কর কাঠামোর সংস্কার করে শীঘ্রই নতুন পুরকর ঘোষণা করতে চলেছে পুরুলিয়া পুরসভা। এতে আগের তুলনায় করের বোঝা কিছুটা বাড়তে চলেছে। তবে তা সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরকর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, শহরের উন্নয়নের স্বার্থেই দেড় দশক পরে এই পুরসভা কর বাড়াচ্ছে।
শেষবার পুরসভার তরফে পুর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কর নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০৩-’০৪ আর্থিক বছরে। যদিও পুরসভার বিধি অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন করে কর নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু, নানা কারণে পুরুলিয়া পুরসভা মাঝে এই দেড় দশকে পুরকরে পরিবর্তন আনেনি। কিন্তু, দিন দিন পুরসভার খরচের বহর বেড়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পুরসভা চালাতে আয় বাড়ানোর পথ খুলতেই নয়া কর কাঠামো চালু করা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শেষবার অর্থাৎ ২০০৩-’০৪ আর্থিক বছরে যখন কর কাঠামো ঠিক করা হয়েছিল, সে সময় পুরএলাকায় হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ছিল কমবেশি ১২-১৩ হাজার। মাঝের এই সময়ে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি। পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘মাঝের এই সময়কালে শহরের পরিধি বেড়েছে। নিত্য নতুন বাড়িও গড়ে উঠেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন বাজার, শপিংমল, বহুতল আবাসন, বেসরকারি স্কুল, হোটেল, অতিথিশালা ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। অথচ বিধি অনুযায়ী কর নির্ধারিত না হওয়ায় এবং এই নয়া নির্মাণগুলির এত দিন মূল্যায়ণ না হওয়ায় পুরসভার কোনও আয় বাড়েনি।’’ তিনি জানান, তবে নতুন নির্মাণগুলির গত কয়েক মাসে মূল্যায়ণ হয়ে গিয়েছে। কর জমা দেওয়ার চিঠি পাঠানোও শুরু হয়েছে। কারও আপত্তি থাকলে তা নিয়ে শুনানির সুযোগও দিয়েছে পুরসভা।
দিন দিন আকারে আয়তনে বেড়ে চলা এই জেলা সদরের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন করতে গেলে আয় না বাড়িয়ে পুরসভার পক্ষে আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলে পুরকর্তারা জানাচ্ছেন। তাই পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসে সামিমদাদ কর কাঠামো পুর্নমূল্যায়ণের কাজে উদ্যোগী হন। এত দিন কর কাঠামোর পুর্নমূল্যায়ণ হয়নি কেন? পুরপ্রধানের সংক্ষিপ্ত জবাব— ‘‘নানা কারণে হয়নি।’’
পুরপ্রধান জানান, এই কর নির্ধারণের বিষয়টি দেখে ওয়েস্টবেঙ্গল ভ্যালুয়েশন বোর্ড। এই বোর্ডই পুরুলিয়া পুরসভার সহায়তায় এই কাজ করেছে। কী ভাবে নয়া কর কাঠামো ধার্য করা হয়েছে? পুরপ্রধান জানান, কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বোর্ডের যে বিধি রয়েছে তা মেনেই সব করা হয়েছে। যে বাড়িটির কর নির্ধারণ করা হচ্ছে, সেটি কেমন বাড়ি অর্থাৎ পাকা না আধপাকা, টালির ছাউনি দেওয়া না অ্যাসবেস্টর্সের ছাউনি দেওয়া, কতখানি জায়গা নিয়ে তৈরি, বাড়িটি সাধারণ নাকি মার্বেল পাথর বসানো অথবা মোজাইক করা বা বাড়িটি ক’তলার ইত্যাদি দেখা হয়। এ ছাড়া, দেখা হয় বাড়িটির অবস্থান শহরের কোন এলাকায়।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, বিদ্যুতের বিল ইত্যাদি নানা খাতে পুরসভা চালাতে প্রতি মাসে আশি থেকে নব্বই লক্ষ টাকার প্রয়োজন। অথচ পুরসভার আয় খরচের অর্ধেকও নয়। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে পর্যন্ত পুরসভার প্রতিদিন আয় ছিল গড়ে তিরিশ হাজার টাকার মতো। সেই অঙ্ক এখন এক লক্ষ পঁচিশ-ছাব্বিশ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এরপরেও অনেকটাই ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। এই টাকার সংস্থান না করতে পারলে পুরসভা চালানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।’’
ইতিমধ্যেই ওয়েস্টবেঙ্গল ভ্যালুয়েশন বোর্ড নয়া কর কাঠামোর তালিকা পুরসভার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই তালিকা পুরভবনে টাঙানো হয়েছে। পুরপ্রধান জানান, ওই তালিকা ধরে বাসিন্দাদের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। যা পুরসভা খোলা খাতা হিসেবে নাম দিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পরে নয়া কর নিয়ে কোনও বাসিন্দার বক্তব্য থাকলে, তিনি পুরসভায় হাজির হয়ে তাঁর মত জানাতে পারেন। একই সঙ্গে শহরের বেসরকারি স্কুলগুলিকেও করের আওতায় আনা হয়েছে। এতদিন তা ছিল না। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য দৈনিক আয় তিন লক্ষে পৌঁছনো। এ ছাড়া পার্কিং এরিয়া তৈরির ভাবনাও পুরসভার রয়েছে। তা থেকেও আয় হবে পুরসভার।’’
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিষেবা দেওয়ার জন্যই কর নেওয়া হয়। কিন্তু এই শহরে পুরপরিষেবা কোথায়? কর নিয়ে লোকজনের প্রতিক্রিয়া নিচ্ছি।’’ যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বিভাস দাসের দাবি, সাধ্যমতোই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সিপিএম কাউন্সিলর মিতা চৌধুরী বলেন, ‘‘নতুন কর নিয়ে এখনও কোনও আপত্তি শুনিনি। তবে মাত্রাতিরিক্ত কর বসানো হলে, অবশ্যই প্রতিবাদ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy