পঞ্চায়েতে ভোট হয়নি জেলার অনেক জায়গায়। আর সেই জন্য লোকসভার আগে দলের সংগঠনের ভিত কতটা মজবুত, সেটা জরিপ করা যায়নি। লোকসভা ভোটে জেলার বারোটি কেন্দ্রে হারের পরে এমন কথাই বলছেন তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ।
গত বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়া জেলার ফলে দল যে খুশি নয়, সে কথা জেলায় এসে অনেক বার বলে গিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। সে বার জেলার বারোটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটি তাদের হাতছাড়া হয়। জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতে, জেলায় তৃণমূলের সংগঠন যে দুর্বল হচ্ছে তার আভাস ওই বিধানসভা ভোটেই মিলেছিল।
বিধানসভার দু’বছর পরে পঞ্চায়েত ভোট। তাতে দেখা গিয়েছিল, শাসকদলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা না পড়ায় পুরো বিষ্ণুপুর মহকুমায় ভোটই হয়নি। বাঁকুড়া সদর মহকুমার অনেক আসনেও বিরোধী প্রার্থী ছিলেন না। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, শাসকদল মনোনয়নে বাধা দিয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ গোড়া থেকেই অস্বীকার করে এসেছে তৃণমূল। তবে খাতড়া মহকুমার অনেক আসনে ভোট হয়েছিল। আর সেখানকার জঙ্গলমহলে মাথাচাড়া দিতে দেখা গিয়েছিল বিজেপিকে।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “পঞ্চায়েতে জেলায় সার্বিক ভাবে ভোট হলে সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলি আমাদের নজরে আসত। লোকসভা ভোটের আগে সেই সমস্ত দুর্বলতা মিটিয়ে নতুন করে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হতে পারতাম। কিন্তু জেলার বড় অংশে ভোট না হওয়ায় সেই সুযোগটাই পাইনি।” জেলা তৃণমূলের আর এক নেতা দাবি করেন, “পঞ্চায়েত ভোটের ফল থেকেই বোঝা উচিত ছিল, বামফ্রন্টের ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে পড়েছে। বিরোধী হিসেবে উঠে আসছে বিজেপি। অথচ গেরুয়া শিবিরের সংগঠন নেই ভেবে ওদের আমরা তেমন গুরুত্ব দিইনি। এটাই মস্ত ভুল হয়েছিল।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ, রাইপুর, তালড্যাংরা— তিনটি বিধানসভাতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটে রানিবাঁধে ১৫,৮১৪ ভোটে, রাইপুরে ৩,৩৫১ ভোটে ও তালড্যাংরায় ১৭,২৬৮ ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে গিয়েছে তারা। গত বিধানসভা ভোটে শালতোড়া, ওন্দা, কোতুলপুর ও ইন্দাসেও জয়ী হয় তৃণমূল। লোকসভা ভোটে শালতোড়ায় ১৫,০৫৬, ওন্দায় ২৬,৩৭৩, কোতুলপুরে ৯,০৯৯ ও ইন্দাসে ১৩,৫৯৩ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে তারা।
গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার বাঁকুড়া, ছাতনা, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে হারে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভাকেন্দ্রগুলিতে হারের ব্যবধান আরও বেড়েছে। লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্রে ৪৬,৭৭৬ ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। বড়জোড়ায় পিছিয়ে থাকার ব্যবধান ১১,৬২০ ভোটের। বিষ্ণুপুরে ২২,৮১৮। সোনামুখীতে ২৩,৮৩৫।
লোকসভা নির্বাচনের পরেই বাঁকুড়া জেলার সংগঠনে বিপুল বদল এনেছে রাজ্যের শাসকদল। জেলার দু’টি লোকসভাকেন্দ্র বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরকে আলাদা সাংগঠনিক জেলা হিসেবে গড়ে দু’জায়গায় দু’জন সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে পোড়খাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে। দায়িত্ব পেয়ে ইতিমধ্যেই জেলায় ঘুরে গিয়েছেন শুভেন্দু। প্রথম বার এসেই জানিয়েছিলেন, সংগঠন সাজিয়ে নেবেন।
আজ, রবিবার ফের জেলায় এসে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মীদের সঙ্গে পর্যালোচনায় বসার কথা রয়েছে তাঁর। বিষ্ণুপুরের যদুভট্ট মঞ্চে তৃণমূলের নির্বাচনী পর্যালোচনামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় আসতে বলা হয়েছে বাঁকুড়ার জেলার অধীনে বিষ্ণুপুর লোকসভার ছ’টি বিধানসভার সমস্ত বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যদের। বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, টাউন সভাপতি, অঞ্চল কমিটির নেতাদেরও ডাকা হয়েছে। থাকবেন পুরপ্রধান ও কাউন্সিলরেরাও।
তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী শনিবার আবার তিনি জেলায় আসতে পারেন। বসতে পারেন বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায়। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি বুথে বুথে পৌঁছে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া।” দলের বাঁকুড়া সংসদীয় জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “মানুষ তৃণমূলের পক্ষেই আছেন। কেন ফলাফল এমন হল তা জানতে ব্লকে ব্লকে পর্যালোচনা হচ্ছে।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র অবশ্য বলছেন, “পঞ্চায়েত ভোট না করতে দিয়ে তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছে ওরা গুন্ডাতন্ত্রে বিশ্বাস করে। মানুষ লোকসভা ভোটে ওদের যোগ্য জবাব দিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy