বলরামপুরের সভায় অঘোর হেমব্রমের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুজিত মাহাতো
ভোটে হার, দুই বিজেপি কর্মী খুনে দলের দিকে আঙুল ওঠা— পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর পরে বলরামপুরে তৃণমূলের সময়টা ভাল যাচ্ছিল না। জেলার জঙ্গলমহলের অন্যতম কেন্দ্র এই এলাকা। শিয়রে লোকসভা ভোট। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মনোবল ফেরাতে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার দিকে তাকিয়ে ছিলেন জেলার নেতারা। শুক্রবার বলরামপুরের রথতলা ময়দানে ভিড় দেখে তাঁরা মনে করছেন, উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল।
এক সময়ে বলরামপুর ছিল তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। এ বারের ভোটে এখানকার সাতটি পঞ্চায়েতের সব ক’টি গিয়েছে বিজেপির দখলে। ফল বেরনোর পরে বিজেপি পেয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের মধ্যে ১৭টি। জেলা পরিষদের দু’টি আসন। দু’টিতেই জিতেছে বিজেপি। হেরে গিয়েছেন তৃণমূলের গত বারের জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। এ দিন অভিষেকের সভার কোথাও তাঁকে দেখা যায়নি। সৃষ্টিধরের ছেলে সুদীপ পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতেছেন। মঞ্চে দেখা যায়নি তাঁকেও।
কেন? দলের একটি সূত্র দাবি করছে, আসতে মানা করা হয়েছিল। সেই জল্পনা বাড়িয়ে সভার মঞ্চ থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘কোনও এক জন নেতার বিরুদ্ধে আপনাদের ক্ষোভ থাকতে পারে। মনে রাখবেন, যাঁদের পাশে মানুষ নেই দলেও তাঁদের স্থান নেই। তাঁদের আমরা সরিয়ে দেব।’’ সৃষ্টিধরের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সুদীপ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি এ দিনও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে সভায় গিয়েছিলাম। বলরামপুরে দলকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’’
মঞ্চ থেকেই এ দিন তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি হিসাবে অঘোর হেমব্রমের নাম ঘোষণা করেছেন অভিষেক। ফল পর্যালোচনা করতে এসে আগেই ওই ব্লকের সভাপতির পদ থেকে সুদীপকে সরিয়ে দেন তিনি। কাজ দেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন অঘোরকে। তবে দল সূত্রে জানানো হয়েছিল, অঘোর ব্লকে আহ্বায়ক হিসাবে কাজ করবেন। এ বারে সরাসরি ব্লক সভাপতির পদ দেওয়া হল তাঁকে।
এ বারের ভোটে জেলার জঙ্গলমহলে সার্বিক ফলেই খুব একটা স্বস্তি পায়নি শাসকশিবির। পঞ্চায়েত সমিতিগুলির মধ্যে ঝালদা ১ তৃণমূলের ছিল। ত্রিশঙ্কু হয়েছে। ঝালদা ২ দখল করতে পারেনি তারা। বাঘমুণ্ডি কংগ্রেসের ছিল। এখন ত্রিশঙ্কু। আড়শা আর বরাবাজার ছিল তৃণমূলের। ত্রিশঙ্কু হয়েছে। শুধু বান্দোয়ান আর মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে এ বারের ভোটেও জয় ধরে রাখতে পেরেছে রাজ্যের শাসকদল।
এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বলরামপুরে বড় জমায়েত করে শক্তি দেখাতে চাইছিল তৃণমূল। বিভিন্ন ব্লক থেকে বাস ও ছোট গাড়িতে কর্মী-সমর্থকেরা এ দিনের সভায় এসেছিলেন। মাঠ উপচে বাইরে চলে গিয়েছিল জমায়েত। তৃণমূলের দাবি, পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি লোক হয়েছিল। অবশ্য পুলিশের হিসাবে সংখ্যাটা পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার।
বলরামপুরে এসে দুই বিজেপি কর্মী দুলাল কুমার ও ত্রিলোচন মাহাতোর খুনের ঘটনা নিয়ে অভিষেক কী বলেন, সে দিকেও নজর ছিল সবার। অভিষেক এ দিন বললেন, ‘‘বিজেপিকে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমির ডেকে আনা যে এক জিনিস, সেটা প্রমাণিত। আগে বলরামপুরে আমরা জিতেছিলাম। তত দিন শান্তি ছিল। এ বারে বিজেপি জিততেই, এক সপ্তাহের মধ্যে বলরামপুরের মাটি কলুষিত হয়ে গিয়েছে। দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু দিলীপ ঘোষেরা মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী পাল্টা বলছেন, ‘‘বিজেপি কর্মীদের খুন করে তৃণমূলে টানার চেষ্টা চলছে। সেটা না হলে দুলাল আর ত্রিলোচনের খুনে সিবিআই তদন্তের দাবি সমর্থন করলেন না কেন ওঁরা?’’
অভিষেকের বক্তব্য, জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। বলরামপুরের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। অভিষেক বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের সঙ্গে থাকবেন, শান্তিরাম মাহাতো আপনাদের সঙ্গে থাকবেন। দিল্লি থেকে কোনও নেতা আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন না।’’ এই প্রসঙ্গে বিজেপির বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উন্নয়নের প্রতিযোগিতা হোক। দেখা যাক না!’’
এ দিনের সভায় বলরামপুরের বিজেপি নেতা সুভাষ দাস গোস্বামী আর বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য কল্পনা রুইদাস তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, জয়ী সদস্যরা তাঁদের দিকে ঝোঁকায় বিজেপি ঝাড়খণ্ডে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখছে। অভিষেকও কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘জেতা সদস্যদের বাড়িতে রাখতে পারছে না, এরা কেমন দল?’’ বিজেপির বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষ জানেন, আমাদের সদস্যদের কী ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। মানুষই এই কথার জবাব দেবেন।’’
এ দিনের সভায় পুরুলিয়া ২ ব্লকের নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য জানকী মাহাতোও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো, রাজ্যসভার দুই সাংসদ মানস ভুঁইয়া ও শান্তনু সেন, দলের জেলা নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy