিস চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচিও শুরু হয়েছে। ব্লক অফিস চত্বরে রীতিমতো ম্যারাপ বেঁধে যুগ্ম বিডিও এবং বিডিওর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছেন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। এই কর্মসূচিতে জেলা নেতারাও যোগ দিয়েছেন। তবে, প্রতিবাদ কেবলমাত্র বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যেই থেমে নেই। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষেরা অফিস বয়কটও শুরু করেছেন শুক্রবার থেকে। তাঁদের একটাই দাবি, যুগ্ম-বিডিও এই মিথ্যে অভিযোগ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। এর ফলে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে। প্রশাসন-শাসকদল এই সংঘাতকে ঘিরে গোটা আড়শায় এখন টানটান উত্তেজনা।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ জুন। স্বর্ণকমলবাবুর অভিযোগ, একটি নিয়োগকে কেন্দ্র করে কর্মাধ্যক্ষের স্বামী বিদ্যাধর মাহাতো তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এই নিয়োগের বিষয়টি জেলা দেখছে। তাঁর কিছু করার নেই। তবু ওই ব্যক্তির পক্ষ থেকে চাপ অব্যাহত ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে যুগ্ম-বিডিও জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বিদ্যাধরবাবু তাঁকে দোতলায় কর্মাধ্যক্ষের চেম্বারে ডেকে পাঠানোয় তিনি যেতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, যা বলার বিডিও বা সভাপতির ঘরে বলতে হবে। এতেই ওই কর্মাধ্যক্ষের স্বামী খেপে গিয়ে নীচে নেমে এসে তাঁকে হেনস্থা করার পাশাপাশি হুমকি দেন। পরে থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করনে যুগ্ম-বিডিও। সে দিনের ঘটনার পরে এলাকায় এ প্রশ্নও ওঠে, কর্মাধ্যক্ষের স্বামী পঞ্চায়েত সমিতিতে কী করছিলেন?

অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা শেখ সালে মহম্মদ জানিয়েছিলেন, বিদ্যাধরবাবু মোটেও যুগ্ম-বিডিওকে হেনস্থা করেননি, শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করেননি। দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল মাত্র। সোমবারও সহ-সভাপতি দাবি করেন, ‘‘সামান্য বিবাদের ঘটনাতেও আমাদের দলের কর্মাধ্যক্ষের স্বামীর বিরুদ্ধে যুগ্ম-বিডিও পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করলেন। এর বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন।’’

আড়শা ব্লক অফিস চত্বরে দলের পক্ষ থেকে যে ব্যানার টাঙানো হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে, ‘যুগ্ম-বিডিও স্বর্ণকমল চৌধুরীর দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি’। বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে এ দিন জেলা তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি নিজেই অভিযুক্ত বিদ্যাধর মাহাতোর হয়ে সওয়াল করেন। নবেন্দুবাবু বলেন, ‘‘বিদ্যাধর কী এমন করেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে হবে! সেদিন সকাল থেকেই উনি পঞ্চায়েত অফিসে ছিলেন। সেদিন বিদ্যাধর আদৌ যুগ্ম-বিডিওকে দোতলায় ডাকেননি, ডেকেছিলেন সভাপতি ও সহসভাপতি।’’ সহ-সভাপতি সালে মহম্মদ এ দিন বলেন, ‘‘সেদিন প্রচুর মানুষ ত্রিপল চাইতে ব্লকে হাজির হয়েছিলেন। ত্রিপল দেওয়ার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেকথা আলোচনার জন্যই যুগ্ম-বিডিওকে ডাকা হয়েছিল। অন্য কোনও কারণে নয়। অথচ উনি বিষয়টাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন।’’

মঞ্চ থেকে নবেন্দুবাবু আরও হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কে এই বিদ্যাধর মাহাতো? শুনে রাখুন, আমরা ওঁকে জিতিয়ে নিয়ে আসব পঞ্চায়েত সমিতিতে। তখন এই বিদ্যাধরের কথাই শুনতে হবে!’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মা-মাটি-মানুষের সরকার। কোনও মিথ্যে মামলার পক্ষে থাকি না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে গেলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই চলতে হবে।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা শিরোমণি কুমারের আবার দাবি, বিডিও এবং যুগ্ম-বিডিওর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সহ-সভাপতি বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে আমাদের কেউই পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে যাচ্ছেন না। যতক্ষণ না যুগ্ম-বিডিও মামলা প্রত্যাহার করছেন, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।’’

আড়শার বিডিও মাধব বিসাই এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যুগ্ম-বিডিও স্বর্ণকমলবাবুর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘যা ঘটেছে আমি পুলিশকে জানিয়েছি। এ বার পুলিশ কী মামলা দেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য দলের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আড়শার বিডিও এবং যুগ্ম-বিডিওর একগুঁয়েমির জন্যই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে, এই সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে।’’

জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে, নিচুতলার কর্মী-অফিসারদের একাংশের আশঙ্কা, আড়শা যা নজির রাখল, তাতে এর পরে শাসকদলের বিরুদ্ধে কোনও কথাই কখনও তাঁরা বলতে পারবেন না। তা হলেই হয়তো শাসকদলের রোষে পড়তে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE