Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে মারধর

থ্যালেসেমিয়ায় আক্রান্ত এক ছাত্রকে মারধর করার অভিযোগ উঠল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একদিন হাসপাতালে কাটানোর পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র। ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর হাইস্কুলের ওই ঘটনায় সোমবারই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ছাত্রের বাবা। মঙ্গলবার স্কুলে তদন্তে গিয়েছিল পুলিশের একটি দলও।

ময়ূরেশ্বরের ঘোড়দহ গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ অভিজিৎ। মঙ্গলবার সকালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ময়ূরেশ্বরের ঘোড়দহ গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ অভিজিৎ। মঙ্গলবার সকালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

থ্যালেসেমিয়ায় আক্রান্ত এক ছাত্রকে মারধর করার অভিযোগ উঠল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একদিন হাসপাতালে কাটানোর পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র। ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর হাইস্কুলের ওই ঘটনায় সোমবারই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ছাত্রের বাবা। মঙ্গলবার স্কুলে তদন্তে গিয়েছিল পুলিশের একটি দলও।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ৫ জুলাই ব্যাঙ্কের পাসবই করার জন্য ওই স্কুলের অফিসঘরে একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের আধার কার্ডের নম্বর নথিভুক্তির কাজ হচ্ছিল। তার জন্য অফিসঘরের সামনে ছাত্রছাত্রীদের জটলা হচ্ছিল। তখন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিকলাল দাস লাঠি নিয়ে জটলার দিকে তেড়ে যান। ছাত্রছাত্রীরা ছুটে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেই সময় শৌচাগার থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসঘরের দিকে যাচ্ছিল অভিজিৎ দে নামে থ্যালেসেমিয়া আক্রান্ত ছাত্রটি। অভিযোগ, হাতের কাছে তাকে পেয়েই মানিকলালবাবু বেধড়ক লাঠি পেটা করেন।

পরিবারের দাবি, বাড়িতে ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে অভিজিৎ। রাতেই তাকে ভর্তি করানো হয় সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। পরের দিন ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি ফিরিয়ে আনার পরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। গত সোমবার তাকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়। আগামী ১৫ জুলাই অভিজিৎকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রক্ত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ওই চিকিৎসক। তার পরেই থানায় মানিকবাবুর বিরুদ্ধে একটি জিডি করে অভিজিতের পরিবারে। মঙ্গলবার স্থানীয় ঘোড়দহ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তখনও কেমন যেন আচ্ছন্নের ঘোরে রয়েছে ওই ছাত্র। তারই মধ্যে কোনও রকমে জানায়, ‘‘সে দিন আমি কোনও গণ্ডগোল করিনি। স্যারকে বলেছিলাম, আমি অসুস্থ। কিন্তু উনি কোনও কথা না শুনে আমাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করেন। বাড়ি ফিরে বমি করি। শরীর দুর্বল। এখনও সব সময় বমি পাচ্ছে।’’

ছেলেটির বাবা বামাপদবাবু জানান, মাত্র চার বছর বয়স থেকেই তাঁর ছেলের থ্যালেসেমিয়া ধরা পড়ে। প্রতি তিন মাস অন্তর রক্ত দিতে হয়। সব ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে রক্ত মেলে না। কিনে দিতে হয়। গত মাসেই রক্ত দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে আরও দু’মাস পরে রক্ত লাগার কথা। ‘‘কিন্তু ডাক্তারবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, এই পরিস্থিতির জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছে। তাই এখনই রক্ত দিতে হবে। আমি সামান্য গ্যাস ওভেন সারাই করে সংসার চালাই। এখন ছেলেকে নিয়ে কী করব, ভেবে পাচ্ছি না,’’— বলছেন বামাপদবাবু। তাঁর অভিযোগ, প্রথম দিকে ফোনে ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে মারধরের কথা স্বীকারই করতে চাননি মানিকবাবু।

মানিকবাবু দাবি করেছেন, ছেলেটির অসুস্থতার কথা তাঁর জানা ছিল না। ছাত্রটিকে বেধড়ক লাঠিপেটাও করা হয়নি। অনেক ছাত্রের মাঝে অভিজিতের পায়ে একটা বাড়ি পড়েছে মাত্র বলে তাঁর দাবি। মানিকবাবুর বক্তব্য, ‘‘তবু বিষয়টি দুঃখজনক। খবর পাওয়ার পরেই আমরা হাসপাতাল এবং ছেলেটির বাড়িতে গিয়েছি।’’ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি গৌরীশঙ্কর মণ্ডলের আশ্বাস, ছেলেটির চিকিৎসার জন্য তাঁরা সব রকম সাহায্য করবেন। জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক লক্ষীধর দাস (শিক্ষা) বলেন, ‘‘আমি প্রশিক্ষণে বাইরে রয়েছি। তাই খোঁজ না নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

ছাত্রদের মেরে হাসপাতালে পাঠানোর ঘটনা অবশ্য ওই স্কুলে নতূন নয়। ২০০৩ সালেও বাংলা বানান ভুল করায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছিল আর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সে সময় ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। তখন মানিকলালবাবু ছিলেন ওই স্কুলেরই সহকারি প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তার পরেও শিক্ষকদের নির্দয় আচরণ শোধরায়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। পুলিশ জানায়, ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thalassemia patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE