Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

পাতলই নদীর পাশে সমাধিস্থ প্রকাশের দেহ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর আড়াই ধরে রাজস্থানের জয়পুরের একটি পাথরের কারখানায় কাজ করতেন প্রকাশ।

নিথর। নিজস্ব চিত্র

নিথর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৬:০০
Share: Save:

দুর্যোগের মধ্যেই বুধবার রাতে উত্তরপ্রদেশের ঔরৈয়া থেকে দুর্ঘটনায় মৃত প্রকাশ কালিন্দীর দেহ এল পুরুলিয়ার হুড়ার জামবাদ গ্রামে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয় পাতলই নদীর পাশে। গ্রামবাসীই দেহ সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর আড়াই ধরে রাজস্থানের জয়পুরের একটি পাথরের কারখানায় কাজ করতেন প্রকাশ। ‘লকডাউন’-এ দীর্ঘদিন আটকে থাকার পরে, অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তবে পথে কী ভাবে, কোন জায়গায় তিনি পটনাগামী ‘ওয়াল পুট্টি’ বোঝাই ওই ট্রাকে উঠেছিলেন, সে তথ্য কারও জানা নেই। শনিবার ঔরৈয়ায় অন্য ট্রাকের ধাক্কায় আহত হন প্রকাশ-সহ অনেকে। মারা যান পুরুলিয়া জেলার আরও ছ’জন। মঙ্গলবার ভোরে ঔরৈয়ার হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রকাশের।

সে দিনই প্রকাশের মৃত্যুসংবাদ গ্রামে পৌঁছলেও তাঁর মা সনকা কালিন্দীকে তা জানানো হয়নি। বুধবার প্রকাশের দেহ আসার আগে বিকেলে সেই খবর তাঁকে দেওয়া হয়। গ্রামের বাসিন্দা দেবব্রত মাহাতো বলেন, ‘‘শৈশবেই স্বামীকে হারান সনকাদেবী। তাঁর এক মাত্র ভরসা ছিলেন ছেলে প্রকাশ। তাই প্রকাশের মৃত্যু সংবাদ যাতে তাঁর মাকে আগে না জানানো হয়, সে জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বুধবার বিকেলের পরে সনকাদেবীকে পড়শিরাই প্রকাশের মৃত্যুর খবর জানান।’’

খবর জেনে মঙ্গলবারই শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন প্রকাশের বোন তিলকা। তিনি বলেন, ‘‘মা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন কি না জানি না। তবে বুধবার সকাল থেকেই কিছুই দাঁতে কাটেননি। শুধু বলছিলেন, ছেলেটা ফিরুক। তবে মৃত্যুর খবর পেয়ে জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলেও চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। মাকে খুব চিন্তায় রয়েছি।’’

তিলকা জানান, রাজস্থান থেকে রওনা দেওয়ার আগের দিন তাঁর সঙ্গে প্রকাশের শেষ কথা হয়েছিল। তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে আটকে থেকে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। বাড়ির জন্য তাঁর মন খারাপ লাগছে। কাঁদতে কাঁদতে তিলকা বলেন, ‘‘যদি আগেই সরকার ওঁদের আনার ব্যবস্থা করত, তা হলে কি দাদাকে হারাতে হত?’’

বুধবার রাত ৮টা নাগাদ দেহ গ্রামে পৌঁছয়। দেহের সঙ্গেই গ্রামে যান জেলা পরিষদের সদস্য সৌমেন বেলথরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেই গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছে। পড়শিরা সে দিন জনপ্রতিনিধি থেকে সরকারি আধিকারিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, সনকাদেবীর জন্য কিছু একটা কাজের ব্যবস্থা করা হোক।

বুধবার দুপুরে রাজ্য সরকারের তরফে সাহায্যের ‘চেক’ প্রকাশের বাড়িতে পৌঁছে দেন কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘চেক তুলে দিয়ে সনকাদেবীকে শুধু এটাই জানিয়েছি, আমরা সবাই তাঁর পাশে রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE