Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আর যাই হোক, ওকে পেটাইনি

সোম-কাণ্ডের জল যে অনেক দূর গড়িয়েছে, তা এখন বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন জিতেন্দ্রনাথ হেমব্রম। বাড়িতে শিশু-শ্রমিক হিসাবে ছেলেটিকে রাখা হয়নি মেনে নিয়েও দাবি করছেন, সোমের উপরে তিনি বা তাঁর স্ত্রী কোনও রকম অত্যাচার চালাননি।

ছাত্রাবাস: জিতেন্দ্রনাথের কোচিং সেন্টার। নিজস্ব চিত্র

ছাত্রাবাস: জিতেন্দ্রনাথের কোচিং সেন্টার। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:০৪
Share: Save:

সোম-কাণ্ডের জল যে অনেক দূর গড়িয়েছে, তা এখন বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন জিতেন্দ্রনাথ হেমব্রম। বাড়িতে শিশু-শ্রমিক হিসাবে ছেলেটিকে রাখা হয়নি মেনে নিয়েও দাবি করছেন, সোমের উপরে তিনি বা তাঁর স্ত্রী কোনও রকম অত্যাচার চালাননি। এ দিন নিতুড়িয়া ব্লকের গোবাগ গ্রামে গিয়ে দেখা মিলল জিতেন্দ্রনাথের। সেখানে একটি কোচিং সেন্টার চালান তিনি। কেন্দ্রটির পোশাকি নাম আদিবাসী পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু শিশু শিক্ষা বিকাশ স্কুল। বন্ধ হয়ে যাওয়া পাথর ভাঙার কলের (ক্রাশার)অফিস ঘরে চলে কোচিং সেন্টার তথা স্কুল। জনা তিরিশেক পড়ুয়াকে পড়াচ্ছিলেন জিতেন্দ্রনাথের স্ত্রী চন্দনা হেমব্রম।

সোম ওরফে জিয়াড় হেমব্রমের প্রসঙ্গ তুলতেই জিতেন্দ্রনাথ জানান, বছর নয়েক আগে আগে বছর তিনেকের সোমকে তিনি রামকানালি স্টেশন থেকে ছাতনায়, নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘শিবরাত্রির দিনে গ্রামের একটি বিয়েতে বরযাত্রীদের সঙ্গে চলে গিয়েছিল সোম। তার পর গ্রামে ফিরলেও আর বাড়ি ফেরেনি। খোঁজ নিয়ে জানি, পাশের চাঁদরা গ্রামে দুলাল টুডুর বাড়িতে আছে।” ওই যুবকের আরও দাবি, মাঝেমধ্যে তাঁর বাবার সঙ্গে গরু চরাতে যেত সোম। কিন্তু চাকরের মতো ব্যবহার করা বা অত্যাচারের অভিযোগ ঠিক নয়।

গোবাগে কোচিং কেন্দ্র চালানোর পাশাপাশি রঘুনাথপুরের রামকানালিতে আদিবাসী পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু শিক্ষা নিকেতন নামে একটি ছাত্রাবাসও চালান জিতেন্দ্রনাথ। এ দিন ওই ছাত্রাবাসে গিয়ে জনা দশ-বারো খুদে আবাসিকের দেখা মিলল। সকলেই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী। ছাত্রাবাসের গায়ে রাজ্য সরকারের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের একটি মলিন বোর্ড ঝুলছে। পড়ুয়াদের দেখভাল করছেন হুড়ার বাসিন্দা বদনী হাঁসদা নামে এক মহিলা। তিনি জানালেন, ছাত্রাবাসে থাকে চল্লিশ জন পড়ুয়া। সকলেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। চারটি ঘুপচি ঘরে গাদাগাদি করে থাকে ওই পড়ুয়ারা। ছাত্রবাসটি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় নেওয়া।

নিতুড়িয়ার বাসিন্দা, খেরওয়াল সমন্বয় কমিটির সভাপতি রাজেন টুডু জানিয়েছেন, এই ছাত্রাবাস ও কোচিং সেন্টার নিয়ে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে অভিযোগ জানাবেন তাঁরা। অভিযোগ হলে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন দফতরের আধিকারিক নিখিলেশ মণ্ডল।

রাজেনবাবু জানালেন, ওই এলাকায় জিতেন্দ্রনাথ জয়ন্ত নামেই বেশি পরিচিত। রঘুনাথ মুর্মু শিশু শিক্ষা বিকাশ স্কুলের নামে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টে স্কুল চালানোর একটি অনুমতি আছে জিতেন্দ্রনাথের। যদিও সেই রেজিস্ট্রেশন দুই বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই হিসাবে তাঁর ছাত্রাবাস ও কোচিং সেন্টারের বর্তমানে কোনও বৈধতা নেই বলেই জানাচ্ছেন পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জিতেন্দ্রনাথের দেওয়া নথি অনুযায়ী, ওই সংস্থার সভাপতি তাঁর শ্যালিকা অঞ্জলি হেমব্রম, সম্পাদক জিতেন্দ্রনাথ নিজে। স্ত্রী চন্দনা সহ-সভাপতি। কোষাধ্যক্ষ হিসাবে নাম আছে ছাত্রাবাসের রাঁধুনি বদনী হাঁসদার। সব মিলিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে ওই ছাত্রাবাস ও কোচিং সেন্টার নিয়ে। জিতেন্দ্রনাথের দাবি, ছাত্রাবাসের আবাসিকেরা মাসে ছশো টাকা করে দেয়। সেই টাকাতেই তাদের খাওয়া, ওষুধের খরচা চলে। ওই যুবক বলেন, ‘‘ছাত্রাবাসে যারা থাকে, তারা সকলেই স্থানীয় সরকারি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ে। দুপুরে সেখানেই মিড-ডে মিল খায়। সকালে ও বিকেলে জলখাবার এবং রাতের খাবার দেওয়া হয় ছাত্রাবাস থেকে।’’

পুলিশে তাঁর ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে, সেই খবরও পৌঁছেছে জিতেন্দ্রনাথের কানে। চাপে পড়ে ওই যুবক এখন বলছেন, ‘‘এত দূর বিষয়টি না গড়ালেই ভাল হত। আমাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে। সোমকে আর যাই হোক, মারধর করিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Som Child Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE