Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পাথর খাদান নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রশাসন

বন্ধ পাথর খাদানের ভবিষ্যত নিয়ে বাঁকুড়ার শিল্প সম্মেলন সিনার্জি-তে প্রশ্নের মুখে পড়ল প্রশাসন। বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে পাথর খাদান নিয়ে জট কেটে যাবে। সেই সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

বন্ধ পাথর খাদানের ভবিষ্যত নিয়ে বাঁকুড়ার শিল্প সম্মেলন সিনার্জি-তে প্রশ্নের মুখে পড়ল প্রশাসন।

বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে পাথর খাদান নিয়ে জট কেটে যাবে। সেই সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাঁকুড়ার পাথর খাদানগুলি এখনও বন্ধ। পাঁচ মাস ধরে কর্মহীন কয়েক হাজার শ্রমিক। সূত্রের দাবি, বীরভূমে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে চলছে অনেক খাদান। তাতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে রাজস্বের। এই পরিস্থিতিতে সিনার্জি-তে খাদান মালিকদের সংগঠনই শুধু নয়, সরব হয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও।

কিন্তু সমস্যাটা কোথায়?

প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক, এ বার থেকে সমস্ত ধরনের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করার জন্য নতুন করে নিলাম করতে হবে। বালি খাদানগুলি সরকারি খাস জমিতে থাকলেও জেলার অনেক পাথর খাদান ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে রয়েছে। ওই সমস্ত জমির মালিকেরা এত দিন শর্ট টার্ম মাইনিং লাইসেন্স নিয়ে পাথর তুলে ব্যবসা করতেন। নিলামের সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরা পড়েছেন বিশ বাঁও জলে। প্রশাসনের কর্তারা জানান, এখন ব্যক্তিগত জমির পাথর খাদানগুলিও নিলাম করে চালু করতে হবে। ওই নিলামে জমির মালিকেরাই যে খাদান পাবেন তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এমনকী, তাঁরা সে ক্ষেত্রে পাবেনটা কী, সেটাও স্পষ্ট নয়। শুক্রবার প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্যের খনিজ বিভাগের যুগ্ম সচিব উৎপল ভদ্রকে মাইক্রোফোন হাতে নিতে হয়েছিল। মঞ্চে তিনি বলেন, “মন্ত্রীসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্যক্তিগত জমিতে গড়ে তোলা পাথর খাদান মালিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

বীরভূম জেলা প্রশাসন হিসাব অনুযায়ী, সেখানে পাথর খাদানের সংখ্যা মোট ৩২৬টি। তার মধ্যে মহম্মদবাজারের পাঁচামীতে ৭৬টি, রামপুরহাটের শালবাদারায় ৬৮টি, তমবুনিতে ৫৬টি, নলহাটিতে ৭০টি ও মুরারই পাথর শিল্পাঞ্চলে ৫৬টি রয়েছে। এই খাদানগুলির মধ্যে বেশির ভাগই ব্যক্তিগত জমিতে। সূত্রের খবর, বীরভূমের প্রায় একশোটি খাদান প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে তলে তলে চলছে। এই পরিস্থিতিতে, নিলাম না হওয়া ইস্তক রাজস্বে ফাঁকি পড়ছে।

এপ্রিলের গোড়ায় বাঁকুড়ায় এসে মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যার কথা শুনে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে আইন করে সমস্যার সুরাহা করা হবে। তাতে জেলা প্রশাসনের উপর সাময়িক ভাবে চাপ কমলেও, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ শুক্রবার সিনার্জির মঞ্চে বলেন, “শালতোড়ায় পাথর শিল্প বন্ধ হয়ে পড়ায় হাজার হাজার মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। সাধারণ মানুষের সমস্যার যদি সমাধানই না করতে পারলাম, তাহলে সাংসদ হয়ে আর লাভ কি হল?”

সিনার্জিতে দফতরের যুগ্ম সচিব উৎপলবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে গিয়েছেন বলে ফাইলটিতে সই করানো যাচ্ছে না। তিনি ফিরলেই সই করিয়ে ক্যাবিনেট বৈঠকে ফাইলটি পাঠানো হবে।” সিনার্জি শেষে বণিকসভা ও পাথর খাদান মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশিকা আসবে সেই মতো পদক্ষেপ করব।”

সমস্যা সমাধানে এখনও কত সময় গড়ায় সেই দিকেই তাকিয়ে শ্রমিক ও মালিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stone pit poor workers Jobless Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE