Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সাঁইথিয়ায় সংঘর্ষ, অভিযুক্ত শাসক

এলাকা দখল ঘিরে রাতভর দফায় দফায় তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী সংঘর্ষে’ উত্তপ্ত হল সাঁইথিয়ার বহরাপুর গ্রাম। অভিযোগ, দু’পক্ষে চলে গোলাগুলিও। সাঁইথিয়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সাবের আলি খান এবং ফুলুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লাভলি বেগমের বাড়িতে বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলা, লুঠপাটের  অভিযোগ উঠেছে।

নজরদারি: সংঘর্ষের পরে গ্রামে পুলিশের টহল। মঙ্গলবার বহরাপুরে। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি: সংঘর্ষের পরে গ্রামে পুলিশের টহল। মঙ্গলবার বহরাপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

এলাকা দখল ঘিরে রাতভর দফায় দফায় তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী সংঘর্ষে’ উত্তপ্ত হল সাঁইথিয়ার বহরাপুর গ্রাম। অভিযোগ, দু’পক্ষে চলে গোলাগুলিও। সাঁইথিয়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সাবের আলি খান এবং ফুলুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লাভলি বেগমের বাড়িতে বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলা, লুঠপাটের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দফায় দফায় অভিযান শুরু করে সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। গোটা গ্রাম জুড়ে পুলিশের টহলদারি চলছে।

সাঁইথিয়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি গোষ্ঠী-বিবাদের কথা মানতে চাননি। সাবেরের দাবি, গত রাতে বহরাপুর গ্রামে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই হামলা চালিয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান লাভলি বেগমের নালিশ, রাত ৯টা নাগাদ কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁর বাড়ির দিকে বোমা ছোড়ে। ঘটনায় দু’জন জখম হয়েছে বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। তবে বিজেপি নেতৃত্ব ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের দলের যোগসাজসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ৯টা নাগাদ সংঘর্ষ শুরু হয় বহরাপুর গ্রামে। ঘটনার সূত্রপাত ক্ষতিপূরণ আদায় ঘিরে। স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে খেলতে খেলতে ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের অনুগামী পরিবারের একটি ছেলে ধারাল অস্ত্র দিয়ে ‘বিরোধী গোষ্ঠীর’ একটি ছেলের আঙুলে কোপ মারে বলে অভিযোগ। মীমাংসার পরে আহতের চিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল অভিযুক্তের পরিবারের। অভিযোগ, তাঁরা তা দিতে অস্বীকার করায় বচসা বাধে। তার পরই চলে গোলাগুলি। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সামনেই বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। ওই গ্রামেই ব্লক সভাপতির বাড়ি। অভিযোগ, তাঁর বাড়ির গেটেও বোমা পড়ে। এ দিন বহরাপুর গ্রামে টহল দিল পুলিশ। গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। রাস্তায় বোমা বিস্ফোরণের চিহ্ন। মসজিদ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, কয়েকটি বাড়ির শৌচাগার, সাবের আলির বাড়ির সামনের রাস্তা, গেট ও দেওয়ালে বোমা ফাটার ছাপ। মসজিদ লাগোয়া পুকুরপাড়ে পড়ে ভাঙা চেয়ার। রাস্তা, ঝোপের আড়ালে পড়ে ছিল না ফাটা বোমা, সুতলি, পাথরের কুচি। স্থানীয় অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের সামনে থেকে একটি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।

মাঠে পড়ে বোমা।নিজস্ব চিত্র।

গোষ্ঠী বিবাদের কথা অস্বীকার করেছেন সাবের আলি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সোমবার রাতে বাড়িতে ছিলাম না। ভাইয়ের মুখে শুনলাম, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দলের দু’জন আহত হয়েছেন।’’ তবে তৃণমূল জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ওই গ্রামে দু’পক্ষই আমাদের লোক। কেন ওই ঘটনা ঘটল তা ব্লক সভাপতিই বলতে পারবেন।’’

ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কাশীনাথ মণ্ডলেরও দাবি, ‘‘ও সব তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।’’ জেলা বিজেপি তপসিলি মোর্চার সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘‘এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। বিজেপির সঙ্গে ওই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

পুলিশ জানায়, ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এক জনকে আটক করা হয়েছে।

তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, এলাকার ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের অনুগামীদের সঙ্গে দলের জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। সাঁইথিয়ায় তৃণমূলের দু’জন ব্লক সভাপতি রয়েছেন। ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি লাভপুর এবং বাকিগুলি সাঁইথিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে। লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পঞ্চায়েতগুলির ব্লক সভাপতি পঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি প্রশান্ত সাধু। সাঁইথিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত পঞ্চায়েতগুলির ব্লক সভাপতি সাবের আলি।

দলীয় সূত্রে খবর, সাঁইথিয়ার পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে ‘অলিখিত ভাবে’ দলের জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায়ের দায়িত্বে রয়েছে দেড়িয়াপুর, মাঠপলশা এবং হরিশাড়া পঞ্চায়েত। অন্য দিকে বনগ্রাম, ফুলুর এবং হাতোড়া পঞ্চায়েতের দায়িত্ব রয়েছে ব্লক সভাপতি সাবেরের হাতে। কিন্তু দু’জনের বিরুদ্ধেই একে অন্যের পঞ্চায়েত এলাকা দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বার বার।

দলীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে সাধনবাবুর নিয়ন্ত্রণাধীন মাঠপলশা পঞ্চায়েতে তাঁর অনুগামী সদস্যদের নিয়েই উপসমিতি গঠনের জন্য হুইপ জারির অভিযোগ ওঠে ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। দু’পক্ষের বিবাদের জেরে এখনও ওই পঞ্চায়েতে উপসমিতি গঠন করা হয়নি। তার ফলে ওই পঞ্চায়েতে উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কয়েক মাস আগে সাধনবাবুকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে সাবের আলির অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে এলাকায় বনধের ডাক দেন সাধনবাবুর অনুগামীরা। সেই বনধ ব্যর্থ করতে পথে নামেন সাবের আলির অনুগামীরা। পুলিশের সামনেই দু’পক্ষের লোকেরা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE