Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাত ঘণ্টা ট্রাকের নীচে পড়ে দেহ

খবর মুখে মুখে ছড়াতেই শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টায় হু হু করে ভিড় জমে গিয়েছিল রঘুনাথপুর থানার শালঞ্চি গ্রামের চেকড্যামের সেতুর কাছে ঘটনাস্থলে।

ক্ষোভে: ভাঙচুর চলল এমনই আটটি কয়লার ট্রাকে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভে: ভাঙচুর চলল এমনই আটটি কয়লার ট্রাকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৭
Share: Save:

রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে যাচ্ছিল মোটরবাইকটি। হঠাৎ উল্টো দিক থেকে আসা কয়লার একটি ট্রাক ডান দিকে কিছুটা এগিয়ে উল্টে পড়ল মোটরবাইকের উপরে। ছিটকে এসে মোটরবাইকটি পড়ল ট্রাকের কিছুটা দূরে। কিন্তু মোটরবাইকে থাকা স্বামী, স্ত্রী ও ছোট্ট শিশুটা চাপা পড়ে গেল ট্রাকের তলায়!

খবর মুখে মুখে ছড়াতেই শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টায় হু হু করে ভিড় জমে গিয়েছিল রঘুনাথপুর থানার শালঞ্চি গ্রামের চেকড্যামের সেতুর কাছে ঘটনাস্থলে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকের চালক তখন পালিয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল আটটি কয়লার ট্রাক। ক্ষিপ্ত জনতা ইট, পাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালায় ট্রাকগুলিতে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসেন এসডিপিও (রঘুনাথপুর) অভিজিৎ চৌধুরী। আসে রঘুনাথপুর, নিতুড়িয়া-সহ কয়েকটি থানার পুলিশ কর্মীরা। ক্রেনও আসে। কিন্তু জনতার বাধায় বিকাল পর্যন্ত ট্রাক সরিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস এসে স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিপূরণ ও দু’জনের চাকরির দাবিতে অনড় থাকেন।

ঝাড়খণ্ডের খনি থেকে ট্রাকে রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আসছিল। তাই বাসিন্দারা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মৃত বংশীধারী ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির মোট দু’জনের কাজের দাবি তোলেন। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিপূরণেরও দাবি তোলা হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চেকড্যামের সেতু থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার উপরে উল্টে পড়ে রয়েছে ট্রাকটি। কিছুটা দূরে পড়ে আছে মোটরবাইক। ট্রাকের পিছনে চাকার তলা থেকে বেরিয়েছিল মহুয়ার পা। তা দেখে অনেকেই শিউরে উঠছিলেন। কেউ কেউ ট্রাকের তলায় উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করেন, বংশীধারী ও তাঁর শিশুকে দেখা যাচ্ছে কি না। কান্নাকাটি করছিলেন মৃতদের পরিজনেরা।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ট্রাকটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আসছিল। সে কারণেই বেসামাল হয়ে উল্টে যায়। তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, মোটরবাইক থামিয়ে মোবাইলে কথা বলছিলেন বংশীধারী। সেই সময়েই ট্রাকটি উল্টে পড়ে।

বেলার দিকে বংশীধারীর কাকা দিলীপ মণ্ডল ও দাদা গিরিধারী মণ্ডলকে নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবিতে ডিভিসি-র কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেন আস্তা গ্রামের লোকজন। পরে রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুখ্য বাস্তুকার মহম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘‘মানবিকতার খাতিরে মৃতদের পরিবারের দু’জনকে ঠিকার ভিত্তিদের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটা পরিবহণের দায়িত্ব থাকা সংস্থাকে দেখতে বলা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, কয়লা পরিবহণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার এসে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আশ্বাস দিলে জনতা শান্ত হন। বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ ক্রেন দিয়ে ট্রাক সরিয়ে দেহ উদ্ধার করা হয়।

তবু বাসিন্দাদের ক্ষোভ থামছে না। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘কয়লাবোঝাই ট্রাক ও ডাম্পারগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যাতায়াত করে। কিন্তু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ থাকে না। তিনটে প্রাণের বিনিময়ে কি পুলিশের হুঁশ ফিরবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dead bodies Truck Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE