এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। তার উপরে সরকারি দফতরগুলি দীর্ঘ সময় ধরে লক্ষাধিক টাকার কর বকেয়া রাখায় কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রঘুনাথপুর পুরসভা। বকেয়া কর আদায়ে সরকারি দফতরগুলিকে ইতিমধ্যেই তাগাদা দেওয়া শুরু করেছে পুরসভা।
রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরএলাকায় ১৭টি দফতরের অফিস রয়েছে। প্রতিটি দফতরই কমবেশি অনেক টাকার কর বকেয়া রেখেছে। কর আদায়ের জন্য তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’ পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, সব মিলিয়ে মোট বকেয়া করের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা।
বস্তুত বেসরকারি ক্ষেত্র এবং সরকারি দফতরগুলির করই মূল আয় রঘুনাথপুর পুরসভার। বেসরকারি কর আদায়ে আগেই উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। মাইক নিয়ে প্রচার করে বকেয়া কর মেটানোর আবেদন জানানো হয়। পরের ধাপে তাগাদা শুরু হয় সরকারি দফতরগুলির কাছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, বকেয়া করের তালিকায় একেবারে প্রথমেই রয়েছে রঘুনাথপুর ১ ব্লক অফিস। গত ১৫ বছর ধরে ওই অফিস কর মেটায়নি। ২৯ লক্ষেরও বেশি টাকার কর বকেয়া তাদের। তালিকায় দ্বিতীয় সেচ দফতর। গত ১৯ বছর ধরে তাদের বকেয়ার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে সাড়ে আট লক্ষ টাকায়। গত ১১ বছর ধরে বকেয়া পৌনে চার লক্ষ টাকা মেটায়নি প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। ১৭ বছর ধরে প্রায় দু’লক্ষ টাকা কর বকেয়া রেখেছে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। কর মেটায়নি আদালত, থানা, বনদফতর, পূর্ত, ভূমি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য-সহ প্রায় কোনও দফতরই।
পুরসভার দাবি, সরকারি দফতর করের টাকা বকেয়া রাখায় সেই প্রভাব পড়ছে এলাকার উন্নয়নে। বিদ্যুতের বিল, ঠিকা শ্রমিকদের মজুরি, তেলের খরচ-সহ বিভিন্ন কিছু মিলিয়ে রঘুনাথপুর পুরসভার বার্ষিক খরচ প্রায় ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। বার্ষিক আয় ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। পুরপ্রধান ভবেশবাবু বলেন, ‘‘আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। কোনও মতে রাজ্য থেকে পাওয়া পুরসভার নিজস্ব তহবিল দিয়ে ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। কিন্তু এই ভাবে চালানো সম্ভব নয়।’’ পুরপ্রধানের দাবি, সরকারি দফতরগুলি সময় মতো কর মেটালে সেই টাকায় এলাকায় আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্য পুরসভার তুলনায় কাউন্সিলরদের ভাতার নিরিখে রঘুনাথপুর অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু করের টাকা না পাওয়ায় ভাতা বাড়ানোর কোনও উপায়ই কার্যত নেই আমাদের।’’
কিন্তু সরকারি দফতর কেন কর বকেয়া রাখছে? রাজ্য থেকে জেলার দফতরগুলিতে সময় মতো টাকা না আসাতেই কর বকেয়া আছে বলে দাবি করেছে বেশ কিছু দফতর। বন, স্বাস্থ্য এবং সেচ দফতরের দাবি, মিসলেনিয়াস ফান্ড-এ টাকা এলে তা দিয়ে দফতরগুলি কর বা ভাড়া মেটায়। কিন্তু সেই টাকা প্রায় কখনওই সময় মতো আসে না বলে দফতরগুলির কর্তাদের একাংশের দাবি।
সরকারি দফতরগুলির আধিকারিকদের একাংশ জানান, বর্তমানে কর মেটানো হয় ট্রেজারির মাধ্যমে। পদ্ধতিগত ভাবে সেখানেও কিছুটা দেরি হয়। চিঠি পেয়ে থানা, বন দফতর, সেরিকালচার ও সাব রেজিস্টি অফিস কর দিয়েছে। পূর্ত দফতরের রঘুনাথপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy