বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
বাঁকুড়া তাঁর চেনা। সংগঠন সাজাতে তাঁর অসুবিধা হবে না। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ফের জঙ্গলমহলের দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে এই জেলায় প্রথম এসে শনিবার এমনই মন্তব্য করলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। যাঁরা ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য দলীয় কর্মীদের সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশও দিলেন তিনি।
কয়েকদিন আগে শালতোড়ায় রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তৃণমূলের সালমা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান কাজল মণ্ডল। তাঁর বাড়িতে গিয়ে শুভেন্দু সান্ত্বনা জানিয়ে দলীয় ভাবে অর্থ সাহায্য করেন। তারপর শালতোড়ার পাবড়া মোড়ে একটি সভাও করেন তিনি।
লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া জেলার দু’টি কেন্দ্র— বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। লোকসভার ফলাফলের নিরিখে জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের থেকে অনেকটা এগিয়ে বিজেপি।
এত দিন পুরুলিয়ার সঙ্গে বাঁকুড়ার দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভেন্দুকে। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে দু’ভাগ করে দুই আলাদা সভাপতিও করা হয়েছে।
দল সূত্রের খবর, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাঁকুড়ায় সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দুই। সেই সূত্রে এই জেলার সঙ্গে তিনি পরিচিতও। তবে তারপর থেকে তিনি আর এই জেলায় তেমন আসেননি। তাই এই পরিস্থিতিতে নতুন করে ফের বাঁকুড়ার দায়িত্ব পাওয়ার পরে জেলায় এসে তিনি কী বার্তা দেন, সে দিকে তাকিয়ে ছিলেন জেলা নেতা-কর্মীরা।
এ দিন দুপুরে বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে এসে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য সাক্ষাৎ করেন শুভেন্দু। তারপরই রওনা হন শালতোড়ার উদ্দেশে। যাওয়ার আগে শুভেন্দু বলেন, “এটা আমার চেনা জায়গা, সংগঠন ঠিক সাজিয়ে নেব।”
কাজলের স্ত্রী চন্দনা বর্তমানে শালতোড়ার সালমা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা। দল সূত্রের খবর শুভেন্দু তাঁকে চাকরির প্রতিশ্রুতিও দেন। পরে তিনি পাবড়া মোড়ে সভা করেন। সেখানে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন, “যাঁরা ভুল বুঝে চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনুন। তাঁদের বোঝান বিজেপি দলটা কেমন।” লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি-তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গণ্ডগোল অব্যাহত। বিজেপি কর্মী খুনের অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনই তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় দখল করে নেওয়া, তাদের কর্মীদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে।
সভায় শুভেন্দু বলেন, “হিংসা অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা ফের দুশোর বেশি আসন নিয়ে ফিরে আসব ক্ষমতায়।” বিজেপির জয়ের জন্য সিপিএমকেই দায়ী করে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, “সিপিএমের ভোট গিয়েছে বিজেপিতে। সিপিএমের হার্মাদরাই এখন গেরুয়া হয়ে গিয়ে মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে।”
শুভেন্দুর বক্তব্যকে কটাক্ষ করে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র পাল্টা দাবি করেন, “তৃণমূল দলটাই কর্পূরের মত উবে যাচ্ছে। জেতা তো দূরের কথা আগামী বিধানসভা ভোট পর্যন্ত এই দলটার অস্তিত্ব থাকবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।”
তাঁর আরও দাবি, জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলেরই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হচ্ছে। আর দোষ চাপাচ্ছে বিজেপির উপরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy