Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
জেলায় থাকবে না ২০০ বাস

পথে নেমে আজ ভোগান্তির আশঙ্কা

আজ পথে বাস মিলবে কি, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে বীরভূমে। আজ, শনিবারই কলকাতায় শাসকদলের ব্রিগেড সমাবেশ। যেটাকে ঐতিহাসিক আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের তরফে।

রামপুরহাট স্টেশনে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

রামপুরহাট স্টেশনে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
বীরভূম শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

আজ পথে বাস মিলবে কি, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে বীরভূমে। আজ, শনিবারই কলকাতায় শাসকদলের ব্রিগেড সমাবেশ। যেটাকে ঐতিহাসিক আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের তরফে। ওই সমাবেশের জন্য জেলায় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী প্রায় ২০০টি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্রিগেড সমাবেশের জন্য ভোগান্তি শনিবার ঠিক কোন মাত্রায় পৌঁছবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন জেলার মানুষ। আজ পথে বেরিয়ে বাস আদৌ মিলবে কিনা, সংশয় সেটা নিয়েই।

তৃণমূল প্রভাবিত বাসমালিক সংগঠনের অবশ্য দাবি, হিসেব কষেই বাস নেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষের সমস্যা তেমন না হয়। প্রতিটি রুটেই বাস পাবেন মানুষ। যদিও বাস যে চোখে পড়ার মতো হারে কমেছে, শুক্রবার বিকেল থেকেই তার আঁচ মিলতে শুরু করেছে পথে পথে।

এমনিতেই কলকাতার বড় সমাবেশে যত বেশি সম্ভব লোক নিয়ে যাওয়ার একটা অলিখিত চাপ থেকে স্থানীয় নেতৃত্বের উপরে। জেলা তৃণমূলের নেতাদের একাংশই বলছেন, ‘‘এ বারের সভা তো অনেক বেশি স্পেশ্যাল! শনিবারের ব্রিগেডের সমাবেশকে ঐতিহাসিক করে তুলতে দেড় মাস ধরে প্রচার চালানো হয়েছে।’’ লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে যেতে হবে, জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। ব্লকে ব্লকে করা সভা থেকে লোকের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন খোদ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কোন ব্লক থেকে কত মানুষ শনিবার কলকাতা পৌঁছবেন, তার উপরে ব্লক নেতৃত্বের কৃতিত্ব নির্ভর করছে। দল সূত্রের খবর, সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপিয়েছেন ব্লক, অঞ্চল নেতারা। ছোট গাড়ি, ট্রেনের পাশাপাশি জেলা থেকে তাই ২০০টির মতো বাস তোলা হচ্ছে।

ব্রিগেড সমাবেশ কত লোক কী ভাবে যাবেন, সিউড়ি মহকুমার কয়েকটি ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্বের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকেই সেটা স্পষ্ট হবে। সিউড়ি ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি স্বর্ণময় সিংহ বলছেন, ‘‘আমার ব্লকে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জন্য ১০টি বাস করা হয়েছে, থাকছে ৭টি গাড়ি। এ ছাড়া সিউড়ি ও সাঁইথিয়া থেকে ট্রেনে প্রচুর মানুষ যাবেন।’’ সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি নরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছোট গাড়ি করা হয়েছে ২৫টি, বাস নেওয়া হয়েছে ৫টি। বাকিরা শুক্রবার বিকেলের সিউড়ি কলকাতা এক্সপ্রেসে গিয়েছেন।’’ দুবরাজপুরের ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্রের দাবি, ট্রেনে বহু মানুষ যাবেন। তার পরেও বাস নেওয়া হয়েছে ৩৫টি। রাজনগরের তৃণমূল নেতা সুকুমার সাধু এবং খয়রাশোল নেতৃত্বের কথা মানলে, ওই দু’টি ব্লক থেকে বাস নেওয়া হয়েছে ২০টি। মহম্মদবাজার থেকে ১২টি এবং সাঁইথিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৫টির বেশি বাস থাকছে।

ছবিটা একটু আলাদা রামপুরহাট মহকুমায়। ব্রিগেড সভার জন্য এই মহকুমা এলাকা থেকে ৪০টির মতো বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। হিসাবে স্থানীয় নেতারা বলছেন, রামপুরহাট, নলহাটি থেকে কলকাতার ট্রেনের যোগাযোগ অনেক ভাল। বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থকই শুক্রবার রাতের ট্রেনে কলকাতায় গিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘রামপুরহাট ২, ময়ূরেশ্বর ২, নলহাটি ২ এবং মুরারই ২—এই চারটি ব্লকে ট্রেনের যোগাযোগ খুবই কম। সেই জন্য কিছু লাক্সারি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে রুটের বাস কম নেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু দলেরই একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, মুরারই থানার জাজিগ্রাম, চাতরা, পঞ্চহর, রুদ্রনগর, কুশমোড় এবং নলহাটি ২ ব্লকের শীতলগ্রাম, নওয়াপাড়া, ভদ্রপুর, লোহাপুর, বাঁধখালা, গোপালপুর রুটের বেশির ভাগ তুলে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে বাস গুলি ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা দেবে।

পাঁচামি, রামপুরহাট, শালবাদরা, নলহাটি, মুরারইয়ের রাজগ্রাম— এই সমস্ত শিল্পাঞ্চলে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত পাথর বোঝাই করা বা পাথর ভর্তি কোনও লরি যাতায়াত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। পাথর ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, ব্রিগেডের সভা এর আগেও অনেক হয়েছে। কিন্ত এই প্রথম পাথর শিল্পাঞ্চলে গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ, শনিবার সাধারণ মানুষের যাতায়াতে কিছুটা আসুবিধা যে হবে, তা আড়ালে মানছেন তৃণমূল নেতারা। আবার অনেকের বক্তব্য, শনিবার অনেক সরকারি অফিস কাছারি ছুটি। তাই অন্য দিনের মতো সমস্যা প্রকট হবে না। সরকারি বাস, অটো, টোটো আছেই। আইএনটিটিইউসির জেলা কমিটির সদস্য রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘জেলায় ৬০০ বাস চলে। তার মধ্যে ২০০ বাস তোলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রতি রুটে বাস রেখেই বাস নেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষের সমস্যা না হয়, সেটা বিবেচনায় ছিল।’’ সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী মানছেন, কিছুটা সমস্যা হবেই। তবে মানুষের সমস্যা কমাতে বাইরে থেকে অনেক বাস আনানো হয়েছে।

বোলপুর থেকে শুক্রবার যাঁরা গিয়েছেন, প্রায় সকলেই ট্রেনে। বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট বাস এবং মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক সুদীপকুমার মণ্ডল জানান, শনিবার ৬০ শতাংশ বাস থাকবে না। ভোগান্তি ঠিক কতটা

হতে চলেছে, তা আজ রাস্তায় নামলে টের পাবেন মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC brigade Kolkata rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE