এই খেলার মাঠের উপর দিয়েই লাইন যাওয়ার কথা। নিজস্ব চিত্র
খেলার মাঠ রক্ষা ও জমিহারাদের নায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে ডিভিসি-র রেল করিডরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলেন গ্রামবাসীর একাংশ। মালগাড়ির মাধ্যমে বিদ্যুৎকন্দ্রে দ্রুত কয়লা আনতে চাইছে ডিভিসি। সে জন্য রেললাইন পাতার কাজ হচ্ছে দ্রুত গতিতে। তারই মধ্যে, সম্প্রতি রঘুনাথপুর থানার চিনপিনা গ্রামের কিছু বাসিন্দারা বাধায় ওই গ্রামে রেললাইন পাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
জমি জটে আটক এমনিতেই ডিভিসি-র রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। তার পরে ডিভিসি ভুগছে কয়লার যোগান সংক্রান্ত সমস্যায়। রেললাইন পাতার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি বলে এখন সড়কপথে কয়লা আনতে হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে যে কয়লা আসছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে পুরোমাত্রায় উৎপাদন হচ্ছে না। এই অবস্থায় ডিভিসি চাইছে দ্রুত রেললাইন পাতার কাজ শেষ করতে। রেল করিডরের জন্য প্রয়োজনীয় জমির বাকিটা সরাসরি চাষিদের থেকে কিনতে শুরু করেছে ডিভিসি।
এরই মধ্যে কাজ বন্ধ হয়ে আরও সমস্যায় পড়েছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। চিনপিনা এলাকায় রেললাইন পাতার কাজে অবশ্য আগেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। স্থানীয় জমিহারাদের একাংশের অভিযোগ, ২০১১ সালে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে, ২০১৫ সালে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ডিভিসি। কিছু গ্রামবাসীর দাবি, জমি অধিগ্রহণের আইন অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দু’বছরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিতে পারলে টাকার অঙ্কের উপরে সুদ দিতে হবে। অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে কার্যত কিছুই দেয়নি ডিভিসি। তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণ আইনের বদল আনে। নতুন আইনে ক্ষতিপূরণের হার অনেক বাড়ানো হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে চিনপিনা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নতুন হারে। বিক্ষুব্ধদের দাবি, মূল রাস্তার পাশের বাস্তু জমির যে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ডিভিসি, তা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিনপিনা গ্রামের ফুটবল মাঠ চলে যাওয়ার বিষয়টি। ওই মাঠের উপর দিয়েই রেললাইন পাতবে ডিভিসি। ফলে মাঠের প্রায় পুরোটাই চলে যাবে। স্থানীয়দের দাবি, অতীতে ডিভিসি আশ্বাস দিয়েছিল, পাশের জমি নিয়ে আলাদা একটি ফুটবল মাঠ তৈরি করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই কাজ কিছুই করা হয়নি। এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট হতে চলায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ওই মাঠেই পঁচাত্তর বছরের পুরানো ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়। স্থানীয় স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয় ওই মাঠেই। বিক্ষুদ্ধদের দাবি, রেল লাইন পাতার আগে পাশে অন্য মাঠ তৈরির ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে হবে ডিভিসি-কে।
ঘটনার পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি মহকুমা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছে ডিভিসির রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। রঘুনাথপুর মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিনপিনা গ্রামের কিছু বাসিন্দার বাধায় ওই এলাকায় ডিভিসি-র প্রকল্পের রেললাইন পাতার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে ডিভিসি জানিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সমস্যাটি মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy