Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পুরুলিয়ায় শান্তিরামকে দায়িত্ব মমতার

ত্রিশঙ্কু কাটল বাঁকুড়ায়, পদ পরাজিত প্রার্থীদেরও

ত্রিশঙ্কু অবস্থা থেকে পুরবোর্ড গঠনের দিকে এগোল বাঁকুড়ার তৃণমূল। বুধবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বাঁকুড়ায় নির্বাচিত তিন নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে নাম লেখালেন। এরফলে তৃণমূলের বাঁকুড়ায় বোর্ড গড়া নিয়ে জটিলতা যেমন কাটল, তেমনই নতুন করে দেখা দিল পুরপ্রধান নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

ত্রিশঙ্কু অবস্থা থেকে পুরবোর্ড গঠনের দিকে এগোল বাঁকুড়ার তৃণমূল। বুধবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বাঁকুড়ায় নির্বাচিত তিন নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে নাম লেখালেন। এরফলে তৃণমূলের বাঁকুড়ায় বোর্ড গড়া নিয়ে জটিলতা যেমন কাটল, তেমনই নতুন করে দেখা দিল পুরপ্রধান নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা। কারণ বাঁকুড়ায় তৃণমূলের কাউন্সিলরদের একাংশ এ দিন হয়তো দলনেত্রী পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করবেন বলে আশা করে থাকলেও মমতা অবশ্য পুরপ্রধানের নাম জানাননি। আবার গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে পরাজয় ঘটা তৃণমূলের চার প্রার্থীকে দলে পদ দিয়ে তাঁদের হারের ক্ষতে ‘মলম’ দিয়েছেন নেত্রী।

বুধবার কলকাতায় নজরুল মঞ্চে জেলার তিন পুরসভার দলীয় জয়ী প্রার্থীদের ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বাঁকুড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দেবপ্রসাদ (তারা) কুণ্ডু ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শান্তি সিংহের হেরে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। দল সূত্রে খবর, পাশাপাশি এই পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চৈতালি মালাকার ও বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অভিজিৎ সিংহের হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, এই চারজনের পরাজয়ের পিছনে যে তৃণমূলেরই একশ্রেণির নেতা ও নেত্রীর হাত রয়েছে তা টের পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তাঁর বক্তৃতাতেও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। তবে ভোটে হেরে গেলেও দলে তাঁদের গুরুত্ব বাড়াতে চারজনকেই বড় পদ দিয়েছেন তিনি।

এ দিন তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “তারাবাবু ও শান্তিবাবুকে দলের জেলা সহ-সভাপতি করা হয়েছে। অভিজিৎকে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ও চৈতালিকে জেলা মহিলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদিকা করা হয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে শান্তিবাবু হেরেছেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত ‘নির্দল’ রেখা দাস রজকের কাছে। তিনি পছন্দের ওয়ার্ডে দলের টিকিট না পেয়ে ‘নির্দল’ হয়ে নিজের পছন্দের ওয়ার্ডে ভোটে দাঁড়ান। পরে দল তাঁকে বহিষ্কার করে। তারাবাবুও সামান্য ভোটে হারেন। দু’জনেই এই পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধানও বটে। বিষ্ণুপুরেও অভিজিতের বিরোধী হয়ে দলের বহিষ্কৃত এক নির্দল ভোটে দাঁড়ান। তিনি দলেরই এক নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ওই নির্দল প্রার্থীকে একটিও ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন শুভেন্দুবাবু। তাই অভিজিতের হারে ওই নেতার হাত দেখছেন দলেরই একাংশ।

শুভেন্দু জানান, বাঁকুড়া পুরসভার তিন জয়ী নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই প্রার্থীরা হলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেখা দাস রজক, ১ নম্বর ওয়ার্ডের দেবাশিস লাহা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেখ আজিজুল রহমান। তিনজনেই এ দিন তৃণমূল ভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শাসকদলে যোগ দেন। ফলে এই পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরের সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১৫। দেবাশিসবাবু বলেন, “উন্নয়নের লক্ষেই তৃণমূলের হাত ধরলাম।”

এ দিন সোনামুখী পুরসভার পুরপ্রধান হিসেবে সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর পুরসভার পুরপ্রধান কে হবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। শুভেন্দুবাবু বলেন, “সময় মতো জেলায় গিয়ে পুরপ্রধান ঠিক করা হবে।” তবে ফের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ছায়া দেখা দিয়েছে বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান নির্বাচনকে ঘিরে। এই পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপাকে কোণঠাসা করতে মরিয়া হয়েছেন বিদায়ী উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদারের গোষ্ঠী। অলকাদেবীর দিকে রয়েছেন অনেক কাউন্সিলরই। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে না চাইলেও ক্রমশ জল যে ঘোলা হচ্ছে তা টের পাওয়া যাচ্ছে। এ দিকে রেখাদেবী ও দেবাশিসবাবু শম্পাদেবীর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। এ দিন তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে শম্পাদেবীর শিবিরে। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “যার দিকে বেশি কাউন্সিলর থাকবে চেয়ারম্যানের গদি তার দিকেই ঝুঁকবে।” সে ক্ষেত্রে ঘোড়া কেনাবেচাতেও নামতে পারেন নেতা-নেত্রীরা। অন্যদিকে দলে পদোন্নতি হলেও হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীরা। বাঁকুড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “নেত্রী বুঝেছেন বিশ্বাসঘাতকদের জন্যই আজ আমি হেরেছি। তাই তিনি আমার পাশে আছেন। এই জেলারই এক নেত্রী আমার ওয়ার্ডে আমাকে হারানোর জন্য টাকা উড়িয়েছিলেন। আমার বিশ্বাস আগামী দিনে এই সব কুচক্রীদের দলে স্থান হবে না।”

এ দিকে, কলকাতায়র ওই সভায় পুরুলিয়ার দু’টি পুরসভা পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরে পুরপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোকেই দায়িত্ব দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দল সূত্রের খবর, নেত্রী জানিয়েছেন, দু’টি পুরসভার ক্ষেত্রেই স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে জেলা সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তিরামবাবুর কাছে জানতে চান, কেপিদা জিতেছেন তো? শান্তিরাম মাহাতো ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ জানান। এরপরেই তিনি পুরুলিয়ার বিষয়টি শান্তিরামবাবুকে বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখতে বলেন। সভা থেকে বেড়িয়ে শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘নেত্রী পুরপ্রধানের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পুরুলিয়ার বিধায়ক তথা পুরুলিয়ায় পুরভোটের জয়ী প্রার্থী কে পি সিংহ দেও বলেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশে মানুষের দেওয়া দায়িত্বের মর্যাদা দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE