জরাজীর্ণ: তিলপাড়া ব্যারাজের উপরের সেতু। নিজস্ব চিত্র
পিচ উঠে সেতুর উপরে রাস্তায় ছোট-বড় গর্ত। জায়গায় জায়গায় বিশাল ফাটল। সেতুর দু’পাশে সিমেন্টের রেলিং ক্ষয়ে বেরিয়ে পড়েছে মরচে ধরা লোহার শিক। নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেতুর দু’দিকের ফুটপাতও। এলাকাবাসীর বক্তব্য, পথচারী বা যানচালক সেতুতে ওঠেন প্রাণ হাতে করে। ভারী যান গেলেই কাঁপে সেই সেতু।
অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমনই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে সিউড়িতে মযূরাক্ষী নদীতে ৬৮ বছরের পুরনো তিলপাড়া ব্যারাজের উপরে থাকা সেতুটি। পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড তো বটেই, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সেই সেতু। সারা দিনে কয়েক হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে সেখান দিয়ে। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা, যানজট লেগেই থাকে। তার পরেও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে থাকা সেই সেতুর দিকে প্রশাসনের ‘নজর’ নেই বলে অভিযোগ। তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্নও।
ওই সেতুতে নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা, দ্রুত সেটির সংস্কার করা প্রয়োজন। তার পাশে গড়ে তোলা দরকার বিকল্প একটি সেতুও। সংস্কার না হলে যে কোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কোনও যান চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে ধাক্কা মারলে, গাড়ি গিয়ে জলাধারে বা উল্টো দিকে অনেক নীচে নদীতে ছিটকে পড়তে পারে। সেতুর অবস্থা যে ভাল নয়, তা মেনেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও।
প্রসাসনিক সূত্রে খবর, ময়ূরাক্ষীতে তৈরি ঝাড়খণ্ডের মশানজোড় বাঁধ থেকে ছাড়া জল কৃষিকাজে লাগাতে ওই নদীর গতিপথেই ১৯৫১ সালে তৈরি করা হয় তিলপাড়া মিহারলাল ব্যারাজ। একই সঙ্গে তৈরি হয় ব্যারাজের উপরের সেতুটিও। স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০৯ মিটার লম্বা এবং ফুট তিরিশেক চওড়া ওই সেতুর উপরে একাধিক বার পিচ পড়েছে। রং-ও হয়েছে। অভিযোগ, কিন্তু প্রকৃত সংস্কার বলতে যা বোঝায়, তা হয়নি। তবে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সেতুর স্বাস্থ্য বেহাল হওয়ার পিছনে যদি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব একটা কারণ হয়ে থাকে, তা হলে দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই সেতুর উপরে ভারী যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়াও।
সিউড়ি শহরের বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রথম থেকেই ওই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। ঝাড়খণ্ড ও বীরভূমের এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের যোগাযোগই নয়, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমও ওই সেতু। পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে ভারী পণ্যবাহী লরি বা ডাম্পারের যাতায়াত আগেও ছিল। এখনও রয়েছে। তবে দিন দিন সেই সংখ্যা বেড়েছে।
তাঁরা জানান, যানচলাচল বেড়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল আটের দশকে বর্ধমানের পানাগড় থেকে মোরগ্রাম পর্যন্ত ঝা চকচকে হাইওয়ে তৈরির পরে থেকেই। এই রাস্তা তৈরিতে সরাসরি কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের উন্নত হয়। যানচলাচল আরও বাড়ে ২০০৬ সালে ওই রাস্তা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের তকমা পাওয়ায়। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের কথায়, ‘‘ভারী যানচলাচল বেড়ে গেলেও তিলপাড়া ব্যারেজের সেতুটি নতুন করে প্রশস্ত করার সুযোগ নেই। যানবাহনের চাপে সেতুটি ক্রমশ জীর্ণ হয়ে পড়ছে।’’
জাতীয় সড়কের ডিভিশন ১২–র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ জানান, শুধু তিলপাড়া সেতু নয়, বীরভূমে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা ৯টি সেতুর মধ্যে ন’টির অবস্থাই খারাপ। দ্রুত সে সবের সংস্কার করা প্রয়োজন। ৬০-৬৫ বছর আগে যে ধারণক্ষমতা হিসেব করে সেতুগুলি তৈরি করা হয়েছিল, বর্তমানে তার তুলনায় অনেক বেশি ভারী যানবাহন তা দিয়ে চলাচল করে। তাতেই সেতুগুলির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ৯টি সেতুর সংস্কার করার জন্য দফতরের উর্ধ্বতন কর্তা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সংস্কার করা হবে। তাঁদের বক্তব্য, সংস্কারের কাজ শুরুর আগে ওভারলোডিং-এর সমস্যাও মেটানো প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy