বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের জিয়াবান্দি গ্রামের স্কুলে। ছবি: শুভ্র মিত্র
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বদলির নির্দেশ ঘিরে অসন্তোষ দানা বেধেছে বাঁকুড়ার স্কুল শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জয়পুর চক্রের অফিসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষকেরা। যার জেরে দিনভর অফিসের বাইরেই থাকতে হল জয়পুর অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ও কর্মচারীদের।
একই দাবিতে গঙ্গাজলঘাটির ঘনশ্যামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন স্কুলের পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা। গোলমালের খবর এসেছে বিষ্ণুপুরের জিয়াবান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাড়িশোল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পানশিউলি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে পুলিশ যায়।
বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাঁকুড়া জেলা থেকে ৫১৯ জন শিক্ষককে তাঁদের সার্কেলের মধ্যেই বদলি করা হচ্ছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জয়পুর উত্তর চক্রের সভাপতি পার্থসারথী দে দাবি করেছেন, “জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে উদ্বৃত্ত শিক্ষকদের সমন্বয়ের নামে যে বদলির নির্দেশ এসেছে, তা যথাযথ নয়। অনেক স্কুলে এর ফলে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। তাতে স্কুলে স্কুলে সমস্যা তৈরি হবে। শিক্ষকদের বদলির চুলনায় প্রধান শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ করা জরুরি। তাই প্রতিবাদ জানাতে অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি নেওয়া হয়।’’ তাঁর দাবি, শিক্ষক সংগঠনগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে তারপর বদলির তালিকা প্রস্তুত তৈরি করতে হবে। তা না হলে শিক্ষকদের আন্দোলন বৃহত্তর আকার নেবে।
যদিও বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বদলির পরে কোনও স্কুলে যদি শিক্ষকের সঙ্কট দেখা দেয়, তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানান। সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে কর্তৃপক্ষকে জানাব। কিন্তু, বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করা উচিত নয়।’’
জয়পুরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস সূত্রে জানা যায়, জয়পুর ব্লকের দু’টি চক্র মিলিয়ে মোট ১৬১টি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। সেখানে পড়ান ৪০৬ জন শিক্ষক। তার মধ্যে ছ’জন শিক্ষকের বদলির নির্দেশ এসেছে নিজেদের চক্রেই। তা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ। এ দিন সকালেই তাঁরা জড়ো হন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসের সামনে। ঝুলিয়ে দেওয়া হয় দরজার তালা।
জয়পুরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বিষ্ণুপদ বাগদি-সহ কর্মীরা অফিসের ভিতরে প্রথমে ঢুকতে পারেননি। বিষ্ণুপদবাবু বলেন, “গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা আমি ব্লক প্রশাসনকে জানাই।’’ ঘণ্টাদুয়েক পরে বিডিও (জয়পুর) বিট্টু ভৌমিক বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপরেই অফিসের তালা খুলে দেওয়া হয়। জয়পুর এলাকার শিক্ষকেরা বিক্ষোভে যোগ দেওয়ায় এ দিন ওই ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা ব্যাহত হয়। মিড-ডে মিলও বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ।
গঙ্গাজলঘাটির ঘনশ্যামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের দাবি, শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৯৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলে রয়েছেন চার জন শিক্ষক। এই পরিস্থিতিতে দু’জন শিক্ষককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে অন্যত্র। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ‘‘তাহলে স্কুল চলবে কী করে?’’
শিক্ষকেরা স্কুলে ঢুকতে পারেননি। বন্ধ ছিল পড়াশোনা, মিড-ডে মিলও। জিয়াবান্দিতে ১৫২ জন পড়ুয়ার জন্য পাঁচ জন শিক্ষক আছেন। তার মধ্যে এক জনের বদলির নির্দেশের প্রতিবাদে গ্রামের মহিলারা বিক্ষোভ দেখান। স্কুলের টিচার ইনচার্জ লুলু সরেন বলেন, ‘‘বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখালে কী করব?’’
তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে সেই দলেরই শিক্ষকদের সংগঠন আন্দোলনে নামল কী করে— প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গৌতম গড়াই বলেন, ‘‘জয়পুরে কী ঘটেছে জানি না। তবে, শিক্ষকেরা অফিসে তালা দিয়ে থাকলে ঠিক কাজ করেননি। বদলির নির্দেশ ঘিরে কিছু কিছু জায়গায় ক্ষোভ রয়েছে। তবে, তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy