Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডিভোর্সে না করায় নিহত শিক্ষক, দাবি 

পুরুলিয়া শহরের একটি কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক ছিলেন অরূপ চট্টরাজ।

পুনর্নির্মাণে অজয়। নিজস্ব চিত্র

পুনর্নির্মাণে অজয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪৫
Share: Save:

স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে না চাওয়ার ফলেই খুন হতে হয়েছে রবীন্দ্রপল্লির কলেজ শিক্ষককে— নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিককে জেরা করে এমনটাই দাবি করছে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ধৃত অজয় অম্বানিকে নিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়।

পুরুলিয়া শহরের একটি কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক ছিলেন অরূপ চট্টরাজ। গত ১৭ জানুয়ারি নিজের বাড়ির দোতলার ঘরে খুন হন তিনি। ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে, অরূপবাবুর স্ত্রী পাপড়ি বিশ্বাস চট্টরাজ ও অজয় অম্বানি নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের দাবি, বছর কুড়ি আগে ওই দু’জন জগন্নাথ কিশোর কলেজে সহপাঠী ছিল। সেই সময়ে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে দু’জনে আলাদা সংসার পেতেছিল। বছর আড়াই আগে আবার ফেসবুকে যোগাযোগ গড়ে ওঠে অজয় ও পাপড়ির মধ্যে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাপড়ি বাড়িতে টিউশন দিতেন। ঘটনার রাতে পড়ুয়াদের ছুটি হয়েছিল। পুলিশের দাবি, রাত ৮টা নাগাদ এক ছাত্র বেরনোর ফাঁকে বাড়িতে ঢুকে পড়ে অজয়। অরূপবাবুর বাবা-মা তখন বাড়িতেই। অজয় সোজা দোতলায় উঠে যায়। বিদ্যুতের বোর্ডের ফিউজ় খুলে দোতলার সিঁড়িতে ঘাপটি মেরে থাকে। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালাতে গেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে অরূপবাবু উপরে। চিৎকার শুনে অরূপবাবুর মা নীচ থেকে ছুটে যান। তিনি আবার আলো আনতে নামলে সেই ফাঁকে পালায় আততায়ী।

মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বাসিন্দা অজয় কাজের সূত্রে ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে থাকত। তদন্তে নেমে মোবাইল ফোন ও আরও কিছু সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরেই গ্রেফতার করা হয় নিহতের স্ত্রীকে। মঙ্গলবার রাতে অজয়কে অরূপবাবুর রবীন্দ্রপল্লির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য। পুলিশ জানিয়েছে, অজয় এবং পাপড়িকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরাও করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ওই দু’জন অরূপবাবুকে ডিভোর্সের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তিনি রাজি না হওয়ায় খুনের পরিকল্পনা করে।

এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে অরূপবাবুর বাড়ির ছাদ থেকে একটি ঝোলানো দড়ি উদ্ধার হয়েছিল। সেটি ছাদ থেকে নীচ পর্যন্ত নামেনি। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই দড়ি পালানোর সুবিধার জন্য নয়, খুনের পরে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়ার মতলবে আনা হয়েছিল। কিন্তু অরূপবাবু চিৎকার করে ওঠায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। অজয় দড়ি বেয়ে ছাদ থেকে কিছুটা নেমে সেখান থেকে মাটিতে লাফ দেয়। এতে চোটও লাগে। তার জন্য ব্যথা কমানোর ওষুধও খেতে হচ্ছিল তাকে। পুজোর আগে পুরুলিয়ার রাঁচী রোডে অজয় একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল। সেখান থেকে ওই সমস্ত ওষুধের ফয়েল

উদ্ধার হয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, পাপড়ির মোবাইল ফোনের রেকর্ড দেখতে গিয়ে প্রথম খটকা লাগে তাঁদের। দেখা যায়, একটি নম্বরে নিয়মিত কথা হয়। সেটিও পাপড়ির নামেই তোলা। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে পাপড়ি তাঁর নামে অন্য কোনও ‘সিম’ থাকার কথা অস্বীকার করছিলেন। পুলিশের দাবি, রাঁচী রোডের ঘরটি থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই সিম-সহ একটি মোবাইল। আর মিলেছে খুনে ব্যবহৃত মাফলার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Divorce Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE