Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আর একটা অমৃতসর না হয়! গতি কমিয়ে ৩০ কিলোমিটারে ছুটবে ট্রেন

অমৃতসরে রেললাইনের পাশে রাবণবধের অনুষ্ঠানে ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই ঝালদায় রেললাইনের পাশে দু’দিনের যাত্রাপালা হওয়ার খবর শেষ মুহূর্তে পেয়ে তা ঠেকাতে পারেনি রেলপুলিশ। পালা নির্বিঘ্নে সারতে শেষ পর্যন্ত রেল পুলিশকেই আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা নিতে হল। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও। 

চিহ্নিত অংশে রেললাইন। নিজস্ব চিত্র

চিহ্নিত অংশে রেললাইন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অমৃতসরে রেললাইনের পাশে রাবণবধের অনুষ্ঠানে ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই ঝালদায় রেললাইনের পাশে দু’দিনের যাত্রাপালা হওয়ার খবর শেষ মুহূর্তে পেয়ে তা ঠেকাতে পারেনি রেলপুলিশ। পালা নির্বিঘ্নে সারতে শেষ পর্যন্ত রেল পুলিশকেই আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা নিতে হল। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও।

রাঁচীর ডিভিশনাল সেফটি অফিসার বিকে সিংহ বলেন, ‘‘রেললাইনের পাশের মাঠে যাত্রা হচ্ছে শুনে ওই এলাকায় ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বদলে কমিয়ে ৩০ কিলোমিটার করে দেওয়া হয়েছে। আরপিএফ জওয়ানদেরও মোতায়েন করতে বলা হয়েছে।”

বস্তুত, অমৃতসরের ওই দুর্ঘটনার পরে রেললাইন লাগোয়া এলাকায় অনুষ্ঠান করতে দিতে চাইছে না রেল। মূলত যেখানে কয়েক হাজার দর্শকের সমাগম হয়, সেই ধরনের অনুষ্ঠান রেললাইন থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে মাঠে করার উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রেলবোর্ড। তারপরেও ঝুঁকি নিয়েই রেললাইন লাগোয়া মাঠে রবিবার থেকে দু’দিনের যাত্রাপালা হচ্ছে ঝালদায়।

বাসিন্দাদের একাংশ ঘটনা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাঁচী ডিভিশনকে জানাতেই নড়েচড়ে বসেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পালার আয়োজন শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে যাত্রা বন্ধ করার দিকে যাননি রেল কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন। শুধু নিরাপত্তাজনিত বেশ কিছু বিষয় তাঁরা যাত্রা উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে বলেছেন।

রেলের একটি সূত্রের খবর, অমৃতসরের দুর্ঘটনার পরেই লাইন থেকে পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে রেলের জমিতে বড় অনুষ্ঠান বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে রেলবোর্ড। আর জমি রেলের না হলে, সেখানে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছে রেল। যদিও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের দাবি, রেলের তরফে এই বিষয়ে কোনও চিঠি তাঁদের কাছে আসেনি।

এই পরিস্থিতিতে, রেললাইনের অদূরে দু’দিনের যাত্রাপালা শুরু হয়েছে ঝালদা শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তে ছাতাট্যাড় ময়দানে। উদ্যোক্তাদের দাবি, ওই মাঠের কিছুটা রেলের জমি হলেও বাকি অংশ রাজ্য সরকারের খাস জমি।সে জন্য তাঁরা স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও ভূমি দফতরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই রবিবার ও সোমবার যাত্রার আয়োজন করেছেন।

কিন্তু, মাঠটি রেললাইন থেকে কুড়ি-তিরিশ মিটার দূরত্বে হওয়ায় বির্তক তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের মতে, রাতের অন্ধকারে রেললাইনের ঠিক পাশেই বড়সড় অনুষ্ঠান করাটা যথেষ্ঠ ঝুঁকির। কারণ, কোটশিলা ও ঝালদা থানার মোহনপুর, ডিমু, হরতাং, লুপুংডি, পাটঝালদা, পুরানো ঝালদার মতো এলাকা থেকে প্রচুর লোক সন্ধ্যায় রেললাইন টপকে যাত্রা দেখতে আসেন। সেই সময়ে ট্রেন চলে এলে আর একটা অমৃতসর হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

খবর পেয়ে এ দিন রাঁচী ডিভিশনের কিছু রেল আধিকারিক এবং আরপিএফের মুরি থানার আধিকারিকেরা যান ঝালদায়। স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে তাঁরা মাঠ পরিদর্শন করেন। মুরির আরপিএফের ওসি উমেশ সিংহ জানান, মাঠের একাংশ রেলের জমিতে হলেও বেশির ভাগ এলাকা রাজ্য সরকারের আওতায়। তাই তাঁরা যাত্রা বন্ধ করতে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

তিনি বলেন, ‘‘ঝুঁকি রয়েছে বলে আমরা যাত্রার উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তাজনিত কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে বলেছি।” তিনি জানান, যাত্রার দু’দিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত রেললাইনের পাশে আরপিএফ মোতায়েন করা হবে।

যাত্রা নিয়ে টানাপড়েন চলায় শেষ পর্যন্ত পালা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল দুপুর পর্যন্ত। আয়োজক ওঝাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির দাবি, ভাইফোঁটার পরে বরাবরাই তাঁরা করেন। এলাকায় অন্যত্র মাঠ না পাওয়া গেলে তাঁরা ছাতাট্যাড় মাঠেই যাত্রা করেন। দশ-পনেরো হাজার দর্শক সমাগম হয়।

উদ্যোক্তাদের অন্যতম কর্মকর্তা তথা ঝালদার উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক বলেন, ‘‘আরপিএফ ও রেল কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরে আমরাও সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। যাত্রার ছাউনির যে অংশ রেললাইনের দিকে পড়ছে, সেখানে বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে। কুড়ি-পঁচিশ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে রেললাইনের দিকে। সব রকম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই যাত্রা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE