Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

উচ্ছেদের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে আদ্রায় তরজা

ঘটনা হল, রেলের ওই বিজ্ঞপ্তির পরেই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দাবিকে সমর্থন জানায় আদ্রা শহর তৃণমূল। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসায়ীরা দোকানও সরাননি।

সরব: পথে তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

সরব: পথে তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৫
Share: Save:

রেলের জমি থেকে ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি ঘিরে পারদ চড়ছে আদ্রায়। বেধে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।

আদ্রা স্টেশন লাগোয়া এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রেলের প্রচুর জমির প্রয়োজন। সে জন্য রেল তার নিজের জায়গায় এত দিন ব্যবসা করে যাওয়া দোকানিদের সরে যাওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়। তা না হলে রেল নিজেই দোকানপত্র ভেঙে দেবে বলে জানিয়েছিল। রেলের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। ঠিক তার আগের দিন রবিবার রেলের ওই উচ্ছেদের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদ্রায় পথে নামল তৃণমূল।

ঘটনা হল, রেলের ওই বিজ্ঞপ্তির পরেই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দাবিকে সমর্থন জানায় আদ্রা শহর তৃণমূল। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসায়ীরা দোকানও সরাননি। রবিবার দুপুরে রেলের দোকান উচ্ছেদের নির্দেশের বিরুদ্ধে রেল শহর আদ্রায় মিছিল করে শাসকদল। ছিলেন কাশীপুর ও রঘুনাথপুরের দুই তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া ও পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে দোকান উচ্ছেদ হলে, তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন দুই বিধায়কই।

এক ধাপ এগিয়ে পূর্ণবাবু জানান, রেল তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে, তাঁরা ডিআরএমের কার্যালয় অচল করে দেবেন। অন্যদিকে, স্বপনবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘আদ্রায় দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত রেল বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে করছে।’’ যদিও এ নিয়ে রেলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেছেন, ‘‘তৃণমূল ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। এলাকার উন্নয়নে রেল কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে বিজেপির প্রভাব খাটানোর কোনও প্রশ্নই নেই।” দোকান সরানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে তৃণমূলই সস্তা রাজনীতি করছে বলে পাল্টা দাবি করেছেন তিনি। বিদ্যাসাগরবাবু বলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ঠিকই। তেমনই ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে উন্নয়ন হোক এটাও কাঙ্খিত নয়। ফলে মধ্যপন্থা বার করতে তৃণমূলের বিধায়কেরা মিছিল, মিটিং না করে রেলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেই তো পারেন।”

দেশের ২০০টি স্টেশনের সঙ্গে আদ্রা স্টেশনের আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বোর্ড। সূত্রের খবর, স্টেশনের পাশে নতুন পার্কিং জোন, লিফট, ফুটওভার ব্রিজ, ফুড প্লাজা করা হবে। সে জন্য স্টেশন লাগোয়া এলাকায় আরও জমির প্রয়োজন রেলের। কিন্তু সেই জমিতে কয়েক দশক ধরে ব্যবসা করছেন শতাধিক ছোট বড় ব্যবসায়ী। সে জন্য গত ১২ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দোকানদারদের সরে যেতে নির্দেশ দেন আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ।

ব্যবসায়ীরা দোকান না সরালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে রেল। সেই প্রেক্ষিতেই আশঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা দোকান সরাতে রাজি নন। গোড়া থেকেই ওই ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল। রেল দোকান ভাঙলে সক্রিয় বিরোধিতা করার কথা জানান দলের আদ্রা শহরের সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে।

এলাকার রাজনৈতিক মহলের দাবি, দোকান উচ্ছেদের বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ও দোলাচল তৈরি হওয়ায়, লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের কাছে টানতে তৎপর হয়ে উঠেছে শাসকদল। রেল বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের দফতর। কাজেই রেলের ওই বিজ্ঞপ্তিকে হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করতে নেমে পড়েছেন শাসকদলের নেতারা। সেই প্রেক্ষিতেই জোড়া বিধায়কের উপস্থিতিতে মিছিল।

আবার আদ্রার পাশের দুই পঞ্চায়েত আড়রা ও গগনাবাইদে খুব একটা ভাল ফল করতে পারেনি তৃণমূল। গগনাবাইদ দিয়েছে বিজেপির দখলে। আড়রায় কোনও রকমে বোর্ড গড়তে পেরেছে তৃণমূল। রেলের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁরা আবার এই দুই পঞ্চায়েত এলাকারই বাসিন্দা। ফলে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে তৃণমূল।

তবে ঘটনাটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে নারাজ রাজ্যের শাসকদল। স্বপনবাবু ও পূর্ণবাবু দু’জনের দাবি, ‘‘কয়েক দশক ধরে শতাধিক ব্যবসায়ী রেলের জমিতে ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁদের উচ্ছেদ করা হলে সংসার ভেসে যাবে। তাই মানবিকতার খাতিরেই আমরা ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’

এ দিন দুপুরে আদ্রার পলাশকোলা থেকে মিছিল শুরু হয়ে রেল শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘোরে। শেষ হয় ডিআরএমের কার্যালয়ের সামনে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান চলে। মিছিলে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ছাড়াও ছিলেন ওই ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। অবস্থান থেকে উচ্ছেদ সম্পর্কে রেল কর্তৃপক্ষকে কড়া বার্তা দেন তৃণমূলের দুই বিধায়ক। মূলত পুর্নবাসন না করে উচ্ছেদ কোনও ভাবেই নেমে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আদ্রার ডিআরএম শরদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘রেলের পক্ষে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব নয়। চাইলে রাজ্য সরকার ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Hawker Eviction TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE