প্রতীকী ছবি।
তিন-তিন বার দিন নির্দিষ্ট করেও শেষ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলার যুক্তি দেখিয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন পিছিয়ে দিয়েছিল প্রশাসন। টস্ হলে তৃণমূল না বিজেপি, কার দখলে থাকবে ৩-৩ আসনে ‘টাই’ হয়ে থাকা মহম্মদবাজারের রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাশ, যাবতীয় উৎকণ্ঠা ছিল এই প্রশ্ন ঘিরেই। মঙ্গলবার দুই বিজেপি সদস্য বোলপুরে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তার উত্তর মিলল। দলবদলের জেরে ৫-১ ফলে রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে নিল তৃণমূল। ফলে, শাসকদলের বোর্ড গঠন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বিজেপি-র টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে জিতে এখন তৃণমূলে এলেন সুলতা কোঁড়া এবং জপন মুখোপাধ্যায়। তবে শুধু নির্বাচিত সদস্য নন, আরও কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থকও দলবদল করেছেন বলে দাবি তৃণমূলের। মঙ্গলবার বোলপুরে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তাঁর দাবি, ‘‘নির্বাচনে রামপুরে বিজেপির হয়ে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন, সকলেই তৃণমূলের লোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁদের আনুগত্য ও উন্নয়নে বিশ্বাস ছিল। স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ বা ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাঁরা সেই সময় বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন। এ দিন ঘরের লোক ঘরে ফিরলেন।’’
বিকাশবাবু এই দাবি করলেও বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে বিজেপির টিকিটে জেতা সদস্যদের ভাঙাতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি শাসকদল। ২৮ অগস্ট, ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর দিন ধার্য হলেও দলের সদস্যদের ভাঙাতে পারেনি শাসকদল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘দল ভাঙাতে না পেরে প্রশাসনের মদতে বারবার বোর্ড গঠনের দিন বদল করতে হয়েছে। এ বার ভয় না প্রলোভন, কী শর্তে ওঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেলেন খোঁজ নিতে হবে। তবে একটা কথা জানিয়ে দিই, এলাকার মানুষ এখনও বিজেপির সঙ্গেই আছেন।’’ তৃণমূল বা প্রশাসনের কেউ সে অভিযোগ মানতে চাননি।
বীরভূমের ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করেছিল। ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের মল্লারপুর ১, মহম্মদবাজার ব্লকের গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত— দু’টিতে জয় পেয়েছে বিজেপি। তা নিয়ে অস্বস্তি ছিল শাসকদলে। তবে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩-৩ আসনে টাই হয়ে যাওয়া মহম্মদবাজারের রামপুর গ্রাম পঞ্চয়েত। অভিযোগ, টস-এর আগেই বিপক্ষের প্রার্থীকে নিজের ঘরে তুলে পঞ্চায়েতের দখল নিতে উঠে-পড়ে লেগেছিল যুযুধান দুই পক্ষ। কিন্তু, শেষ হাসি হাসল শাসকদলই।
জেলায় সীমিত হলেও যে যে আসনে বিজেপি ভাল টক্কর দিয়েছে শাসকদলকে, সেই তালিকায় মহম্মদবাজার অন্যতম। রামপুরের কথাই ধরা যাক। ছয় আসন বিশিষ্ট পঞ্চায়েতের তিনটি আসন ছাড়াও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনও দখল করে বিজেপি। অভিযোগ, শাসকদলের নিচুতলার নেতাদের ‘ঔদ্ধত্য’, ‘দুর্নীতি’, ‘পক্ষপাতিত্ব’-এ ক্ষুব্ধ হয়ে শাসকদলের থেকে মুখ ফিরিয়ে মহম্মদবাজার ব্লকের একটা অংশের মানুষ বিজেপিতে ঝুঁকেছেন।
তৃণমূল নেতৃত্বও নিচুতলার নেতাদের খামতি বা ভুলের কথা মানছেন। শাসকদলের অন্দরের খবর, সেই কারণেই অঞ্চল কমিটির সভাপতি রাকেশ মণ্ডলকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন যাঁরা দলবদল করলেন, সেই সুলতা ও জপন বলছেন, ‘‘রাকেশ মণ্ডলের অনৈতিক কাজের জন্য বিজেপিতে গিয়েছিলাম। আমরা উন্নয়ন করতে চাই। কিন্তু, বিজেপিতে সেই সুযোগ নেই। তৃণমূলে এলে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারব।
তাই দলবদল করলাম।’’ আর সভাধিপতি বিকাশবাবুর মন্তব্য, ‘‘রাকেশকে আগেই দল সরিয়েছে। ২৯ তারিখ নতুন অঞ্চল কমিটির ঘোষণা করবেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের পরে বোর্ড গঠন হবে। এলাকার মানুষের কোনও অভিযোগ থাকতে দেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy